ETV Bharat / state

অপরিচ্ছন্ন হাত? থাবা বসাতে পারে ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণু - world hand wash

বাইরে থেকে ফিরে গিয়ে যখন বাচ্চাটিকে ধরবেন, তখন ভালো করে হাত ধুয়ে নিন। হাত পরিষ্কার করে বাচ্চাকে ধরুন। বললেন চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী ৷

hand wash
author img

By

Published : Oct 15, 2019, 1:25 AM IST

Updated : Oct 15, 2019, 3:04 PM IST


কলকাতা, 15 অক্টোবর: খাওয়ার আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে না নিলে পেটের বিভিন্ন অসুখ যেমন হয়, তেমনি অপরিষ্কার হাত চোখে-মুখে লাগলে ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর সংক্রমণও ঘটতে পারে । আজ, ১৫ অক্টোবর গ্লোবাল হ‍্যান্ড ওয়াশিং ডে। অর্থাৎ হাত ধোয়া দিবস । হাত ধোয়ার মাধ্যমে কী ভাবে নিজেকে ও অন্যদের সুস্থ রাখা সম্ভব,তা নিয়ে বলেছেন চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী।


হ‍্যান্ড ওয়াশিং। শুদ্ধ বাংলায় বললে হস্ত প্রক্ষালন। কৌশিকবাবু বলেন, "হাত ধোয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে হ্যান্ড ওয়াশিংকে বলা যেতে পারে প্রথম পদক্ষেপ।"

তিনি বলেন, "হাত ধুয়ে না খেলে পেটের বিভিন্ন রোগ হতে পারে। যেমন, ডায়ারিয়া, আমাশা, রক্ত আমাশা ইত্যাদি । শুধু তাই নয়, হাত ধুয়ে না খেলে জন্ডিসও হতে পারে।"

কৌশিকবাবু সতর্ক করে বলেন, "অনেকের বাড়িতে পোষ‍্য রয়েছে। কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি। আমরা তাদের প্রায়ই আদর করি। কিন্তু তারপর হাত না ধুয়েই আমরা খাবার খাই । কেউ কেউ আবার নিজে খেতে খেতে তাঁর পোষ‍্যকে খাওয়ান। এভাবে আমাদের শরীরে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে । মনে রাখতে হবে, পোষ‍্য আপনার। কিন্তু, তার রোগগুলি আপনার নয়।"

তিনি বলেন, "এটা অনেকের মনে হতে পারে যে, হাত না ধুয়ে খেলে শুধুমাত্র পেটের রোগ হয়। তা কিন্তু নয়। হাত না ধুয়ে খেলে আরও অনেক রোগ হতে পারে। ধরুন আপনার সর্দি হয়েছে। আপনি হাত দিয়ে সর্দি মুছলেন। এরপর হাতটি আপনার পোশাকে অথবা আশপাশে কোনও টেবিলের উপর রাখলেন। কিছুক্ষণ পরে আমার হাত সেখানে গিয়ে পড়ল। আপনি চলে গিয়েছেন, কিন্তু সেই সর্দির ড্রপলেটগুলি সেখানে পড়েছিল। তার মধ্যে রয়ে গিয়েছে ভাইরাস। সেক্ষেত্রে ইনফেকশন আমার শরীরে চলে আসবে । ভাইরাস অনেক ক্ষেত্রে বায়ুবাহিত হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি দেহ থেকে দেহে সংক্রমিত হয়। বর্তমান যুগে অন্যতম সমস্যা হল ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর সংক্রমণ । যেমন, কারও ইউরিন অথবা চেস্ট ইনফেকশন হল। পরীক্ষায় দেখা গেল যে জীবাণুর সংক্রমণ হয়েছে, তা ম্যাক্সিমাম অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট। আপনি ভাববেন কীভাবে হল। আমরা চিকিৎসকরাও হতভম্ব হয়ে যাচ্ছি । অনেক সময় বুঝতে পারছি না কীভাবে হচ্ছে। আসলে হাত না ধোয়াও এর অন্যতম কারণ । ধরুন, আপনার বাড়ির কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভরতি । তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গেলেন । হাসপাতালের বেড, চাদর, টেবিল, চারিদিকে ইনফেকশন রয়েছে। আপনি রোগীকে স্পর্শ না করলেও হাসপাতালের টেবিল, চেয়ার অথবা দরজায় হাত দিলে সেখান থেকে আপনার হাতে জীবাণু আসতে পারে । এরপর আপনি বাড়িতে এসে হাত না ধুয়ে খেলেন। তখন হাসপাতালের সেই জীবাণু আপনার খাদ্যনালীতে চলে গেল । কিংবা নাক মুছলেন। জীবাণু তখন নাক থেকে শ্বাসনালীতে পৌঁছে যেতে পারে। কিংবা আপনার গোপন অঙ্গ কোনওভাবে স্পর্শ করলেন । সেক্ষেত্রে আপনার ইউরিনারি ট্র্যাক্টে ইনফেকশন হতে পারে। এ ভাবে হাসপাতাল থেকে অনেক সময় ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু বাড়িতে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে চলে আসে। তাই খাওয়ার আগে সব সময় হাত ধোবেন। আপনার বাচ্চাকে ধরার আগেও হাত ধোবেন। বাচ্চাদের ইমিউনিটি অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম । এ জন্য বাচ্চাদের ধরার আগে হাতে ধোয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।"

