কলকাতা, 9 জানুয়ারি: সড়ক পরিবহণকে উন্নত করতে নয়া পদক্ষেপ ৷ দেশে এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গে চালু হল স্পিড ম্যানেজমেন্ট নীতি ৷ রাজ্য সরকারের পরিবহণ দফতরের তথ্য অনুসারে, পথ দুর্ঘটনা ও পথ দুর্ঘটনায় প্রাণহানির নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে একাদশ স্থানে রয়েছে । তাই রাজ্যকে পথ দুর্ঘটনা মুক্ত করতে এবং পথচারী ও চালকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে স্পিড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে একটি নীতি বা পলিসি প্রণয়ন করল পরিবহণ দফতর ।
বাংলাই প্রথম রাজ্য যেখানে জনস্বার্থে স্পিড ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে এই জাতীয় বৈজ্ঞানিক পন্থা বা নীতি অবলম্বন করা হল । যাত্রী ও চালক উভয়ের জন্যই নিরাপদ করে তুলতে হবে সড়ক ৷ সেই লক্ষ্যে পৌঁছতেই 'সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ' ক্যাম্পেনের অন্তর্গত গাড়ির স্পিডকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় এবং স্পিড সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় বিস্তারিত তথ্য নিয়ে সমীক্ষা করতে এবং অনবরত সুরাহার পথ খুঁজতেই রাজ্য পরিবহণ দফতরের এহেন এক নয়া উদোগ ।
পরিবহণ দফতরের দাবি, বাংলা প্রথম রাজ্য যেখানে এই ধরনের পলিসি ইন্টারভেনশন এবং রোড ম্যাপ নিয়ে এত বৈজ্ঞানিক পন্থায় কাজ হবে । ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বের 40 থেকে 50 শতাংশ চালক বেঁধে দেওয়া স্পিড লিমিটের মধ্যে থেকে গাড়ি চালান না । এতো গেল বিশ্বের কথা ৷ মিনিস্ট্রি অফ রোড ট্রান্সপোর্ট এন্ড হাইওয়ের ট্রান্সপোর্ট রিসার্চ উইং-এর পক্ষ থেকে করা একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে , 2022 সালে প্রায় 71 শতাংশ ফ্যাটাল পথ দুর্ঘটনা অতিরিক্ত বেশি গতি বেগে গাড়ি চালানোর জন্য ঘটেছে । আমাদের রাজ্যে 4080 পথ দুর্ঘটনা অতিরিক্ত গতিবেগে গাড়ি চালানোর জন্য হয়েছে । অর্থাৎ 32.27 শতাংশ রোড ক্রস ফেটালিট ।
আজ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী, আইজিপি ট্রাফিক ডিপি সিং, পরিবহণ সচিব সৌমিত্র মোহন-সহ আরও অনেকেই । অনুষ্ঠানে 'স্পিড ম্যানেজমেন্ট ফর এনহান্সিং রোড সেফটি ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল: পলিসি ইন্টারভেনশনস অ্যান্ড রোড ম্যাপ' নামাঙ্কিত একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয় । পরিবহণমন্ত্রী জানান, সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ ও ঝুঁকিহীন করার জন্যেই এই পদক্ষেপ । এই নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইআইটি খড়গপুর ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন দফতর যেমন রাজ্য ও কলকাতা পুলিশ, গ্রামোন্নয়ন ও নগর উন্নয়ন দফতর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর ও শিক্ষা দফতর যৌথভাবে কাজ করবে ।
স্নেহাশিস চক্রবর্তী আরও জানান, দেখা গিয়েছে যে বাংলায় পথ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ওভার স্পিডিং অন্ততম প্রধান কারণ । এই বিষয়কে মাথায় রেখেই গাড়ি চালানোর একাধিক নিয়ম প্রণয়ন করা হয়েছে যেমন সেফ সিস্টেম এপ্রোচ । এই সিস্টেম বা ব্যবস্থার মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ পরিকাঠামো নির্মাণ, আপৎকালীন ব্যবস্থার উন্নয়ন, এবং সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ট্রাফিক নিয়মাবলী বিষয় ধারণা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া করা হয়েছে । সমগ্র বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের রোড সেফটি কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয়েছে । এর পাশাপাশি স্পিড ম্যানেজমেন্ট নীতির আওতায় জাতীয় সড়ক, রাজ্য সড়ক, ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের ব্যবস্থাভুক্ত সড়ক ও নগর উন্নয়ন দফতরের অধীনস্থ সড়কগুলোর সেফ স্পিড অডিটের বন্দোবস্ত করা হয়েছে ।
মন্ত্রীর কথায়, সেফ স্পিড অডিটের মধ্যে রোড ইঞ্জিনিয়ারিং, ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং হিউম্যান ইনজুরি টলারেন্স ক্রাইটেরিয়া মত বিষয়গুলিকে ঢোকানো হয়েছে । এছাড়াও ইলেকট্রনিকইনফোর্সমেন্ট উপর জোর দেওয়া হয়েছে । এমনকা সড়ক দুর্ঘটনার হার বেশি এমন কিছু রাস্তাকে সেফ করিডোর প্রকল্পের আওতায় এনে রাস্তাগুলোকে ঝুঁকিহীন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে ।
আরও পড়ুন: