ETV Bharat / state

Goblin Mode: অক্সফোর্ডের এবছরের সেরা শব্দ গবলিন মোড, এর অর্থ কী ? এটি এলই বা কোথা থেকে

অক্সফোর্ডের (Oxford Best Word of the Year) এ বছরের সেরা শব্দ যুগল গবলিন মোড (Goblin Mode)৷ কথাটির আভিধানিক অর্থ কী ? গবলিন কথাটা এলই বা কোথা থেকে ?

goblin-mode-is-oxford-best-word-of-the-year-what-does-it-mean
অক্সফোর্ডের এবছরের সেরা শব্দ গবলিন মোড
author img

By

Published : Dec 9, 2022, 6:24 PM IST

Updated : Dec 9, 2022, 9:58 PM IST

কলকাতা, 9 ডিসেম্বর: প্রতি বছরের মতো এ বছরের সেরা শব্দযুগল হিসেবে জনতার বিপুল ভোটে বেছে নেওয়া হয়েছে ‘গবলিন মোড’ (Goblin Mode) কে । কিন্তু কথাটার অর্থ কী ? সে দিকে নজর রাখব ৷ তবে গবলিন মোডের (Oxford Best Word of the Year) আভিধানিক অর্থ জানার আগে দেখে নিই গবলিন কথাটি কোথা থেকে এসেছে ৷

গবলিন হল একটি ছোট, অদ্ভুত, দানবীয় প্রাণী, যার দেখা মেলে একাধিক ইউরোপীয় সংস্কৃতির লোককাহিনীতে । মধ্যযুগের গল্পে প্রথম এর ব্যবহার দেখা যায় ৷ গল্প এবং দেশের উপর নির্ভর করে এদের চরিত্র, মেজাজ ও চেহারা ৷ গৃহস্থের দুষ্ট আত্মা থেকে চোর - নানা রূপে ধরা দেয় এই গবলিন । প্রায়শই পরী বা রাক্ষসের মতো জাদুকরী ক্ষমতা থাকে তাদের মধ্যে ৷ যেমন থাকে নিজের আকার পরিবর্তন করার ক্ষমতা ।

তবে অক্সফোর্ডের অভিধানে জনপ্রিয় শব্দ যুগল হিসেবে যে 'গবলিন মোড'কে বেছে নেওয়া হয়েছে, তার অর্থও এসেছে লোককাহিনীর সেই গবলিন চরিত্রকে মাথায় রেখেই ৷ অক্সফোর্ড অনুসারে এই শব্দ যুগলের অর্থ, “a type of behavior which is unapologetically self-indulgent, lazy, slovenly, greedy, typically in a way that rejects social norms or expectations.” এর বাংলা তর্জমা করলে কিছুটা এ রকম দাঁড়ায়: সমাজের নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের ইচ্ছেগুলিকে প্রাধান্য দেওয়া, নিজের ইচ্ছে মতো চলা, আলসে, লোভী, আত্মসুখী ও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ওঠা এবং এই ধরনের আচরণে মনে কোনও রকম গ্লানি বা কুণ্ঠাবোধ না থাকা ।

'অক্সফোর্ড ল্যাঙ্গুয়েজ’-এর প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্রথওল জানিয়েছেন, জনতার ভোটাভুটির মধ্যে এই শব্দবন্ধ উঠে আসায় একটা বিষয় স্পষ্ট যে, মানুষ এখন নিজের ভেতরের গবলিনকে অনেক বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে । শুধু তাই নয়, করোনা সবার জীবনে অনেক পরিবর্তন এনেছে । আর এই শব্দ যুগলের সেরা হওয়ার পেছনেও গত 12 মাসের জীবনযাত্রার একটা প্রতিফলন রয়েছে ।