ভিডিয়োয় চিকিৎসকের বক্তব্য

চিকিৎসক বলেন, "হাত ধোয়া মানে তালু এবং চেটো ধুয়ে ফেলা নয়। বাচ্চাদের ধরার আগে হাতের কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা। বাচ্চাদের রেজিস্ট্যান্স পাওয়ার কম। আপনার বাড়ির বাচ্চাটির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বাইরে থেকে ফিরে গিয়ে যখন বাচ্চাটিকে ধরবেন, তখন ভালো করে হাত ধুয়ে নিন। হাত পরিষ্কার করে বাচ্চাকে ধরুন।"

কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এই রেজিস্ট্যান্স?

কৌশিকবাবু বলেন, "অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট‍্যান্স খুবই বিপদজনক। এখন ধীরে ধীরে দেখা যাচ্ছে যেভাবে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বাড়ছে, তাতে চিকিৎসা করতে গিয়ে সাধারণ ওষুধে কাজ হচ্ছে না । অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে সিলেকটিভ অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হচ্ছে। সেগুলির কিন্তু অনেক দাম‌। যেমন, ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশনের এমন অনেক রোগী পাচ্ছি, যাদের সাধারণ ওষুধে কাজ হচ্ছে না ।কাজ করছে যে ওষুধ, সেই ওষুধের ১০ দিনের সম্পূর্ণ কোর্সের জন্য খরচ পড়ছে এক লাখ টাকার উপরে।"

হাত কি সর্বদা সাবান দিয়েই ধুতে হবে ? কৌশিকবাবু বলেন, "সাবান বা অন্য কোনও অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন দিয়ে ধুয়ে নিলে ভালো হয়। যদি সাবান বা অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন না থাকে, তাহলে পরিষ্কার জলে মিনিটখানেক ধরে হাত ধুয়ে নিতে হবে। হাত ধুয়ে সব জীবাণু আটকানো যাবে না। তবে, যতটা পারি সেটুকু আমরা করতে পারি।"


কলকাতা, 15 অক্টোবর: খাওয়ার আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে না নিলে পেটের বিভিন্ন অসুখ যেমন হয়, তেমনি অপরিষ্কার হাত চোখে-মুখে লাগলে ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর সংক্রমণও ঘটতে পারে । আজ, ১৫ অক্টোবর গ্লোবাল হ‍্যান্ড ওয়াশিং ডে। অর্থাৎ হাত ধোয়া দিবস । হাত ধোয়ার মাধ্যমে কী ভাবে নিজেকে ও অন্যদের সুস্থ রাখা সম্ভব,তা নিয়ে বলেছেন চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী।


হ‍্যান্ড ওয়াশিং। শুদ্ধ বাংলায় বললে হস্ত প্রক্ষালন। কৌশিকবাবু বলেন, "হাত ধোয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে হ্যান্ড ওয়াশিংকে বলা যেতে পারে প্রথম পদক্ষেপ।"

তিনি বলেন, "হাত ধুয়ে না খেলে পেটের বিভিন্ন রোগ হতে পারে। যেমন, ডায়ারিয়া, আমাশা, রক্ত আমাশা ইত্যাদি । শুধু তাই নয়, হাত ধুয়ে না খেলে জন্ডিসও হতে পারে।"

কৌশিকবাবু সতর্ক করে বলেন, "অনেকের বাড়িতে পোষ‍্য রয়েছে। কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি। আমরা তাদের প্রায়ই আদর করি। কিন্তু তারপর হাত না ধুয়েই আমরা খাবার খাই । কেউ কেউ আবার নিজে খেতে খেতে তাঁর পোষ‍্যকে খাওয়ান। এভাবে আমাদের শরীরে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে । মনে রাখতে হবে, পোষ‍্য আপনার। কিন্তু, তার রোগগুলি আপনার নয়।"

তিনি বলেন, "এটা অনেকের মনে হতে পারে যে, হাত না ধুয়ে খেলে শুধুমাত্র পেটের রোগ হয়। তা কিন্তু নয়। হাত না ধুয়ে খেলে আরও অনেক রোগ হতে পারে। ধরুন আপনার সর্দি হয়েছে। আপনি হাত দিয়ে সর্দি মুছলেন। এরপর হাতটি আপনার পোশাকে অথবা আশপাশে কোনও টেবিলের উপর রাখলেন। কিছুক্ষণ পরে আমার হাত সেখানে গিয়ে পড়ল। আপনি চলে গিয়েছেন, কিন্তু সেই সর্দির ড্রপলেটগুলি সেখানে পড়েছিল। তার মধ্যে রয়ে গিয়েছে ভাইরাস। সেক্ষেত্রে ইনফেকশন আমার শরীরে চলে আসবে । ভাইরাস অনেক ক্ষেত্রে বায়ুবাহিত হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি দেহ থেকে দেহে সংক্রমিত হয়। বর্তমান যুগে অন্যতম সমস্যা হল ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর সংক্রমণ । যেমন, কারও ইউরিন অথবা চেস্ট ইনফেকশন হল। পরীক্ষায় দেখা গেল যে জীবাণুর সংক্রমণ হয়েছে, তা ম্যাক্সিমাম অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট। আপনি ভাববেন কীভাবে হল। আমরা চিকিৎসকরাও হতভম্ব হয়ে যাচ্ছি । অনেক সময় বুঝতে পারছি না কীভাবে হচ্ছে। আসলে হাত না ধোয়াও এর অন্যতম কারণ । ধরুন, আপনার বাড়ির কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভরতি । তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গেলেন । হাসপাতালের বেড, চাদর, টেবিল, চারিদিকে ইনফেকশন রয়েছে। আপনি রোগীকে স্পর্শ না করলেও হাসপাতালের টেবিল, চেয়ার অথবা দরজায় হাত দিলে সেখান থেকে আপনার হাতে জীবাণু আসতে পারে । এরপর আপনি বাড়িতে এসে হাত না ধুয়ে খেলেন। তখন হাসপাতালের সেই জীবাণু আপনার খাদ্যনালীতে চলে গেল । কিংবা নাক মুছলেন। জীবাণু তখন নাক থেকে শ্বাসনালীতে পৌঁছে যেতে পারে। কিংবা আপনার গোপন অঙ্গ কোনওভাবে স্পর্শ করলেন । সেক্ষেত্রে আপনার ইউরিনারি ট্র্যাক্টে ইনফেকশন হতে পারে। এ ভাবে হাসপাতাল থেকে অনেক সময় ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু বাড়িতে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে চলে আসে। তাই খাওয়ার আগে সব সময় হাত ধোবেন। আপনার বাচ্চাকে ধরার আগেও হাত ধোবেন। বাচ্চাদের ইমিউনিটি অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম । এ জন্য বাচ্চাদের ধরার আগে হাতে ধোয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।"

ভিডিয়োয় চিকিৎসকের বক্তব্য

চিকিৎসক বলেন, "হাত ধোয়া মানে তালু এবং চেটো ধুয়ে ফেলা নয়। বাচ্চাদের ধরার আগে হাতের কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা। বাচ্চাদের রেজিস্ট্যান্স পাওয়ার কম। আপনার বাড়ির বাচ্চাটির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বাইরে থেকে ফিরে গিয়ে যখন বাচ্চাটিকে ধরবেন, তখন ভালো করে হাত ধুয়ে নিন। হাত পরিষ্কার করে বাচ্চাকে ধরুন।"

কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এই রেজিস্ট্যান্স?

