কলকাতা, 19 জুন: রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত এখন অতীত ৷ বরং সেই সংঘাতের জায়গা কার্যত সম্পূর্ণ নিজেদের দখলে নিয়েছে রাজ্যের শাসকদল ৷ রাজভবনের কার্যকলাপে তৃণমূল যে একেবারেই সন্তুষ্ট নয় তা দলের তরফে জারি করা একের পর এক মন্তব্যে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷ দু'দিন আগে রাজ্যপালের পোশাক নিয়ে কটাক্ষ শোনা গিয়েছিল তৃণমূলের মুখপাত্রের গলায় ৷ এবার শান্তিকক্ষ খোলা নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। যদিও তৃণমূলের বক্তব্যে যে রাজ্যপাল নিজের অবস্থান একচুলও পরিবর্তন করছেন না, তা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আনন্দ বোস ৷ তিনি পালটা দৃঢ় ভাষায় বলেন, "যেভাবে আমি সঠিক মনে করি, সেভাবেই আমি আমার দায়িত্ব পালন করব ৷ সেটা হবে ভারতের সংবিধানের শাসনের কাঠামোর মধ্যে থেকে। আইনের ও বাংলার জনগণের স্বার্থ বজায় রাখাই আমার কাজ ৷"
তৃণমূলের অভিযোগ, রাজ্যপাল এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করছেন। আর সোমবার রাজভবনের শান্তিকক্ষ পরিদর্শনে এসে তৃণমূলের সেই অভিযোগ ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি পালটা দাবি করলেন, সাংবিধানিক নিয়ম মেনেই রাজ্যপালের কর্তব্য পালন করছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের নিরাপত্তার যথাযথ ব্যবস্থা করাই তাঁর কাজ, তাও মনে করিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল। তাঁর দাবি, যাতে রাজ্যের মানুষ নিশ্চিন্তে এবং নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন সে কারণেই তাঁর এই পদক্ষেপ। রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার পরই মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় হিংসা-অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
দু-একটি জায়গায় বিচ্ছিন্ন ঘটনার তথ্য তুলে বিরোধীদের অভিযোগ অবশ্য খারিজ করেছে তৃণমূল। একই সঙ্গে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে হিংসাত্মক হামলা চালানোর পরিকল্পনার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। এরকম পরিস্থিতিতে এবং পরবর্তিতে দক্ষিণ 24 পরগনার ভাঙড়, ক্যানিং-সহ একাধিক হিংসা কবলিত এলাকা পরিদর্শনের পরই রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস রাজভবনে সাধারণ মানুষের অভিযোগ নিতে শান্তি কক্ষ খুলেছেন। তা নিয়েই তরজা শুরু হয়েছে। তারপরও ইতিমধ্যে 300-র বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে রাজভবনের শান্তি কক্ষের মেল আইডি ও টেলিফোনে। এমনকী তৃণমূলের তরফেও অভিযোগ এসেছে বলে রাজভবন সূত্রের দাবি। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, "রাজ্যপাল এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করছেন। ভোটের সময় বিজেপি-সহ বিরোধীদের উৎসাহ দিচ্ছেন। তিন-চারটি বুথে বিরোধীদের পরিকল্পিত অশান্তি। আমাদের কর্মীদের মৃত্যু হয়েছে। বাকি গোটা রাজ্য স্বাভাবিক। বিরোধীরা এযাবৎকালের সর্বাধিক মনোনয়ন দিয়েছেন এই ভোটে। রাজ্যপাল এসব ঢাকা দিয়ে বিরোধীদের চেয়ারম্যান সাজছেন।"
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষের জয় হবে, 'পাবলিক পিস রুম'-এর সূচনায় বার্তা রাজ্যপালের
এই বিষয়ে সোমবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বলেন, "পশ্চিমবঙ্গের মানুষও আশা করেন, রাজ্যপালের নিজস্ব কর্তব্য আছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনা করছে। নির্বাচন কমিশন নিরাশ করেছে। কমিশনের সঠিক ভূমিকা পালনে প্রশ্ন উঠেছে। তাই এই উদ্যোগ। কিন্তু এটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্যপাল কোনরকম ইন্টারভেন করছেন না। রাজ্যপাল তার নিজের ডিউটি পালন করছেন। সাংবিধানিক নিয়ম মেনে কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ভালোর জন্যই কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাইছে। তাই কোথাও কোনরকম হুমকির থাকলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে অভিযোগ নেওয়া হচ্ছে।"