অক্সফোর্ডের বছরের সেরা শব্দ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এই প্রথমবার অনলাইনে জনতার মতামত নেওয়া হয় । প্রায় 30,00,000টি ভোট এই গবলিন মোডের পক্ষে পড়েছে । ইংরেজি ভাষা বিশেষজ্ঞ ডক্টর দেবনীতা চক্রবর্তী বলেন, "অক্সফোর্ডের ক্ষেত্রে একটি শব্দকে বছরের সেরা হিসেবে বাছাই করার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা হয় ৷ যার মধ্যে অন্যতম হল যে, ওই বছর বা আগের বছরটা কেমন কেটেছে । সেই সম্পর্কিত কিছু শব্দও তালিকায় রাখা হয় । সে দিক থেকে দেখতে গেলে মানুষ এই গবলিন মোড কথাটার সঙ্গে নিজেদের বর্তমান অবস্থার অনেকটা মিল পেয়েই এই শব্দটিকে হয়তো ভোটে জিতিয়েছে । সাম্প্রতিককালে মনোবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন যে, যদি নিজে ভালো না থাকা যায়, তাহলে অপরকে ভালো রাখা যায় না । আগে নিজের দরকারটা দেখব । না বলতে শিখব । স্বচ্ছন্দ্যে থাকব । নিজের ইচ্ছেগুলোকে প্রাধান্য দেব ।"

তিনি আরও বলেন, "করোনাকালে আমরা দেখেছি আমাদের জীবন যাত্রা 180 ডিগ্রি বদলে গিয়েছিল । যার রেশ এখনও বর্তমান । বাড়ি থেকে বেরনোর বালাই নেই, তাই সুন্দর করে নিজেকে সাজাবার দরকার নেই । বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও একই রকম দেখা গিয়েছে যে, তারা বাইরে বেরতে পারছে না বলে বেশিরভাগ সময় তাদের মোবাইল বা টিভির সামনে কেটেছে ৷ তাদের হাতের কাছে পৌঁছে গিয়েছে খাবার-দাবার এবং বিনোদনের জিনিসপত্র । তাই আমার মনে হয়, করোনার পরবর্তী সময় লোকে আমার সম্বন্ধে কী ভাবছেন, আমাকে কী রকম দেখতে লাগছে, এই বিষয়গুলো অনেকটা গুরুত্ব হারিয়েছে । করোনা আমাদের অন্যভাবে ভাবতে শিখিয়েছে ।"

এই শব্দ যুগল প্রথমে 2009 সালে টুইটারে ব্যবহার করা হয় । এরপর আবার এই শব্দটি উঠে আসে যখন ব়্যাপার কেনি ওয়েস্ট এবং তাঁর বান্ধবী জুলিয়া ফক্সের মধ্যে বিচ্ছেদ হয় । এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে জুলিয়া ফক্স বলেছিলেন যে, "হি কুড নট টেক মাই গবলিন মোড" (অর্থাৎ ও আমার এই গবলিন মোড মেনে নিতে পারেনি ।"

আরও পড়ুন: সরকারি স্কুলে শুরু গরমের ছুটি, বেসরকারিদের ভরসা হাইব্রিড মোডে

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মনোবিদ বলেন, "মানুষের মধ্যে এই ধরনের মনোভাব সবসময় ছিল । তবে এই শব্দ যুগল উঠে আসার পর এখন এটা নিয়ে অনেক বেশি চর্চা হচ্ছে । আমরা যত আধুনিক হচ্ছি, এই ধরনের আত্মকেন্দ্রিক ব্যবহার মানুষের মধ্যে অনেক বেশি করে প্রকট হচ্ছে । বর্তমান জীবনের এই ইঁদুর দৌড়ে পাশের লোকটা কেমন আছে বা সে কী করছে, সেই খোঁজ আমরা রাখি না । ওয়ার্ক ফ্রম হোমের যুগে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে হয়ে । অনেক ক্ষেত্রে নাওয়া খাওয়ারও সময় মেলে না । আর করোনার সময় তো বাচ্চারা সারাদিন বাড়িতে বসে কম্পিউটারে বা ল্যাপটপে নিমজ্জিত হয়ে ছিল । এর ফলে ভীষণ ভাবে তাদের মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে । তাই এটা যে মানুষের একটা নতুন চরিত্র তা নয়, তবে আমার মনে হয় যুগ যত বদলাচ্ছে এই গবলিন মোড মানুষের মধ্যে একটা অতিমারির চেহারা নিচ্ছে ।"

একটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত আইটি ইঞ্জিনিয়ার আরশাদ আলি বলেন, "গত দু বছরে আমরা যা কোভিডের প্রকোপ দেখেছি, তাতে বাড়ি থেকে কাজ করা বা work-from-home টা যেন নতুন স্বাভাবিক বা নিউ নরম্যাল হয়ে গিয়েছে, বিশেষ করে যাঁরা তথ্যপ্রযুক্তির কাজের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের জন্য । ফলে সকালে উঠে স্নান-খাওয়া করে তাড়াহুড়ো করে জামা কাপড় পড়ে সেই যে অফিসে যাওয়ার তাড়া, সেটা বহু লোকের মধ্যে আর নেই । আর অফিস যখন দেখছে তাদের কাজটা ঠিকঠাক হয়ে যাচ্ছে, পাশাপাশি তাদের নিজস্ব অফিসের খরচপত্র অনেক কমে যাচ্ছে, তারাও এই নতুন নিয়মটাকে উৎসাহ দিচ্ছে । এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে অনেকেই সাধারণভাবে যতটা সময় অফিসে কাটাতেন, তার চেয়ে অনেক বেশি কম্পিউটারের সামনে কাটাচ্ছেন । এর জন্য চোখ কিংবা দেহের অন্য মাংসপেশির যা ক্ষতি হওয়ার সে তো হচ্ছেই, মানসিকভাবেও মানুষ অনেকটা বদলে গিয়েছে । বাইরে বেরনো লোকের সঙ্গে মেলামেশা বা সোশালাইজিং এক রকম মানুষ ভুলে গিয়েছে ।"

রিসার্চ স্কলার দিব্যানী শর্মা বলেন, "করোনার সময় আমি এমফিল করছিলাম । তখন সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং লাইব্রেরিগুলো বন্ধ ছিল । স্বাভাবিকভাবেই কোথাও গিয়ে রিসার্চের কাজ করতে পারিনি । ধীরে ধীরে আলসেমি, কোনও কাজ না করার ইচ্ছা, নিজেকে পরিচ্ছন্ন না রাখা, ঘরের বাইরে বেরিয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা না বলা আমার ব্যবহারিক জীবন হয়ে উঠেছিল । কিন্তু আমাকে আমার থিসিস শেষ করতেই হবে । তাই একটা সময়ের পর নিজেকে রীতিমতো ধাক্কা মেরে তুলে 30,000 শব্দর থিসিস বাড়ির জামা কাপড় পরেই শেষ করেছি । তাই ত্রিশ হাজার শব্দের একটা গোটা থিসিস যদি বাড়িতে বসে লিখে ফেলা যায়, তাহলে অনেক কাজই বাড়িতে বসেই করা যায় । এটা সকলেই বুঝতে পেরেছে । তাই এখনও বহু অফিসে ওয়ার্ক ফ্রম হোমই চলছে । একবার মানুষ এই স্বাচ্ছন্দ্যের স্বাদ পেয়ে গিয়েছে, তাহলে কেন সে কষ্ট করে প্রতিদিন বেরিয়ে কাজ করতে যাবে যখন বাড়ির মধ্যে বসেই সেই কাজগুলো হয়ে যাচ্ছে । এর ফলে সমাজের সঙ্গে, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে মানুষের অনেকটা দূরত্ব বেড়ে গিয়েছে । তাই আমার মনে হয়, শুধু এ বছরের সেরা শব্দই নয়, করোনার পরে এই শব্দটা একেবারে প্রযোজ্য । এবং এই যে মানুষ একটা স্বাচ্ছন্দ্যের স্বাদ পেয়ে গিয়েছে, বেশি খাটতে হচ্ছে না, এইটা এখন প্রায় সবার ব্যবহারিক জীবনের মধ্যেও অনেকটাই ঢুকে পড়েছে । আর এই পরিস্থিতি থেকে যদি কেউ সত্যিই বেরোতে চায়, তাহলে হয়তো তার অনেকটা সময় লেগে যাবে ।"

