কলকাতা, 24 অগাস্ট : একটানা বৃষ্টির জেরে দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় নদীর জলস্তর বিপদসীমা ছুঁইছুঁই ৷ ইতিমধ্যেই কয়েকটি জেলার বিভিন্ন জায়গায় জল ঢুকেছে ৷ এই পরিস্থিতিতে ফের নিম্নচাপের জেরে দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া অফিস ৷ আজ সকালে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন অঞ্চলে নিম্নচাপ ঘনীভূত হয়েছে । আগামী 48 ঘণ্টায় তা আরও ঘনীভূত হবে । যার জেরে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে । সেইসঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিও হতে পারে । উত্তর 24 পরগনা, দক্ষিণ 24 পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া ও বীরভূমে ভারী বৃষ্টির সর্তকতা জারি করেছে আলিপুর আবহাওয়া অফিস । মঙ্গল ও বুধবার বৃষ্টির দাপট বাড়বে । আগামীকাল উপকূলের জেলাগুলিতে বৃষ্টির দাপট বেশি থাকবে । পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ 24 পরগনা, ঝাড়গ্রামে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে । যার জেরে দক্ষিণবঙ্গের নদীগুলিতে জলস্তর বিপদসীমা ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে ৷
ইতিমধ্যে ক্রমাগত বৃষ্টির জেরে হাওড়া, হুগলি, পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূমের মতো জেলাগুলিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ৷ কিন্তু বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমায় সেই পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে ৷ হুগলি জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, দামোদর নদের জল এখনও পর্যন্ত 12.9 গেজে অর্থাৎ বিপদসীমায় পৌঁছায়নি । বর্তমানে নদের জলস্তর 11.7 গেজে রয়েছে৷ সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের তরফে খানাকুল, পুরশুড়া, ধনিয়াখালি, বলাগড়ের পরিস্থিতিতে নজর রাখা হয়েছে ৷ আরামবাগে মোতায়েন করা হয়েছে NDRF-এর একটি টিম । নামানো হচ্ছে সিভিল ডিফেন্স ।
হুগলির তুলনায় হাওড়ার পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক ৷ তবে প্রত্যেক দিনের মতো আজও জোয়ারের জল ঢুকেছে গ্রামীণ হাওড়ার নদী তীরবর্তী এলাকাগুলিতে । জলস্তর আগের তুলনায় অনেকটাই নেমেছে ৷ তাই আপাতত বিপদের আশঙ্কা দেখছেন না প্রশাসনিক কর্তারা । DVC জল না ছাড়লে নতুন করে কোনও সমস্যা তৈরি হবে না বলেই মত জেলা প্রশাসনের । তবে প্রত্যেকটি ব্লকে যথেষ্ট ত্রাণসামগ্রী মজুত রয়েছে।
অন্যদিকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল ব্লকের চৌকা গ্রামের শুশুনিয়া খালের বাঁধ ভেঙে নতুন করে জল ঢুকতে শুরু করেছে ওই এলাকার মাঠে । চাষের জমি জলের তলায় ৷ বৃষ্টির জেরে সবং ব্লকের 13 নম্বর বিষ্ণুপুর অঞ্চলে নাগলকাটায় কাঠের সেতু এখনও জলের তলায় ৷ আজ এলাকার পরিস্থিতি পরিদর্শনে যান রাজ্যসভার সাংসদ মানসরঞ্জন ভুঁইঞা, জেলাশাসক রেশমি কমল, SP দীনেশ কুমার ৷
প্রায় একই পরিস্থিতি পূর্ব মেদিনীপুরেও ৷ পূর্ব মেদিনীপুরে গতরাত থেকে চলছে বৃষ্টি । যার ফলে পুনরায় রূপনারায়ণ, কংসাবতী ও চন্ডিয়া নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে । বিপদসীমার খুব গা ঘেঁষে বয়ে চলেছে কংসাবতী নদীর জল । যদিও জেলা প্রশাসনের তরফে নদীর বাঁধগুলিতে সর্বদা নজরদারি চালানো হচ্ছে । বাঁধের কোনও জায়গায় ফাটল বা গর্ত দেখা দিলেই তা দ্রুত মেরামত করা হচ্ছে ৷ বৃষ্টির জেরে কংসাবতী নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় পৌরসভার চার, আট, এক নম্বর ওয়ার্ডের বেশকিছু অংশ জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, মজুত করা হয়েছে শুকনো খাবার ও ত্রিপল । নদীর বাঁধ সংলগ্ন এলাকার ফ্লাড সেন্টারগুলিকেও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে ।
গত দু'দিন জেলায় বৃষ্টিপাত কিছুটা কমায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা কেটেছে বীরভূমে । যদিও, নদ-নদীগুলি জলে এখনও পরিপূর্ণ । তবে বিপদসীমার থেকে নিচে রয়েছে জলস্তর ৷ যদিও যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত জেলা প্রশাসন ৷ প্রশাসনের তরফে মজুত করা হয়েছে পর্যাপ্ত প্লাস্টিক, নৌকা ৷ NDRFকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে । জানা গিয়েছে, গত দু'দিনে 210 মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বীরভূমে ।
তবে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় রাজ্যের একাধিক এলাকায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস ৷ তিনদিন রাজ্যের একাধিক জেলায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে ৷ ফলে, নতুন করে মাথায় চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে একাধিক জেলা প্রসাশনের ৷