কলকাতা, 31 অগাস্ট: হাসপাতালে তৈরি করা হয়েছে প্লাজ়মা ব্যাঙ্ক । আর, সুস্থ হয়ে ওঠা বেসরকারি এই হাসপাতালের তিনটি ইউনিটের প্রায় 150 জন কর্মীকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে COVID ওয়ারিয়র্স ক্লাব । ক্লাবের এই 150 জনের মতো সদস্যের তথ্য নিয়ে ডিরেক্টরিও তৈরি করা হয়েছে । কোনও কোরোনা রোগীর চিকিৎসায় প্লাজ়মা থেরাপির প্রয়োজন দেখা দিলে, ওই রোগীর জন্য এই ক্লাবের কোন সদস্য প্লাজ়মা দান করতে পারবেন, তা এই ডিরেক্টরির তথ্য দেখে স্থির করা হবে । এর পরে ওই রোগীর জন্য এই ক্লাবের ওই সদস্য প্লাজ়মা দান করবেন । বেসরকারি চিকিৎসা পরিষেবা ক্ষেত্রে এই ধরনের প্রয়াস পূর্ব ভারতে এই প্রথম বলে বেসরকারি ওই হাসপাতাল গোষ্ঠীর তরফে জানানো হয়েছে ।
কোরোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্লাজ়মা থেরাপির প্রয়োগ করা হচ্ছে । সুস্থ হয়ে ওঠা কোরোনা রোগীদের কাছ থেকে এই প্লাজ়মা সংগ্রহ করা হচ্ছে । কোরোনা রোগীদের চিকিৎসায় কলকাতায় প্লাজ়মা থেরাপির ট্রায়াল চলছে ইনফেকশাস ডিজ়িজ়েস অ্যান্ড বেলেঘাটা জেনেরাল (ID&BG) হাসপাতালে । সম্প্রতি এই ট্রায়ালের অন্তর্বর্তী রিপোর্টে জানানো হয়েছে, কোরোনা রোগীদের সুস্থ করে তোলার ক্ষেত্রে প্লাজ়মা থেরাপির প্রয়োগ আশাপ্রদ । ID&BG হাসপাতালের এই ট্রায়ালের জন্য প্লাজ়মা সংগ্রহ করা হচ্ছে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে । এই কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কোরোনা রোগীদের চিকিৎসায়-ও এবার প্লাজ়মা থেরাপির প্রয়োগ করা হবে । এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে বেসরকারি একটি হাসপাতাল গোষ্ঠীর কলকাতার তিনটি ইউনিটের সুস্থ হয়ে ওঠা প্রায় 150 জন কোরোনায় আক্রান্ত কর্মীকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে COVID ওয়ারিয়র্স ক্লাব । এই 150 জন কর্মী বেসরকারি ওই হাসপাতাল গোষ্ঠীর ঢাকুরিয়া, সল্টলেক এবং মুকুন্দপুরের ইউনিটে কর্মরত । তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন স্তরের কর্মীর পাশাপাশি নার্স এবং চিকিৎসকও রয়েছেন বলে জানা গেছে ।
কোরোনার চিকিৎসায় প্লাজ়মা থেরাপির আলোচনা অনেকদিন ধরেই চলছে । দেখা যাচ্ছে, যে সমস্ত কোরোনা রোগীর ক্ষেত্রে রুটিন কিংবা স্ট্যান্ডার্ড ট্রিটমেন্ট প্রক্রিয়ায় সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না, তাঁদের ক্ষেত্রে প্লাজ়মা থেরাপি অনেকটা সাড়া দিচ্ছে । এ কথা জানিয়ে বেসরকারি এই হাসপাতাল গোষ্ঠীর গ্রুপ CEO রূপক বড়ুয়া বলেন, "প্রাইভেট হেলথকেয়ার সেক্টরে পূর্ব ভারতের মধ্যে এই প্রথম আমাদের হসপিটাল গ্রুপ প্লাজ়মা ব্যাঙ্ক তৈরি করেছে । কলকাতায় আমাদের হাসপাতালের যে তিনটি ইউনিট রয়েছে, এই তিনটি ইউনিট মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রায় 150 জনের মতো স্টাফ কোরোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে সুস্থ হয়ে উঠেছেন । তাঁরা এখন আবার কাজে যোগদান করেছেন । তাঁদেরকে নিয়ে আমরা একটি কোরোনা ওয়ারিয়র্স ক্লাব তৈরি করেছি । এই ক্লাবে প্রায় এই 150 জনের সকলে ভলান্টিয়ার হয়েছেন । তাঁরা সকলে প্লাজ়মা দান করতে ইচ্ছুক ।"
