কলকাতা, 15 অক্টোবর: খাওয়ার আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে না নিলে পেটের বিভিন্ন অসুখ যেমন হয়, তেমনি অপরিষ্কার হাত চোখে-মুখে লাগলে ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর সংক্রমণও ঘটতে পারে । আজ, ১৫ অক্টোবর গ্লোবাল হ্যান্ড ওয়াশিং ডে। অর্থাৎ হাত ধোয়া দিবস । হাত ধোয়ার মাধ্যমে কী ভাবে নিজেকে ও অন্যদের সুস্থ রাখা সম্ভব,তা নিয়ে বলেছেন চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী।
হ্যান্ড ওয়াশিং। শুদ্ধ বাংলায় বললে হস্ত প্রক্ষালন। কৌশিকবাবু বলেন, "হাত ধোয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে হ্যান্ড ওয়াশিংকে বলা যেতে পারে প্রথম পদক্ষেপ।"
তিনি বলেন, "হাত ধুয়ে না খেলে পেটের বিভিন্ন রোগ হতে পারে। যেমন, ডায়ারিয়া, আমাশা, রক্ত আমাশা ইত্যাদি । শুধু তাই নয়, হাত ধুয়ে না খেলে জন্ডিসও হতে পারে।"
কৌশিকবাবু সতর্ক করে বলেন, "অনেকের বাড়িতে পোষ্য রয়েছে। কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি। আমরা তাদের প্রায়ই আদর করি। কিন্তু তারপর হাত না ধুয়েই আমরা খাবার খাই । কেউ কেউ আবার নিজে খেতে খেতে তাঁর পোষ্যকে খাওয়ান। এভাবে আমাদের শরীরে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে । মনে রাখতে হবে, পোষ্য আপনার। কিন্তু, তার রোগগুলি আপনার নয়।"
তিনি বলেন, "এটা অনেকের মনে হতে পারে যে, হাত না ধুয়ে খেলে শুধুমাত্র পেটের রোগ হয়। তা কিন্তু নয়। হাত না ধুয়ে খেলে আরও অনেক রোগ হতে পারে। ধরুন আপনার সর্দি হয়েছে। আপনি হাত দিয়ে সর্দি মুছলেন। এরপর হাতটি আপনার পোশাকে অথবা আশপাশে কোনও টেবিলের উপর রাখলেন। কিছুক্ষণ পরে আমার হাত সেখানে গিয়ে পড়ল। আপনি চলে গিয়েছেন, কিন্তু সেই সর্দির ড্রপলেটগুলি সেখানে পড়েছিল। তার মধ্যে রয়ে গিয়েছে ভাইরাস। সেক্ষেত্রে ইনফেকশন আমার শরীরে চলে আসবে । ভাইরাস অনেক ক্ষেত্রে বায়ুবাহিত হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি দেহ থেকে দেহে সংক্রমিত হয়। বর্তমান যুগে অন্যতম সমস্যা হল ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর সংক্রমণ । যেমন, কারও ইউরিন অথবা চেস্ট ইনফেকশন হল। পরীক্ষায় দেখা গেল যে জীবাণুর সংক্রমণ হয়েছে, তা ম্যাক্সিমাম অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট। আপনি ভাববেন কীভাবে হল। আমরা চিকিৎসকরাও হতভম্ব হয়ে যাচ্ছি । অনেক সময় বুঝতে পারছি না কীভাবে হচ্ছে। আসলে হাত না ধোয়াও এর অন্যতম কারণ । ধরুন, আপনার বাড়ির কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভরতি । তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গেলেন । হাসপাতালের বেড, চাদর, টেবিল, চারিদিকে ইনফেকশন রয়েছে। আপনি রোগীকে স্পর্শ না করলেও হাসপাতালের টেবিল, চেয়ার অথবা দরজায় হাত দিলে সেখান থেকে আপনার হাতে জীবাণু আসতে পারে । এরপর আপনি বাড়িতে এসে হাত না ধুয়ে খেলেন। তখন হাসপাতালের সেই জীবাণু আপনার খাদ্যনালীতে চলে গেল । কিংবা নাক মুছলেন। জীবাণু তখন নাক থেকে শ্বাসনালীতে পৌঁছে যেতে পারে। কিংবা আপনার গোপন অঙ্গ কোনওভাবে স্পর্শ করলেন । সেক্ষেত্রে আপনার ইউরিনারি ট্র্যাক্টে ইনফেকশন হতে পারে। এ ভাবে হাসপাতাল থেকে অনেক সময় ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু বাড়িতে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে চলে আসে। তাই খাওয়ার আগে সব সময় হাত ধোবেন। আপনার বাচ্চাকে ধরার আগেও হাত ধোবেন। বাচ্চাদের ইমিউনিটি অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম । এ জন্য বাচ্চাদের ধরার আগে হাতে ধোয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।"
চিকিৎসক বলেন, "হাত ধোয়া মানে তালু এবং চেটো ধুয়ে ফেলা নয়। বাচ্চাদের ধরার আগে হাতের কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা। বাচ্চাদের রেজিস্ট্যান্স পাওয়ার কম। আপনার বাড়ির বাচ্চাটির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বাইরে থেকে ফিরে গিয়ে যখন বাচ্চাটিকে ধরবেন, তখন ভালো করে হাত ধুয়ে নিন। হাত পরিষ্কার করে বাচ্চাকে ধরুন।"
কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এই রেজিস্ট্যান্স?
কৌশিকবাবু বলেন, "অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স খুবই বিপদজনক। এখন ধীরে ধীরে দেখা যাচ্ছে যেভাবে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বাড়ছে, তাতে চিকিৎসা করতে গিয়ে সাধারণ ওষুধে কাজ হচ্ছে না । অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে সিলেকটিভ অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হচ্ছে। সেগুলির কিন্তু অনেক দাম। যেমন, ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশনের এমন অনেক রোগী পাচ্ছি, যাদের সাধারণ ওষুধে কাজ হচ্ছে না ।কাজ করছে যে ওষুধ, সেই ওষুধের ১০ দিনের সম্পূর্ণ কোর্সের জন্য খরচ পড়ছে এক লাখ টাকার উপরে।"
হাত কি সর্বদা সাবান দিয়েই ধুতে হবে ? কৌশিকবাবু বলেন, "সাবান বা অন্য কোনও অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন দিয়ে ধুয়ে নিলে ভালো হয়। যদি সাবান বা অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন না থাকে, তাহলে পরিষ্কার জলে মিনিটখানেক ধরে হাত ধুয়ে নিতে হবে। হাত ধুয়ে সব জীবাণু আটকানো যাবে না। তবে, যতটা পারি সেটুকু আমরা করতে পারি।"