কলকাতা, 11 অগস্ট: অ্যান্ডি ওয়ারহল বলেছিলেন, একটা সময় আসবে যখন পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ 15 মিনিটের জন্য বিশ্ববিখ্যাত হবেন। ঠিক এইরকমই হাল যেন কলকাতা ট্রামের। একদা অতি জনপ্রিয় গণপরিবহন ট্রাম সময়ের সঙ্গে হারিয়ে ফেলেছিল তাল ৷ শহরবাসীর কাছে ঐতিহ্যের ট্রাম এবং ট্রামের ঐতিহ্যকে আবারও মনে করিয়ে দিতে গড়িয়াহাট ট্রাম ডিপোতে রাজ্য পরিবহন দফতরের উদ্যোগে তৈরি হয় ট্রাম মিউজিয়াম ৷ ভিড় টানতে সেখানেই খোলা হয় ট্রাম ওয়ার্ল্ড ক্যাফে। কিন্তু সাত মাসের মধ্যে বন্ধ হয়ে গেল গড়িয়াহাট এই ক্যাফে ৷ বর্তমানে ট্রাম মিউজিয়ামের অস্তিত্ব নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
গতবছর ডিসেম্বর মাসে আরামদায়ক বেতের সোফা, টেবিল, চেয়ার, হুক্কা ও সুস্বাদু খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছিল এই ক্যাফে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত যেখানে ছিল মোমো কাউন্টার, আজ সেখানে শুনশান সবকিছু ৷ কী কারণে হঠাৎই বন্ধ হয়ে গেল ট্রাম ক্যাফে? এই বিষয় পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "একটি সংস্থা অস্থায়ীভাবে একটি ক্যাফে তৈরি করেছিল। কিন্তু ট্রাম এবং ট্রামের জমিকে পরিবহন বিভাগ সুরক্ষিত রাখতে চায়। তাই ক্যাফেটিকে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনেকটা জমি নিয়ে ট্রাম ক্যাফে বিস্তৃত ছিল, তাই এভাবে ট্রামের জমি কাউকে দিয়ে দেওয়া যায় না। তাই ট্রাম ক্যাফে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রয়েছে ট্রাম ওয়ার্ল্ডও।" তিনি আরও জানিয়েছেন যে, গণপরিবহনের উন্নত পরিষেবা দেওয়ার বিষয় নিয়ে দফতরের একাধিক ভাবনা রয়েছে, তাই এই সিদ্ধান্ত।
ট্রাম গবেষক ও ট্রাম প্রেমী ডক্টর দেবাশিস ভট্টাচার্য, যিনি ক্যালকাটা ট্রাউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গেও যুক্ত, তিনি বলেন "একবার ট্রাম ওয়ার্ল্ড করা হল ৷ তারপর সেখানে বছর ঘুরতে না-ঘুরতেই ট্রাম ক্যাফে করা হল এবং তাও বন্ধ হয়ে গেল। এই ডিপোতে একসময় 65 থেকে 70 টি ট্রাম রাখা হত। যার মধ্যে 50 থেকে 55টি রাস্তায় বের হত। কিন্তু ধীরে ধীরে ট্রামকে যখন একেবারে কোণঠাসা করে দেওয়া হল তখন স্বাভাবিকভাবে রোজগারও কমে গেল। তখন ট্রামের জমির উপর ট্রাম ওয়ার্ল্ড এবং ট্রাম ক্যাফে করা হল। তবে এটা মঙ্গলের কথা যে ট্রাম ডিপো থেকে এরা বিদায় নিয়েছে। আশা করব পরিবহন বিভাগের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং ট্রাম ডিপো আদতে যে কারণে তৈরি সেটাই এখানে বজায় থাকবে।"
অন্যদিকে, ক্যালকাটা ট্রাউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের আর এক সদস্য স্বর্ণাভ মুখোপাধ্যায় সওয়াল করেন যে, আসলে পরিবহন দফতরের ট্রামকে পুরোদমে রাস্তায় ফিরিয়ে আনারা সদিচ্ছা রয়েছে কি? পাশাপাশি ট্রামের জমি ট্রামের কাজেই ব্যবহার হওয়া উচিত বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, "ট্রাম আমাদের ঐতিহ্য, যা ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে যেতে বসেছে ৷ পুরনো ট্রামগুলিকে সংরক্ষণ করে রাখা উচিত যাতে ট্রাম মিউজিয়াম তৈরি করা যায় ৷ আসল ট্রাম কেমন ছিল তার একটা সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে। মানুষ ট্রাম দেখতে যাবে, আর্ট ওয়ার্ক নয়।"
আরও পড়ুন: অনাদরে পড়ে আছে বিপ্লবীর নামফলক, হারিয়ে যাচ্ছে 'হান্টারওয়ালি' বিমলপ্রতিভা দেবীর ইতিহাস
ডিসেম্বরে এই ক্যাফের উদ্বোধনের সময় পরিবহনমন্ত্রী বলেছিলেন যে, ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের একাধিক ডিপোর মধ্যে অন্যতম এই গড়িয়াহাট ট্রাম ডিপো। এখানে অন্য অংশে ট্রাম যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করা হলেও অনেকখানি জায়গা অব্যবহৃত হয়েই পড়ে রয়েছে। তাই সেই জায়গা ব্যবহার করে ট্রাম ওয়ার্ল্ড এবং তারপর ট্রাম ক্যাফে করা হয়েছে। শহরের ট্রাম ডিপোগুলিতে অব্যবহৃত জমিকে লাভজনক করে তোলার উদেশ্যেই ট্রাম মিউজিয়ামের সঙ্গে এই ক্যাফে যুক্ত করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছিল।