কলকাতা, 20 মার্চ: সালটা ছিল 1953 । দিনটি ছিল 29 মে । ঠিক বেলা 11.30 নাগাদ নিউজিল্যান্ডের এডমন্ড হিলারি (Edmund Hillary) এবং তাঁর নেপালি শেরপা তেনজিং নোরগে (Tenzing Norgay) একটি বিশ্ব রেকর্ড গড়েন । তাঁরা দু'জন প্রথম যারা মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন (First summit of Mount Everest)। প্রথম এভারেস্ট জয়ের 70 বছর পূর্ণ হচ্ছে চলতি বছরের মে মাসে। আর সেই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রায় 37 জন রওনা দিচ্ছেন এভারেস্ট বেস ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে ।
প্রায় 18 হাজার ফিট বা 5350 মিটার ট্রেক করে পৌঁছতে হয় এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে। সমগ্র অভিযানটির আয়োজনে রয়েছেন পর্বতারোহণে 'গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড' প্রাপ্ত সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। এডমন্ড হিলারি এবং শেরপা তেনজিং নোরগের মাউন্ট এভারেস্টে জয়ের 70 বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ৷ এই দিনটি এবছরের মে মাসে নেপালের খুমজুংয়ে এডমন্ড হিলারির তৈরি করা স্কুল ও হাসপাতালে এবং নামচে বাজারে দুটি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হবে । এই বছরের অনুষ্ঠানে এডমন্ডের ছেলে পিটার হিলারি এবং তেনজিং নোরগের ছেলে জামলিংও উপস্থিত থাকবেন । মূল পর্বত অভিযান শুরু হবে 15 মে এবং শেষ হবে 30 মে। এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে পৌঁছনোর পর পাশেই থাকা কালা পাথর ট্রেক করার পরিকল্পনাও রয়েছে ওই দলের ।
সত্যরূপ সিদ্ধান্ত জানান, ফুটবল বা ক্রিকেট নিয়ে আমাদের দেশে যেরকম উন্মাদনা রয়েছে ৷ তা কিন্তু অনেক ক্রীড়ার ক্ষেত্রেই নেই । ঠিক একইভাবে বঞ্চিতদের দলে রয়েছে মাউন্টেনিয়ারিং । অথচ বহু মানুষ একাধিক দুর্গম অভিযান জয় করে সেইসব পাহাড়ের চূড়ার উপর পুঁতে এসেছে ভারতের পতাকা । তাই তাঁর মনে হয়েছে 70 বছর উপলক্ষে পর্বতারোহণে যদি উদ্যোগপতী এবং ব্যবসায়ীদের সামিল করা যায়, তাহলে মন্দ হয় না । সেই ভাবনা নিয়েই তিনি একাধিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন । খুব অদ্ভুতভাবে সব জায়গা থেকেই তিনি ব্যাপক সাড়া পান বলে জানিয়েছেন সত্যরূপ ।
তিনি বলেন, "যেহেতু আমাদের দলে এমন বহু মানুষ রয়েছেন যাদের আগে এই ধরনের কঠিন ট্রেকিংয়ের কোনও অভিজ্ঞতা নেই ৷ তাই কেউ যদি কিঞ্চিৎ অসুস্থ বোধ করেন তাহলে কোনওরকম ঝুঁকি না-নিয়ে তাকে সোজা নামিয়ে সবচেয়ে কাছের হাসপাতালে ভরতি করা হবে।" হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, কলকাতা এবং মুম্বই থেকে একাধিক ব্যবসায়ী ও উদ্যোগপতি, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মানুষজন, স্বেচ্ছা সেবক সংগঠন এবং আরও অনেকে এই অভিযানের খবর পেয়ে সত্যরূপ সিদ্ধান্তের সঙ্গে যোগাযোগ করেন । এই দলে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ পর্বতারোহী রয়েছেন ৷ এর পাশাপাশি এমন অনেকে রয়েছেন যাঁরা প্রথমবার এই ধরনের অভিযানে যাবেন । আর এই দলে সর্বকনিষ্ঠ সদস্যের বয়স হল 10 এবং সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ ব্যক্তির বয়স হল 53 ।
জানা গিয়েছে, এই দলে পঞ্চাশোর্ধ্ব অনেকেই রয়েছেন । আর এই দলের একটি লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হল, 37 জনের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই উদ্যোগপতি ব্যবসায়ী । জীবনের এই প্রথমবার সমতল থেকে এত হাজার ফিট উপরে তুষার ঢাকা মাউন্ট এভারেস্টের বেস ক্যাম্প আরোহণ একাধারে যেমন উৎসাহী করেছে তাঁদের, তেমনই প্রাথমিকভাবে কিছুটা হলে উদ্বেগও কাজ করছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন । যদিও প্রাথমিক ভয় কাটিয়ে ইতিমধ্যেই ওয়েট ট্রেনিং থেকে শুরু করে শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রশিক্ষণ শুরু করেছেন সকলে । অর্থ এবং মনের প্রস্তুতি থাকলেও এই দলের অনেকেরই হয়ত গোড়া থেকে একজন পেশাদার পর্বতারোহীর মত শারীরিক প্রস্তুতি নেই ।
টাই কলকাতার সহ-সভাপতি কমল আগরওয়ালের কথায়, তিনি জীবনে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবসা করছেন । আর ব্যবসা করতে গিয়ে অনেক চড়াই-উতরাই দেখেছেন তিনি ৷ তাই আর কিছুতেই এখন ভয় লাগে না তাঁর । তবে একথা ঠিক যে আগামী মে মাসে যে অভিজ্ঞতা হবে, তা এর আগে কখনও হয়নি বলে তিনি জানান । কমল বলেন, সারাজীবন তো ব্যবসা করলাম । নিজের আরামদায়ক বাড়ি এবং অফিসের আবর্তের থেকে বেরিয়ে জীবনে একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করার খুব ইচ্ছে হল ৷ তাই আমিও সত্যরূপের দলে সামিল হলাম । আমি মানসিকভাবে খুবই শক্ত । এই পর্বত অভিযানের জন্য গত দুই মাস ধরে লাগাতার আমরা নানারকম শারীরিক চর্চার মধ্যে রয়েছি । ওয়েট ট্রেনিং থেকে শুরু করে যাবতীয় প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ চলছে । আমাদের সংস্থা থেকে আমি ছাড়াও আরও নয়জন যাচ্ছেন ।"
বেঙ্গালুরু শহরের 12 বছরের ক্ষুদে অভিরামী দাসও তাঁর বাবা মায়ের সঙ্গে যাচ্ছে এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে । অভিরামীর বাবা দীপাঞ্জন দাস একজন পর্বতারোহী ৷ তিনি বলেন, "আমার মেয়ে সাত বছর বয়স থেকে ট্রেকিং করছে । অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প থেকে শুরু করে একাধিক ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে অভিরামীর । তবে সে এর আগে যা যা পর্বত অভিযান করেছেন, তুলনায় এভারেস্ট বেস ক্যাম্প এক্সপিডিশন নিঃসন্দেহে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং।"
আরও পড়ুন: অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াই এভারেস্ট চূড়ায় বঙ্গকন্যা পিয়ালী