রূপক বড়ুয়া জানান, ইতিমধ্যেই আমরা প্লাজ়মা থেরাপি শুরু করেছি । সরকারি-বেসরকারি অন্য যে কোনও হাসপাতালের যে সব কোরোনা রোগীর চিকিৎসা চলছে, তাঁদের কারও ক্ষেত্রে যদি প্লাজ়মার প্রয়োজন হয়, তা হলে আমাদের যে কল সেন্টার রয়েছে, আমাদের সেই 24X7 সেন্ট্রাল হেল্পলাইন নম্বর (66800000)-এ কোরোনা রোগীর প্লাজ়মা থেরাপির জন্য ফোন করা হলে, কোরোনা রোগীর প্লাজ়মা থেরাপির জন্য আমরা প্লাজ়মা দিয়ে সাহায্য করতে পারব ।"
সাধারণ মানুষকে যাতে সাহায্য করা যায়, তার জন্য এই প্রয়াস বলে বেসরকারি এই হাসপাতাল গোষ্ঠীর তরফে জানানো হয়েছে । আর ব্লাড ডিরেক্টরি সম্পর্কে তিনি জানান, কোনও কোরোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য যদি প্লাজ়মা থেরাপির প্রয়োজন দেখা দেয়, তা হলে ওই রোগীর ব্লাড গ্রুপের সঙ্গে এই ডিরেক্টরিতে থাকা সদস্যদের তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে, এই COVID ওয়ারিয়র্স ক্লাবের কোন সদস্য ওই কোরোনা রোগীর জন্য প্লাজ়মা দান করতে পারবেন । শুধুমাত্র এটাই নয় । বেসরকারি এই হাসপাতাল গোষ্ঠীর প্লাজ়মা ব্যাঙ্কেও সংরক্ষিত থাকবে প্লাজ়মা । সরকারি বা বেসরকারি অন্য যে কোনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোনও কোরোনা রোগীর ক্ষেত্রে প্লাজ়মা থেরাপির প্রয়োজন দেখা দিলে, ওই রোগীর জন্য এই ব্যাঙ্ক থেকে যেমন প্লাজ়মা নেওয়া যাবে, তেমনই এই COVID ওয়ারিয়র্স ক্লাবের সদস্যরাও প্লাজ়মা দান করতে প্রস্তুত রয়েছেন ।
গত মে মাসে বেসরকারি এই হাসপাতাল গোষ্ঠীর অধীন কর্মরত এক নার্স কোরোনায় আক্রান্ত হন । সুস্থ হওয়ার পরে তিনি আবার কাজে যোগ দিয়েছেন । এই নার্স বলেন, "আমরা জানতে পেরেছি আমাদের এখানে প্লাজ়মা দান করার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে । আমরা আন্তরিকভাবে প্লাজ়মা দান করতে ইচ্ছুক । যখন প্রয়োজন হবে তখন আমি প্লাজ়মা দান করতে রাজি আছি । এটা খুব ভালো উদ্যোগ ।" গত জুলাই মাসে কোরোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এই হাসপাতাল গোষ্ঠীর একটি হাসপাতালের আরও এক কর্মী । সুস্থ হওয়ার পর তিনিও আবার ডিউটিতে জয়েন করেছেন । তিনি বলেন, "আমরা প্লাজ়মা দান করলে অনেক কোরোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন । এই কারণে আমরা সবাই প্লাজ়মা দান করতে ইচ্ছুক । যখনই প্লাজ়মা দান করতে বলা হবে, আমরা তখনই প্লাজ়মা দান করতে পারব । এটা খুব ভাল উদ্যোগ । আমাদের দিয়ে যদি কোনও কোরোনা রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন, তাহলে