কলকাতা, 14 জুলাই : 2008 সাল থেকে শিক্ষা নিয়ে নন্দরাম মার্কেটে তৈরি হয়েছিল এক লাখ লিটারের জলের ট্যাঙ্ক । তার সঙ্গে তৈরি করা হয়েছিল ভূগর্ভস্থ রিজা়র্ভার । এছাড়াও, ছিল নন্দরাম মার্কেট ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট ওয়েলফেয়ার কমিটি । আগুন নেভাতে প্রথমে তৎপর হয় এই কমিটি । এর অনেক পরে ঘটনাস্থানে যায় দমকলবাহিনী । নন্দরাম মার্কেটে আগুন লাগার প্রসঙ্গে আজ এই তথ্যই জানালেন সেখানের ব্যবসায়ীরা ।
2008 সালের বিভীষিকার কথা ফের একবার মনে করিয়ে দিল গতকালের নন্দরাম মার্কেটের আগুন । 10 বছর আগে নন্দরাম মার্কেট আগুন লেগে পুড়ে গেছিল প্রায় 4 হাজার দোকান । প্রায় 100 ঘণ্টা ধরে জ্বলে ছিল এই মার্কেট । গতকাল আগুন ব্যবসায়ীদের মনে করিয়ে দেয় 2008-র সেই অগ্নিকাণ্ডের আতঙ্ক । ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সেইসময় এই মার্কেটে কোনও ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম ছিল না । তাই অসহায়ভাবেই নিজেদের দোকান পুড়তে দেখেছিলেন তাঁরা । বর্তমানে নন্দরাম মার্কেটের ছবিটা অনেকটাই পালটে গেছে । এখন মার্কেটে রয়েছে যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা । ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গতকাল আগুন লাগার পরই মার্কেটে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সাহায্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছেন ব্যবসায়ীরা । ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা না থাকলে 2008-এর মতোই আগুনে পুড়ে যেত সমস্ত নন্দরাম মার্কেট ।
2008-এর অগ্নিকাণ্ডের পর প্রায় 23 দিন বন্ধ ছিল এই বাজারটি । এরপর তাদের আন্দোলনে সাড়া দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগী হয়ে এই বাজারটি চালু করেন । কিন্তু, 2008-এর আগুন নন্দরাম মার্কেটের ব্যবসায়ীদের অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে গেছে । সম্পূর্ণ মার্কেটে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা করেছেন ব্যবসায়ীরা । মার্কেটের ছাদের উপর তৈরি করা হয়েছিল এক লাখ লিটারের জলের ট্যাঙ্ক। তৈরি করা হয়েছিল ভূগর্ভস্থ রিজা়র্ভার । সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীরা নিজেদের উদ্যোগেই তৈরি করেছিলেন নন্দরাম মার্কেট ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট ওয়েলফেয়ার কমিটি । এখানে শুধু মার্কেটের ব্যবসায়ীরা যুক্ত তাই নয়, নিজেদের উদ্যোগে একটি ডিজাস্টার টিম গঠন করেছিলেন তাঁরা । যারা নিয়মিত আগুন নেভাবার ড্রিল করে । গতকাল আগুন লাগার পরই ড্রিল গ্রুপের আগুন নেভাতে তৎপর হয় । এর অনেকক্ষণ পর দমকল আসে । দমকলের ভূমিকা নিয়েও অনেক ব্যবসায়ী অসন্তুষ্ট । তাঁদের অভিযোগ, "দমকল ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও সঠিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিল না । দমকল মন্ত্রী উপস্থিত হতে দমকল কর্মীরা বেশি উদ্যোগী হয়ে আগুন নেভায় । ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের নিজেদের ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের ছেলেরা ঝাপিয়ে পড়ে আগুন নেভাতে । আমরা নিজেদের উদ্যোগে আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি।"
আজ রবিবার । তাই বন্ধ নন্দরাম মার্কেট । ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন নন্দরাম মার্কেটের বাকি সব দোকানেই অক্ষত । তাই অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান দুটি বাদ দিয়ে প্রায় সবকটি দোকান খোলা হবে আগামীকাল । নন্দরাম মার্কেট 1050টি দোকান রয়েছে । যদিও এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে নন্দরাম মার্কেটে । আগামীকাল CESC-র সঙ্গে বৈঠকে বসবে নন্দরাম মার্কেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্যরা । ক্ষতিগ্রস্ত দোকান দুটি বাদ দিয়ে বাকি দোকানগুলি দ্রুত চালু করার আবেদন জানাবেন ব্যবসায়ীরা ।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দমকল বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ সম্পূর্ণভাবে তদন্ত করে ফিট সার্টিফিকেট দিলেই দোকান চালু করা হবে । তাদের কথায়, "আমরা দ্রুত পরীক্ষা করে ফিট সার্টিফিকেট দিয়ে এই মার্কেট চালু করার আবেদন জানাব ।" গতকাল আট তলায় নরেশ গুপ্তা শাড়ির দোকানে আগুন লাগে । তবে কী কারণে আগুন লেগেছে তা এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি । এই মার্কেটের অদূরেই একটি ভূগর্ভস্থ রিজার্ভার রয়েছে দমকলের । বড়বাজার অঞ্চলের কোথাও আগুন লাগলে রিজার্ভার থেকে জল নিয়ে আগুন নেভাবার জন্যই এই ভূগর্ভস্থ রিজার্ভার তৈরি করা হয়েছিল ।
কয়েকজন ব্যবসায়ীর অভিযোগ, গতকাল সেই রিজার্ভার থেকে ঠিকঠাক জল সরবরাহ করতে পারিনি দমকল। নন্দরাম মার্কেট এর উপরে যে বিশাল জলের ট্যাঙ্ক তৈরি করা হয়েছে সেই জল দিয়ে আগুন সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে, বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।