কৌশিকবাবু বলেন, "অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট‍্যান্স খুবই বিপদজনক। এখন ধীরে ধীরে দেখা যাচ্ছে যেভাবে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বাড়ছে, তাতে চিকিৎসা করতে গিয়ে সাধারণ ওষুধে কাজ হচ্ছে না । অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে সিলেকটিভ অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হচ্ছে। সেগুলির কিন্তু অনেক দাম‌। যেমন, ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশনের এমন অনেক রোগী পাচ্ছি, যাদের সাধারণ ওষুধে কাজ হচ্ছে না ।কাজ করছে যে ওষুধ, সেই ওষুধের ১০ দিনের সম্পূর্ণ কোর্সের জন্য খরচ পড়ছে এক লাখ টাকার উপরে।"

হাত কি সর্বদা সাবান দিয়েই ধুতে হবে ? কৌশিকবাবু বলেন, "সাবান বা অন্য কোনও অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন দিয়ে ধুয়ে নিলে ভালো হয়। যদি সাবান বা অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন না থাকে, তাহলে পরিষ্কার জলে মিনিটখানেক ধরে হাত ধুয়ে নিতে হবে। হাত ধুয়ে সব জীবাণু আটকানো যাবে না। তবে, যতটা পারি সেটুকু আমরা করতে পারি।"

Intro:কলকাতা, ১৪ অক্টোবর: খাওয়ার আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে না নিলে শুধুমাত্র পেটের বিভিন্ন অসুখ নয়। অপরিচ্ছন্ন হাত চোখে-মুখে লাগলে শুধুমাত্র জীবাণুর সাধারণ সংক্রমণ নয়, ড্রাগ রেজিস্ট‍্যান্ট জীবাণুরও প্রবেশ ঘটতে পারে আপনার শরীরে। ১৫ অক্টোবর গ্লোবাল হ‍্যান্ড ওয়াশিং ডে। হাত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে কীভাবে নিজে এবং অন্যদের সুস্থ রাখা সম্ভব, সে সব নিয়ে বলেছেন চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী।


Body:হ‍্যান্ড ওয়াশিং। শুদ্ধ বাংলায় বললে হস্ত প্রক্ষালন। এ কথা জানিয়ে চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী বলেন, "এটা প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ। রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে হ্যান্ড ওয়াশিংকে বলা যেতে পারে প্রথম পদক্ষেপ।" তিনি বলেন, "সাধারণ মানুষের একটু ধারণা রয়েছে, আগে কোনও ধুলো-ময়লা ঘেঁটেছি বা, এমন কিছু আমার হাতের সংস্পর্শে এসেছে যেটা শরীরের পক্ষে উপকারী নয়, এই অবস্থায় হাত পরিষ্কার না করে খেয়ে নিলাম, তাতে পেটের রোগ হতে পারে। ডায়ারিয়া, আমশা, রক্ত আমশা সহ বিভিন্ন ধরনের পেটের রোগ হতে পারে। এমনকী হাত ধুয়ে না খেলে একজনের থেকে অন্য জনের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে বিভিন্ন ধরনের জন্ডিস।"

অনেকের বাড়িতে পোষ‍্য রয়েছে। কুকুর, বিড়াল। তাদের প্রায়ই আদর করতে হয়। তারা কাছে আসে এবং আদর খায়। এই চিকিৎসক বলেন, "তার পরে ভুলে যান হাত কী অবস্থায় ছিল। এই অবস্থায় খেয়ে নেন। অনেক সময় পোষ‍্যর সঙ্গে একসঙ্গে খেতেও দেখা যায়। নিজে খেতে খেতে হয়তো পোষ‍্যকে খাওয়াচ্ছেন। হাত না ধুয়ে খাওয়া হচ্ছে এবং এক্ষেত্রে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করছে।" তাঁর কথায়, "পোষ‍্য আপনার। কিন্তু, তার রোগগুলি আপনার নয়।" এটা অনেকের মনে হতে পারে, হাত না ধুয়ে খেলে শুধুমাত্র আমাদের পেটের রোগ হয়। তা কিন্তু নয়। হাত না ধুয়ে কাজ করলে আরও অনেক রোগ হতে পারে।

চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী বলেন, "ধরুন আপনার সর্দি হয়েছে। আপনি হাত দিয়ে সর্দি মুছলেন। এর পরে হাতটি আপনার পোশাকে অথবা আশপাশের কোনও টেবিলের উপর রাখলেন। কিছু ক্ষণ পরে আমার হাত সেখানে গিয়ে পড়ল। আপনি চলে গিয়েছেন, কিন্তু সেই সর্দির ড্রপলেটগুলি সেখানে পড়ে ছিল। তার মধ্যে রয়ে গিয়েছে ভাইরাস। সেগুলি কিন্তু ড্রপলেট ইনফেকশন হয়ে আমার হাতটা দিয়ে আমার মধ্যে চলে আসবে। আমি যখন নাক মুছলাম, আমার মধ্যে চলে এল। ভাইরাস অনেক ক্ষেত্রে বায়ুবাহিত হয়ে যায়। কিন্তু ডাইরেক্ট কন্ট‍্যাক্টেও আসে।"

এখন চারিদিকে খুব সাধারণ হয়ে গিয়েছে রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু। এই চিকিৎসক বলেন, "যেমন দেখা গেল, বাড়িতে রয়েছেন কেউ, তার ইউরিন অথবা চেস্ট ইনফেকশন হল। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার যে কালচার করা হল, সেগুলি ম্যাক্সিমাম অ্যান্টিবায়োটিকের রেজিস্ট্যান্ট। আপনি ভাববেন কীভাবে হল। আমরা চিকিৎসকরা হতভম্ব হয়ে যাচ্ছি, কীভাবে হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ, ওই ব্যক্তির সঙ্গে পরোক্ষভাবে এমন কোনও ব্যক্তির সঙ্গে কন্ট‍্যাক্ট, যিনি হাসপাতাল বা কোথাও ছিলেন। এবং, যাঁর রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু রয়েছে।" তিনি বলেন, "ধরুন, আপনার বাড়িতে একজন অসুস্থ ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গেলেন।হাসপাতালের বেড, চাদর, টেবিল, চারিদিকে ইনফেকশন রয়েছে। যতই কন্ট্রোল করা হোক না কেন জীবাণু মাইক্রোস্কোপিক অর্থাৎ, খালি চোখে দেখা যায় না।"

তিনি বলেন, "আপনি এমন কোনও জায়গায় হাত দিলেন, মনে করলেন রোগীকে ধরেননি। টেবিল, চেয়ার অথবা দরজায় হাত পড়েছে। আপনি বাড়িতে এলেন, হাত না ধুয়ে খেলেন। হাসপাতাল থেকে রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু আপনার মধ্যে চলে এল। এই অবস্থায় নাক মুছলেন। জীবাণু নাকবাহিত হয়ে শ্বাসনালীতে পৌঁছে যেতে পারে। এই অবস্থায় খেলে, জীবাণু খাদ্যনালীতে যেতে পারে। এই অবস্থায় আপনার গোপন অঙ্গ কোনও ভাবে স্পর্শ করেছেন, আপনার ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হতে পারে। এ ভাবে রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু বাড়িতে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে চলে আসছে। এর অন্যতম কারণ হাসপাতাল থেকে কন্ট‍্যাক্ট। এবং, একটা বিশেষ ভেক্টর বলতে পারি হাত না ধুয়ে কন্ট‍্যাক্টে আসা।"

জীবাণুকে খালি চোখে দেখা যাবে না। মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখা যাবে। এ কথা জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, "যে কারণে হাতে কী ধরলেন না ধরলেন তা দেখা সম্ভব নয়। আপনি হয়তো জীবাণু ধরলেন না। কিন্তু, আমাদের আশপাশের পরিবেশ এখন এতটাই জীবাণুময় হয়ে আছে,
ধরে নিন আপনি জীবাণু ধরেছেন। এজন্য আপনি হাত ধুয়ে নিন, জীবাণু ছিল না এ কথা ভাববেন না। সব সময় ভাববেন জীবাণু ছিল।"

