কলকাতা, 1 জানুয়ারি: প্রতিষ্ঠা দিবসে বিস্ফোরক রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম । দলের একাংশের দুর্নীতি নিয়েই আজ মুখ খুললেন তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক ফিরহাদ । এ দিন একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পুরমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ টাকা নিয়ে চাকরি দিয়েছেন, চুরি হয়েছে, এটা সত্যি । কিন্তু আমরা সবাই চুরি করিনি । টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার মতো অসত্ কাজ করা আর মায়ের মাংস কেটে খাওয়া একই ব্যাপার !
ঠিক কী বলেছেন ফিরহাদ ?
তিনি বলেন, "নিশ্চিতভাবে তৃণমূল কংগ্রেস একটা সংসার । কিছু মানুষ নিশ্চিত ভাবে অন্যায় করেছে । কিছু মানুষ নিশ্চিত ভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন । তার মানে আমরা সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত নই । হ্যাঁ, আমার বাড়িতেও সিবিআই রেড হয়েছে । অ্যারেস্ট হয়েছে । কিন্তু কোনও মানুষ হাত তুলে বলতে পারবে না ফিরহাদ হাকিম দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত । 25 বছরের কাউন্সিলর কোনও প্রোমোটার, কোনও কন্ট্রাক্টারের কাছ থেকে জীবনে হাত পেতে পয়সা নিয়েছে, কেউ এর একটা প্রমাণ দিলে আমি রেজিগনেশন দেব । কিংবা কোথাও একটা লোক তাঁর ভোট দিতে পারেননি অন্য কেউ দিয়েছে, এখানে হোক বা গার্ডেনরিচে হোক প্রমাণ দিক, আমি রেজিগনেশন দেব ।"
তাঁর অভিযোগ, "আদতে একটা পারসেপশন তৈরি করে দিতে চাইছে মালব্যর দল । লড়াই করতে পারবে না ৷ ওদের কন্যাশ্রী নেই, যুবশ্রী নেই, স্বাস্থ্যসাথী নেই । তাই মানুষের উপকারে আসবে না বলে ব্যক্তিগত অ্যাটাক ।"
এ দিন এখানেই অবশ্য এখানেই থেমে যাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বস্ত সৈনিক । আরও একধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, "যেদিন চাকরি দিয়ে পয়সা নেওয়ার মতো ঘৃণ্য কাজ করব, তার চেয়ে মায়ের মাংস কেটে খাওয়া অনেক ভালো বলে আমি মনে করি । এটা পাপ । আমি চাই আমাদের দলের ছেলেরা চাকরি পাক । চাই বেকার ছেলেরাও চাকরি পাক ।"
তিনি বলেন, "দুর্নীতি সবথেকে নোংরা জিনিস । দুর্নীতি তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় পছন্দ করেন না । তিনি দুর্নীতি হোক চান না । কখনওই তিনি অন্যায় করেননি, তিনি অন্যায় হোক চান না। কোনওদিন অন্যায় করবেন না । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সততার প্রতীক । প্রত্যেকটা তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীকে এটা বিশ্বাস করতে হবে ।"
রাজনৈতিক মহল রাজ্যের মন্ত্রীর এই বক্তব্যে কোথাও দুর্নীতি হয়েছে তা মেনে নেওয়ার একটা প্রয়াস দেখছেন । আর সে কারণেই এ দিন পুরমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর মাতঙ্গিনী মূর্তির পাদদেশে আন্দোলনকারীদের তরফ থেকে ফিরহাদ হাকিমের এই বক্তব্যকে স্বাগত জানানো হয়েছে । তাঁদের তরফ থেকে এই কথা বলা হয়েছে যে, বিলম্ব হলেও বোধোদয় হয়েছে । "আশা করছি, রাজ্যের মন্ত্রীরা যখন বুঝতে পারছেন ভুল হয়েছে, এবার সেই ভুল সংশোধনের চেষ্টা নিশ্চয়ই তাঁরা করবেন ।"
রাজ্যের এই শীর্ষ নেতার বক্তব্যের আবার উলটো সুর শোনা গিয়েছে দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের গলায় ৷ দুর্নীতি যখন হয়েছিল, তখন বাধা দেননি কেন ? আটকাননি কেন ? প্রশ্ন কুণালের । একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, "ববিদা সিনিয়র নেতা, সঠিক কথাই বলেছেন তিনি । কিন্তু দুঃখ একটাই, কয়েকদিন আগে আমি যখন একই কথা বলেছিলাম, তখন বলা হয়েছিল, এটা মন্ত্রিসভার সম্মিলিত সিদ্ধান্ত । কুণাল ঘোষ মন্ত্রিসভার কেউ নন ! পার্থদার কথা যখন বলেছিলাম, তখনও বলা হয়েছিল, মন্ত্রিসভার কালেকটিভ ডিসিশন ।"
কুণাল ঘোষের এই বক্তব্যের পর ফিরহাদ হাকিমের জবাবি কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি । প্রথমে ফিরহাদ হাকিম এবং পরে কুণাল ঘোষের পালটা বক্তব্যে আসলে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরের ঠোকাঠুকি আরও একবার প্রকাশ্যে এসে পড়ছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের ।
আরও পড়ুন:
অভিষেক পিছিয়ে যাবেন না, প্রতিষ্ঠা দিবসে সুব্রতের বক্তব্যে বিভাজন দেখছেন কুণাল
তৃণমূলের 27তম প্রতিষ্ঠা দিবস, দলীয় কর্মীদের শুভেচ্ছা বার্তা মমতা-অভিষেকের
সব সরকারি অনুষ্ঠানের শুরুতে 'রাজ্য সঙ্গীত', শেষে 'জাতীয় সঙ্গীত' গাওয়া বাধ্যতামূলক