কলকাতা, 9 ডিসেম্বর: প্রতি বছরের মতো এ বছরের সেরা শব্দযুগল হিসেবে জনতার বিপুল ভোটে বেছে নেওয়া হয়েছে ‘গবলিন মোড’ (Goblin Mode) কে । কিন্তু কথাটার অর্থ কী ? সে দিকে নজর রাখব ৷ তবে গবলিন মোডের (Oxford Best Word of the Year) আভিধানিক অর্থ জানার আগে দেখে নিই গবলিন কথাটি কোথা থেকে এসেছে ৷

গবলিন হল একটি ছোট, অদ্ভুত, দানবীয় প্রাণী, যার দেখা মেলে একাধিক ইউরোপীয় সংস্কৃতির লোককাহিনীতে । মধ্যযুগের গল্পে প্রথম এর ব্যবহার দেখা যায় ৷ গল্প এবং দেশের উপর নির্ভর করে এদের চরিত্র, মেজাজ ও চেহারা ৷ গৃহস্থের দুষ্ট আত্মা থেকে চোর - নানা রূপে ধরা দেয় এই গবলিন । প্রায়শই পরী বা রাক্ষসের মতো জাদুকরী ক্ষমতা থাকে তাদের মধ্যে ৷ যেমন থাকে নিজের আকার পরিবর্তন করার ক্ষমতা ।

তবে অক্সফোর্ডের অভিধানে জনপ্রিয় শব্দ যুগল হিসেবে যে 'গবলিন মোড'কে বেছে নেওয়া হয়েছে, তার অর্থও এসেছে লোককাহিনীর সেই গবলিন চরিত্রকে মাথায় রেখেই ৷ অক্সফোর্ড অনুসারে এই শব্দ যুগলের অর্থ, “a type of behavior which is unapologetically self-indulgent, lazy, slovenly, greedy, typically in a way that rejects social norms or expectations.” এর বাংলা তর্জমা করলে কিছুটা এ রকম দাঁড়ায়: সমাজের নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের ইচ্ছেগুলিকে প্রাধান্য দেওয়া, নিজের ইচ্ছে মতো চলা, আলসে, লোভী, আত্মসুখী ও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ওঠা এবং এই ধরনের আচরণে মনে কোনও রকম গ্লানি বা কুণ্ঠাবোধ না থাকা ।

'অক্সফোর্ড ল্যাঙ্গুয়েজ’-এর প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্রথওল জানিয়েছেন, জনতার ভোটাভুটির মধ্যে এই শব্দবন্ধ উঠে আসায় একটা বিষয় স্পষ্ট যে, মানুষ এখন নিজের ভেতরের গবলিনকে অনেক বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে । শুধু তাই নয়, করোনা সবার জীবনে অনেক পরিবর্তন এনেছে । আর এই শব্দ যুগলের সেরা হওয়ার পেছনেও গত 12 মাসের জীবনযাত্রার একটা প্রতিফলন রয়েছে ।