তিনি বলেন, "যেমন আদালত এবং গোয়েন্দাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আদালতে যতক্ষণ না কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়, ততক্ষণ নির্দোষ। আর, গোয়েন্দাদের চোখে তদন্ত শুরু করার সময় সকলেই দোষী। এক এক করে নির্দোষ হিসেবে তারা রুল আউট করেন। তেমনই আপনি যখন কোথাও হাত দেবেন, খাওয়ার আগে সব সময় হাত ধোবেন। এমনকী কোনও ধুলো-ময়লা ঘাঁটলে মুখে, চোখে হাত দেওয়ার আগে হাত ধোবেন। আপনার বাচ্চাকে ধরার আগেও হাত ধোবেন। কারণ, আপনাকে ধরতে হবে আশপাশে জীবাণু রয়েছে। এবং, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যেহেতু তাদের ইমিউনিটি অর্থাৎ, রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কম, এইজন্য বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হাতে ধোয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।"

যাঁরা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, তাঁদেরকে শেখানো হয় হাত সম্পূর্ণভাবে যাতে পরিষ্কার হয় তার জন্য কীভাবে কতগুলি স্টেপে হাত ধুতে হয়। এই চিকিৎসক বলেন, "হাত ধোয়া মানে তালু এবং চেটো ধুয়ে ফেলা নয়। বাচ্চাদের ধরার আগে হাতের কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা। বাচ্চাদের রেজিস্ট্যান্স পাওয়ার কম। আপনার বাড়ির বাচ্চাটির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বাইরে থেকে ফিরে গিয়ে যখন বাচ্চাটিকে ধরবেন, তখন ভালো করে হাত ধুয়ে নিন। হাত পরিষ্কার করে বাচ্চাকে ধরুন।"

কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এই রেজিস্ট্যান্স? চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী বলেন, "অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট‍্যান্স খুবই বিপদজনক। এখন ধীরে ধীরে দেখা যাচ্ছে যেভাবে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বাড়ছে, তাতে পড়ে থাকছে সিলেকটিভ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক। সেগুলির অনেক দাম‌।" তিনি বলেন, "যেমন, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের এমন অনেক রোগী পাচ্ছি, যেটা আর সব জীবাণুতে রেজিস্ট্যান্ট। কাজ করছে যে ওষুধ এই ওষুধের ১০ দিনের সম্পূর্ণ কোর্সের জন্য খরচ এক লক্ষ টাকার উপরে। এটা যদি রুখে দেওয়া যেত তাহলে টাকা খরচ হতো না, শরীরের ভোগান্তিও হতো না।"


Conclusion:এই চিকিৎসক বলেন, "হাত ধুতে হবে। গোয়েন্দাদের মতো বুঝতে হবে আশপাশে জীবাণু রয়েছে। আমি হাত ধুয়ে খাব, হাত ধুয়ে বাচ্চাকে ধরব। শুধুমাত্র বাচ্চাদের জন্য নয়। বাড়িতে অন্য যে কোনও ব্যক্তি যার বয়স হয়েছে বা, ডায়াবেটিক যার রেজিস্ট্যান্ট পাওয়ার কম, তাকে ধরার আগেও আমি হাত ধোব। শুধুমাত্র খাওয়ার জন্য নয়। হাতে ধোব নিজেকে বাঁচাতে, আমার পরিবার এবং পার্শ্ববর্তী যাঁরা রয়েছেন, সবাইকে জীবাণুর থেকে বাঁচানোর জন্য।" তিনি বলেন, "হাত ধুয়ে সব জীবাণু আটকানো যাবে না। তবে, যতটা পারি সেটুকু আমরা করতে পারি।"

হাত ধুয়ে নেওয়া মানে কি সাবান দিয়ে ধুতে হবে, না পরিষ্কার জলে ধুয়ে নেওয়া যাবে? চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী বলেন, "সাবান বা যে কোনও ধরনের অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন দিয়ে ধুয়ে নিলে ভালো হয়। যদি সাবান বা অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন না থাকে, তাহ লে পরিষ্কার জলে মিনিটখানেক ধরে হাত ধুয়ে নিতে হবে।"

_______

বাইট:
wb_kol_01a_hand_washing_day_bite_7203421
চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী


Last Updated : Oct 15, 2019, 3:04 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.