কলকাতা, 8 অক্টোবর: সাতসকালে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই ৷ পৌর নিয়োগে দুর্নীতি মামলার তদন্ত করছে এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ৷ জানা গিয়েছে, তারই অংশ হিসেবে এই তল্লাশি ৷ এই প্রসঙ্গে বর্তমানকে বিঁধলেন প্রাক্তন। কলকাতা পৌরনিগমের প্রাক্তন মেয়র মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য মনে করেন ফিরাহাদের এই জেরা-তল্লাশির মুখে পড়া কলকাতার নাগরিকদের কাছে লজ্জার বিষয়।
এর আগে নারদকাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছিলেন কলকাতা পৌরনিগমের মেয়র ৷ এবার রাজ্যে পৌরনিয়োগে গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি পদে দুর্নীতির তদন্তে সেই কেন্দ্রীয় সংস্থারই জেরা ও তল্লাশির মুখে পড়লেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পৌর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ৷ এই ঘটনায় ফিরহাদ থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করলেন রাজ্য়সভার এই সাংসদ ৷ গত শুক্রবারই পৌর নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতে ইডি হানা দেয় ৷ তাঁর বাড়ি ছাড়া আরও কয়েকজন পৌরপ্রধানের বাড়িতেও তল্লাশি চালায় ইডি ৷ সেই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেন ফিরহাদ হাকিম।
আরও পড়ুন: পৌরসভায় নিয়োগে দুর্নীতি কাণ্ডে মদন মিত্রের বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি
তিনি বলেছিলেন, "রাজনৈতিক স্বার্থেই ইডি-র এই তল্লাশি অভিযান ৷ আমাদের সামাজিক সম্মানহানি করতেই এটা করা হয় ৷ আমি দেখেছি 12-14 জায়গায় ইডি তল্লাশি করেছে ৷ মহামান্য আদালতের কাছে হাতজোড় করে বলতে চাই, আপনার কাছে ওরা (ইডি) যাই জমা দিক, তা আপনি শোনান ৷ রাজনীতির জন্য সামাজিক সম্মানহানি করা হচ্ছে। আমার কেস তাই হয়তো দশ বছরের পর কিছুই হবে না।"
সেদিন নগরোন্নয়ন মন্ত্রী দাবি করেন, ইডি কোনও প্রমাণ দিতে পারছে না ৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আছে, রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেওয়া যাবে না ৷ এখন শুধু মিডিয়া ট্রায়াল হয় ৷ ফিরহাদ বলেন, "কোনও প্রমাণ পাওয়া না গেলে, আদালতের এই সব কেস খারিজ করে দেওয়া উচিত ৷ আমাদের দু-একজন নেতা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তৃণমূলকে টার্গেট করছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি ৷"
তাঁর এই বক্তব্যের পর রবিবার সকালেই সিবিআই হানা খোদ মন্ত্রীর বাড়িতে ৷ তবে এই অভিযান প্রসঙ্গে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "এই ঘটনা কলকাতাবাসীর কাছে লজ্জার। যাঁরা এই সব দুর্নীতিপরায়ণ লোকজনকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন তাঁদের কাছেও লজ্জার ৷ অতীতে কলকাতা কর্পোরেশনের একটা গরিমা ছিল। সেটা আমরা হেলায় হারিয়েছি ৷ এখন কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গের নাম শুনলে গোটা দেশের মানুষ নাক কুঁচকে থাকেন ৷ এর জন্য দায়ী ভোটাররা ৷ অন্য কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই ৷"
প্রবীণ বামনেতার আরও অভিযোগ, তৃণমূল ব্যাপক দুর্নীতি করেছে। তাতেই তারা অভ্যস্ত ৷ বর্তমান মেয়রকে অপরিচিত ব্যাক্তির কাছে হাত পেতে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে ৷ সেটা তাঁরা অপরাধ বলে মনে করেন না ৷ রাজ্য সরকার হলফনামা দিয়ে বলেছে, এটা অপরাধ নয় ৷ তিনি বলেন, "একটা দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ বা দলকে যদি আমরা ভোট দিয়ে থাকি তাহলে তার দায় কাদের ? তৃণমূল বামেদের দিকে আঙুল তুলেছিল ৷ কিন্তু কোনও কিছুই করতে পারল না । আমি তো আগেই বলেছিলাম ওদের দলনেত্রীকে, সব তথ্যপ্রমাণ নিয়ে তদন্ত করুন ৷ আমরা আত্মরক্ষা করতে যাব না ৷ মিষ্টি খাওয়াব ৷"
আরও পড়ুন: সক্রিয় সিবিআই! রবির সকালে ফিরহাদ-মদনের বাড়িতে জোড়া হানা