অক্সফোর্ডের বছরের সেরা শব্দ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এই প্রথমবার অনলাইনে জনতার মতামত নেওয়া হয় । প্রায় 30,00,000টি ভোট এই গবলিন মোডের পক্ষে পড়েছে । ইংরেজি ভাষা বিশেষজ্ঞ ডক্টর দেবনীতা চক্রবর্তী বলেন, "অক্সফোর্ডের ক্ষেত্রে একটি শব্দকে বছরের সেরা হিসেবে বাছাই করার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা হয় ৷ যার মধ্যে অন্যতম হল যে, ওই বছর বা আগের বছরটা কেমন কেটেছে । সেই সম্পর্কিত কিছু শব্দও তালিকায় রাখা হয় । সে দিক থেকে দেখতে গেলে মানুষ এই গবলিন মোড কথাটার সঙ্গে নিজেদের বর্তমান অবস্থার অনেকটা মিল পেয়েই এই শব্দটিকে হয়তো ভোটে জিতিয়েছে । সাম্প্রতিককালে মনোবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন যে, যদি নিজে ভালো না থাকা যায়, তাহলে অপরকে ভালো রাখা যায় না । আগে নিজের দরকারটা দেখব । না বলতে শিখব । স্বচ্ছন্দ্যে থাকব । নিজের ইচ্ছেগুলোকে প্রাধান্য দেব ।"

তিনি আরও বলেন, "করোনাকালে আমরা দেখেছি আমাদের জীবন যাত্রা 180 ডিগ্রি বদলে গিয়েছিল । যার রেশ এখনও বর্তমান । বাড়ি থেকে বেরনোর বালাই নেই, তাই সুন্দর করে নিজেকে সাজাবার দরকার নেই । বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও একই রকম দেখা গিয়েছে যে, তারা বাইরে বেরতে পারছে না বলে বেশিরভাগ সময় তাদের মোবাইল বা টিভির সামনে কেটেছে ৷ তাদের হাতের কাছে পৌঁছে গিয়েছে খাবার-দাবার এবং বিনোদনের জিনিসপত্র । তাই আমার মনে হয়, করোনার পরবর্তী সময় লোকে আমার সম্বন্ধে কী ভাবছেন, আমাকে কী রকম দেখতে লাগছে, এই বিষয়গুলো অনেকটা গুরুত্ব হারিয়েছে । করোনা আমাদের অন্যভাবে ভাবতে শিখিয়েছে ।"

এই শব্দ যুগল প্রথমে 2009 সালে টুইটারে ব্যবহার করা হয় । এরপর আবার এই শব্দটি উঠে আসে যখন ব়্যাপার কেনি ওয়েস্ট এবং তাঁর বান্ধবী জুলিয়া ফক্সের মধ্যে বিচ্ছেদ হয় । এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে জুলিয়া ফক্স বলেছিলেন যে, "হি কুড নট টেক মাই গবলিন মোড" (অর্থাৎ ও আমার এই গবলিন মোড মেনে নিতে পারেনি ।"

আরও পড়ুন: সরকারি স্কুলে শুরু গরমের ছুটি, বেসরকারিদের ভরসা হাইব্রিড মোডে

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মনোবিদ বলেন, "মানুষের মধ্যে এই ধরনের মনোভাব সবসময় ছিল । তবে এই শব্দ যুগল উঠে আসার পর এখন এটা নিয়ে অনেক বেশি চর্চা হচ্ছে । আমরা যত আধুনিক হচ্ছি, এই ধরনের আত্মকেন্দ্রিক ব্যবহার মানুষের মধ্যে অনেক বেশি করে প্রকট হচ্ছে । বর্তমান জীবনের এই ইঁদুর দৌড়ে পাশের লোকটা কেমন আছে বা সে কী করছে, সেই খোঁজ আমরা রাখি না । ওয়ার্ক ফ্রম হোমের যুগে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে হয়ে । অনেক ক্ষেত্রে নাওয়া খাওয়ারও সময় মেলে না । আর করোনার সময় তো বাচ্চারা সারাদিন বাড়িতে বসে কম্পিউটারে বা ল্যাপটপে নিমজ্জিত হয়ে ছিল । এর ফলে ভীষণ ভাবে তাদের মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে । তাই এটা যে মানুষের একটা নতুন চরিত্র তা নয়, তবে আমার মনে হয় যুগ যত বদলাচ্ছে এই গবলিন মোড মানুষের মধ্যে একটা অতিমারির চেহারা নিচ্ছে ।"

একটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত আইটি ইঞ্জিনিয়ার আরশাদ আলি বলেন, "গত দু বছরে আমরা যা কোভিডের প্রকোপ দেখেছি, তাতে বাড়ি থেকে কাজ করা বা work-from-home টা যেন নতুন স্বাভাবিক বা নিউ নরম্যাল হয়ে গিয়েছে, বিশেষ করে যাঁরা তথ্যপ্রযুক্তির কাজের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের জন্য । ফলে সকালে উঠে স্নান-খাওয়া করে তাড়াহুড়ো করে জামা কাপড় পড়ে সেই যে অফিসে যাওয়ার তাড়া, সেটা বহু লোকের মধ্যে আর নেই । আর অফিস যখন দেখছে তাদের কাজটা ঠিকঠাক হয়ে যাচ্ছে, পাশাপাশি তাদের নিজস্ব অফিসের খরচপত্র অনেক কমে যাচ্ছে, তারাও এই নতুন নিয়মটাকে উৎসাহ দিচ্ছে । এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে অনেকেই সাধারণভাবে যতটা সময় অফিসে কাটাতেন, তার চেয়ে অনেক বেশি কম্পিউটারের সামনে কাটাচ্ছেন । এর জন্য চোখ কিংবা দেহের অন্য মাংসপেশির যা ক্ষতি হওয়ার সে তো হচ্ছেই, মানসিকভাবেও মানুষ অনেকটা বদলে গিয়েছে । বাইরে বেরনো লোকের সঙ্গে মেলামেশা বা সোশালাইজিং এক রকম মানুষ ভুলে গিয়েছে ।"

রিসার্চ স্কলার দিব্যানী শর্মা বলেন, "করোনার সময় আমি এমফিল করছিলাম । তখন সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং লাইব্রেরিগুলো বন্ধ ছিল । স্বাভাবিকভাবেই কোথাও গিয়ে রিসার্চের কাজ করতে পারিনি । ধীরে ধীরে আলসেমি, কোনও কাজ না করার ইচ্ছা, নিজেকে পরিচ্ছন্ন না রাখা, ঘরের বাইরে বেরিয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা না বলা আমার ব্যবহারিক জীবন হয়ে উঠেছিল । কিন্তু আমাকে আমার থিসিস শেষ করতেই হবে । তাই একটা সময়ের পর নিজেকে রীতিমতো ধাক্কা মেরে তুলে 30,000 শব্দর থিসিস বাড়ির জামা কাপড় পরেই শেষ করেছি । তাই ত্রিশ হাজার শব্দের একটা গোটা থিসিস যদি বাড়িতে বসে লিখে ফেলা যায়, তাহলে অনেক কাজই বাড়িতে বসেই করা যায় । এটা সকলেই বুঝতে পেরেছে । তাই এখনও বহু অফিসে ওয়ার্ক ফ্রম হোমই চলছে । একবার মানুষ এই স্বাচ্ছন্দ্যের স্বাদ পেয়ে গিয়েছে, তাহলে কেন সে কষ্ট করে প্রতিদিন বেরিয়ে কাজ করতে যাবে যখন বাড়ির মধ্যে বসেই সেই কাজগুলো হয়ে যাচ্ছে । এর ফলে সমাজের সঙ্গে, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে মানুষের অনেকটা দূরত্ব বেড়ে গিয়েছে । তাই আমার মনে হয়, শুধু এ বছরের সেরা শব্দই নয়, করোনার পরে এই শব্দটা একেবারে প্রযোজ্য । এবং এই যে মানুষ একটা স্বাচ্ছন্দ্যের স্বাদ পেয়ে গিয়েছে, বেশি খাটতে হচ্ছে না, এইটা এখন প্রায় সবার ব্যবহারিক জীবনের মধ্যেও অনেকটাই ঢুকে পড়েছে । আর এই পরিস্থিতি থেকে যদি কেউ সত্যিই বেরোতে চায়, তাহলে হয়তো তার অনেকটা সময় লেগে যাবে ।"

Last Updated : Dec 9, 2022, 9:58 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.