কলকাতা, 16 ফেব্রুয়ারি: বুধবার রাজ্য বাজেট অধিবেশনের একেবারে শেষ লগ্নে 3 শতাংশ হারে অবসরপ্রাপ্ত এবং কর্মরত সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা (Anger Rises over DA Demand) দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার । তবে এতে সন্তুষ্ট নন সরকারি কর্মচারীরা । তাই তাঁরা তাঁদের আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন । এমনকী তাঁরা যে আগামী নির্বাচনে ভোটকর্মী হিসেবে যোগ দেবেন না বলে ঠিক করেছিলেন, সেই সিদ্ধান্তেই অনড় থাকছেন তাঁরা । আজ এ কথাই জানিয়ে দিয়েছে কর্মচারীদের সংগঠনগুলি ৷
'ডিএ নাকি ভিক্ষা': অবিলম্বে মহার্ঘ ভাতা (Government employees demand DA) প্রদান করা না হলে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের কাজে তাঁরা যোগ দেবেন না ৷ সম্প্রতি রাজ্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কাছে এই হুঁশিয়ারি দিয়ে ডেপুটেশন জমা দিয়েছিল সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ । আর তারপরেই রাজ্য বাজেটে ডিয়ারনেস অ্যালাওয়েন্স নিয়ে যে ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁকে ভিক্ষার সমান বলে কটাক্ষ করেছেন আনন্দলনরত সরকারি কর্মচারীরা ।
'ডিএ দিতে আদালতের বাধা নেই': এই বিষয়ে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে কিঙ্কর অধিকারী বলেন, এতদিন রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীরা বলেছেন, মহার্ঘ ভাতার মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন ৷ তাই নাকি রাজ্য সরকার মহার্ঘ ভাতা দিতে পারছে না । এ কথা যে সর্বৈব মিথ্যে ছিল, তা প্রমাণিত হল । রাজ্য সরকার চাইলে বকেয়া 39 শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দিতেই পারে । এর জন্য আদালতের কোনও বাধা নেই ।
আন্দোলনে ঘৃতাহুতি দেওয়ার শামিল: সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের দাবি, যে পাহাড় প্রমাণ বঞ্চনা জমা হয়েছে, তাতে মাত্র তিন শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা আন্দোলনে ঘৃতাহুতি দেওয়ার শামিল । এই অসম্মানের বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মচারী-সহ ডিএ প্রাপক সব কর্মচারী আরও বৃহত্তর আন্দোলনে নামা হবে । অবিলম্বে সমস্ত বকেয়া ডিএ এবং সকল শূন্য পদে স্বচ্ছ ভাবে স্থায়ী নিয়োগ করতে হবে সরকারকে । না হলে আন্দোলন আরও তীব্রতর হবে ।
আরও পড়ুন: ললিপপ চাই না, 3 শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণায় খুশি নন বিক্ষোভকারীরা
নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্তে অনড়: তিনি এই বিষয়ে আরও বলেন যে, সুপ্রিম কোর্টে ডিএ নিয়ে যে মামলা চলছে, তা পঞ্চম বেতন কমিশনের (রোপা -2009) বকেয়া নিয়ে । ষষ্ঠ বেতন কমিশনের বকেয়া প্রায় 39 শতাংশ মহার্ঘ ভাতা (2023 সালের জানুয়ারি মাস থেকে কেন্দ্রীয় সরকার 4 শতাংশ ডিএ বাড়াতে চলেছে) নিয়ে আদালতে কোনও মামলা নেই । সে ব্যাপারে রাজ্য সরকার কেন নিরুত্তর রয়েছে ? এটা তাদের জ্ঞানের দৈন্যতা, নাকি চালাকি করে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কৌশল ?
কিঙ্কর অধিকারীর দাবি অবিলম্বে আপাতত ষষ্ঠ বেতন কমিশনের বকেয়া 39 শতাংশ ডিএ মিটিয়ে দিয়ে শিক্ষক-সরকারি কর্মচারী-সহ সমস্ত ডিএ প্রাপক কর্মচারীদের মর্যাদা এবং অধিকার ফিরিয়ে দিক সরকার । হুঁশিয়ারির সুরে তিনি বলেছেন, "তাই আমরা যেমন বলেছিলাম যে, সামনের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটকর্মী হিসেবে লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মীর যোগ না দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তা অব্যাহত থাকবে ।"
আন্দোলন চলবে বলে হুঁশিয়ারি: ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে যে, নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যেখানে জনগণ অংশগ্রহণ করবে সেটাই কাম্য । তবে এই বিষয়ে পালটা মন্তব্য করেন আর এক সরকারি কর্মী যিনি এই সংগঠনের সদস্য, তাঁর নাম শ্রীবাস তিওয়ারী । তিনি বলেন, "নির্বাচনী প্রক্রিয়া ভোট গ্রহণ বা ভোট দান যেমন সংবিধান স্বীকৃত, যেমন দেশের এক সাংবিধানিক কর্মসূচি, তেমনই মহার্ঘ ভাতা পাওনাটাও সংবিধান স্বীকৃত । 309 নম্বর ধারায় এর উল্লেখ রয়েছে । প্রশাসন তো সংবিধানের নিয়ম মানছে না, তাই আমরা যখন আমাদের সংবিধান সিদ্ধ ন্যায্য অধিকার নিয়ে আন্দোলন চালাচ্ছি, সেখানে সমস্যা কোথায় !"