আমরা নিজেদের স্যাটিস্ফায়েড মনে করব ।" কোরোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে সুস্থ হয়ে ওঠা এখানকার অন্য এক কর্মী বলেন, "প্লাজ়মা দানের এই বিষয়টি খুব ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । আমরা প্লাজ়মা দান করতে রাজি হয়েছি । আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যে দিন প্লাজ়মা দান করার কথা বলা হবে, সেদিন আমরা প্লাজ়মা দান করব ।"
কোরোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য এই প্লাজ়মা থেরাপি আসলে কী, কীভাবে সাহায্য করতে পারে? বেসরকারি এই হাসপাতাল গোষ্ঠীর ঢাকুরিয়ায় অবস্থিত হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চিকিৎসক ঋতম চক্রবর্তী বলেন, "অনেকদিন আগে প্লাজ়মা থেরাপির উৎপত্তি হয়েছে । 1890-এ ফ্লু-এর সময় প্রথম এর ব্যবহার হয় । মানুষের শরীরে যখন কোনও ভাইরাস বা প্যাথোজেন প্রবেশ করে তখন মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে । এই অ্যান্টিবডিগুলি হল আমাদের শরীরের একটা প্রোটেকশন । যাতে দ্বিতীয় বার একই ভাইরাস বা প্যাথোজেন শরীরে প্রবেশ করলে তাকে এই অ্যান্টিবডি ধ্বংস করে দেবে । অর্থাৎ, যিনি একবার সংক্রমিত হয়েছেন, তার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে ।" তিনি বলেন, "প্লাজ়মার মধ্যে থাকে এই অ্যান্টিবডি । তাই যদি কারও প্লাজ়মা আমরা সংগ্রহ করতে পারি, তা হলে সেই প্লাজ়মা যিনি অসুস্থ তাঁকে যদি দেওয়া হয়, তা হলে এই অ্যান্টিবডি তাঁর শরীরে চলে যাবে ।" শরীরে প্রবেশ করে কী করবে এই প্লাজ়মা? চিকিৎসক ঋতম চক্রবর্তী বলেন, "এটা রেডি টু ইউজ়ের মতো । শরীরে যে ভাইরাস ঘুরে বেড়াচ্ছে এক্ষেত্রে কোরোনার ভাইরাস, তাকে নিউট্রালাইজ়ড করবে । এর ফলে রোগীর শরীরে যত সংখ্যক কোরোনার ভাইরাস রয়েছে, সেগুলি কমবে । যে মুহূর্তে কোরোনার ভাইরাসের সংখ্যা কমবে, তখন আমাদের শরীরের যে ন্যাচারাল ইমিউনিটি, যে প্রোটেকশন মেকানিজ়ম রয়েছে, তার পক্ষে বাকি ভাইরাসগুলিকে মেরে ফেলার কাজ আরও সহজ হবে । এই ভাইরাসগুলি যদি মারা পড়ে তাহলে শরীরের যে হিলিং মেকানিজ়ম, অর্থাৎ, শরীর তো নিজেকে নিজে সারিয়ে তোলে, সেই মেকানিজ়ম আবার চালু হয়ে যাবে । এর ফলে যতগুলি সেল ধ্বংস হয়েছিল, তার থেকে বেশি সেল তৈরি হতে থাকবে ।"
এই চিকিৎসক আরও বলেন, "এটা বলা যতটা সহজ, করা ততটাই কঠিন । তাই আগে জানতে হবে, সংশ্লিষ্ট রোগীর সত্যিই কোরোনা হয়েছিল কি না । এর পরে জানতে হবে, এই রোগীর শরীরে এখন আর লাইট ভাইরাসগুলি ঘুরছে কি না । কারণ, তাঁর প্লাজ়মা নিয়ে অন্য জনকে দিচ্ছেন, যদি এর সঙ্গে কিছু ভাইরাসও দিয়ে দেন, তাহলে মহা মুশকিল ।" কোনও কোরোনা রোগীকে প্লাজ়মা তো দেওয়া হবে, কিন্তু, সংগৃহীত এই প্লাজ়মার মধ্যে কি যথেষ্ট সংখ্যক অ্যান্টিবডি রয়েছে? প্লাজ়মার মধ্যে যথেষ্ট সংখ্যক অ্যান্টিবডি রয়েছে কি না, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কথা জানিয়ে বেসরকারি ওই হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের প্রধান বলেন, "সংগৃহীত প্লাজ়মার মধ্যে থাকা এই অ্যান্টিবডিগুলি যে কোরোনা রোগীকে দেওয়া হবে, এই অ্যান্টিবডিগুলি তাঁর শরীরে থাকা ভাইরাসগুলিকে নিউট্রালাইজ়ড করবে । এই কারণে জানতে, যাঁর প্লাজ়মা নেওয়া হচ্ছে তাঁর অন্য কোনও রোগ, যেগুলি রক্তের মাধ্যমে একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে যেতে পারে, সেই ধরনের কোনও রোগ রয়েছে কি না । সর্বোপরি জানতে হবে, যদি প্লাজ়মা দান করেন, তাহলে দাতার শরীরে বিরূপ কোনও প্রতিক্রিয়া হবে কি না । এ সবের উপর ভিত্তি করে প্লাজ়মা সংগ্রহের জন্য ক্রাইটেরিয়া তৈরি হয়েছে ।"
এ দেশে প্লাজ়মা থেরাপির জন্য কীভাবে প্লাজ়মা দেওয়া হবে, কীভাবে প্লাজ়মা নেওয়া হবে, তার জন্য গাইডলাইন তৈরি করেছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (ICMR) । পরবর্তীকালে ভারত সরকার এবং ড্রাগ কন্ট্রোল জেনেরাল অফ ইন্ডিয়া নিজেদের মতো করে পৃথকভাবে পাবলিশড করেছে । এই কথা জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, "কোনও কোরোনা রোগী যখন নিরাময় হয়ে যাবেন, তাঁর যখন উপসর্গ চলে যাবে, তখন থেকে 28 দিন পরে প্লাজ়মা দান করতে তিনি সক্ষম । যদি এমন হয়, 28 দিনের আগে বিশেষ কারণে তাঁকে প্লাজ়মা দিতে হবে, তা হলে 14 থেকে 28 দিনের মধ্যে যদি তাঁকে প্লাজ়মা দান করতে হয়, তাহলে 24 ঘণ্টা অন্তর পর পর দুই বার RT-PCR-এ টেস্ট করে কোরোনা নেগেটিভ হতে হবে । কিন্তু 14 দিনের আগে কোনও ভাবে তিনি প্লাজ়মা দিন করতে পারবেন না ।"
ঢাকুরিয়ার বেসরকারি ওই হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চিকিৎসক ঋতম চক্রবর্তী বলেন, "প্লাজ়মা দাতার শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টিবডি রয়েছে কি না, সেটা জানার জন্য অ্যান্টিবডি টাইটেল করাতে হয়। দুর্ভাগ্যের বিষয় ভারতের কোথাও এই অ্যান্টিবডি টাইটেল করা যায় না । বলা হয়েছে, পুনেতে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে এই ব্যবস্থা রয়েছে । কিন্তু তাদের পক্ষে গোটা ভারতের সব প্লাজ়মা দাতার অ্যান্টিবডি টাইটেল করা সম্ভব নয় । সেই জন্য সরকার একটি করে ভায়াল রেখে দেওয়ার কথা বলেছে যাতে ভবিষ্যতে সম্ভব হলে পুনে থেকে অ্যান্টিবডি টাইটেল করিয়ে দেওয়া হবে । অ্যান্টিবডি টাইটেলের পরিবর্তে যেটা করতে হবে, অ্যান্টিবডি রয়েছে কি না, সেটা দেখতে হবে । এই অ্যান্টিবডিগুলির ক্লাস হচ্ছে IgG । অর্থাৎ, একটি টেস্ট করতে হবে, যেখানে দেখতে হবে, দাতার প্লাজ়মায় IgG Anti SARS-COV-2 অ্যান্টিবডি রয়েছে কি না ।"
প্লাজ়মার প্রধান অংশ হচ্ছে প্রোটিন । অর্থাৎ, কারও শরীর থেকে অনেকটা প্লাজ়মা নেওয়া হল মানে অনেকটা প্রোটিন নেওয়া হল । ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী, একজন সুস্থ মানুষ 15 দিন অন্তর প্লাজ়মা দান করতে পারেন । একবার দান করার সময় সর্বাধিক 500 মিলি প্লাজ়মা দান করতে পারেন । সারা মাসে সর্বাধিক 1 লিটার প্লাজ়মা দান করতে পারেন । কিন্তু, এই প্লাজ়মা দাতার শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে কি না, তা দেখে নিতে হবে । দাতার শরীর থেকে প্লাজ়মা নেওয়ার পরে যাতে কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া না হয়, সেটা দেখতে হবে । এ কথা জানিয়ে চিকিৎসক ঋতম চক্রবর্তী বলেন, "এই জন্য আগে প্লাজ়মা দাতার প্রোটিনের পরিমাণ দেখে নেওয়া হয় । শুধুমাত্র তাই নয় । নরমাল ব্লাড ডোনেশনের বেশ কিছু ক্রাইটেরিয়া পূরণ করতে হবে । নরমাল হিমোগ্লোবিন অর্থাৎ, সাড়ে 12-র উপর হিমোগ্লোবিন হতে হবে । প্লেটলেটের পরিমাণ অন্তত দেড় লাখ হতে হবে । WBC কাউন্ট নরমাল হতে হবে । যিনি প্লাজ়মা দান করবেন, এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, ম্যালেরিয়া এবং সিফিলিস রোগ তাঁর মধ্যে থাকবে না, এটা আমাদের যাচাই করে নিতে হবে ।" তিনি বলেন, "18 থেকে 65 বছর বয়স এবং অন্তত 55 কেজি ওজন এমন পুরুষ এবং যে সব মহিলা মা হননি, তাঁরা প্লাজ়মা দান করতে পারবেন । অ্যাকিউট লাং ইনজিওরি যাতে না হয় তার জন্য মহিলাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের ক্রাইটেরিয়া রাখা হয়েছে । এত সব ক্রাইটেরিয়া মেনটেন করার পরেও দেখতে হবে, যিনি প্লাজ়মা দান করবেন তাঁর দুই হাতে ভাল ভেইন রয়েছে কি না ।" এই চিকিৎসক বলেন, "কোনও দাতার কাছ থেকে সর্বাধিক ৫০০ মিলি প্লাজ়মা আমরা নিতে পারি। তবে সকলের কাছ থেকে ৫০০ মিলি প্লাজ়মাও নেওয়া যায় না। অনেকের কাছ থেকে 200 মিলি প্লাজ়মা নেওয়া যায় ।"
সংগৃহীত এই প্লাজ়মা দিতে হবে কোনও কোরোনারোগীকে, কোন রোগীর ক্ষেত্রে দেওয়া যাবে? ঢাকুরিয়ায় অবস্থিত বেসরকারি ওই হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চিকিৎসক ঋতম চক্রবর্তী বলেন, "কোন রোগীদের প্লাজ়মা দেওয়া যাবে তার জন্য ক্রাইটেরিয়া রয়েছে। প্রাইমারি থেরাপিতে যাঁরা সাড়া দিচ্ছেন না, স্টেরয়েড দেওয়ার পরেও যাঁরা সাড়া দিচ্ছেন না, ভেন্টিলেশনের মাত্রা দিনকে দিন বাড়ানো হচ্ছে, এই ধরনের ক্ষেত্রে প্লাজ়মা থেরাপি ব্যবহার করা যেতে পারে।" তিনি বলেন, "এই প্লাজ়মা থেরাপি এক্সপেরিমেন্টাল । অর্থাৎ, এটা এখনও প্রমাণিত হয়নি যে প্লাজ়মা ব্যবহার করলে কাজ হয়। কিন্তু, যখন প্যানডেমিক হয় তখন সুষ্ঠু একটা স্টাডি করা খুব মুশকিল হয়ে যায়। কারণ, স্টাডি করা সময় সাপেক্ষ বিষয়। যদি সমস্ত পদ্ধতি মেনে স্টাডি করতে হয় তা হলে 6 মাস থেকে 1 বছর লাগবে ফলাফল পেতে। প্যানডেমিকে এত সময় পাওয়া যায় না। তাই কিছু কিছু বিষয় মধ্যবর্তী ফলাফলের উপর ভিত্তি করে চালু করতে হয়। কোরোনারোগীদের চিকিৎসায় প্লাজ়মা থেরাপিও তেমনই একটি বিষয় ।"