কলকাতা, 5 মে : রাজ্যের বিপর্যস্ত কৃষকদের কথা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতে চায় সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি । সেই উদ্দেশ্যে তাঁর সঙ্গে দেখা করার সময় চেয়ে আবেদন করল সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি । কৃষকদের দুরবস্থার কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিও দিল তারা ।
লকডাউন পরিস্থিতিতে রাজ্যের কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল খুবই কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন । লকডাউন শুরু হওয়ার পর অন্তত 12 থেকে 15 দিন কৃষিপণ্যের কোনওরকম পরিবহন ব্যবস্থা ছিল না । বিকল্প ব্যবস্থা না করেই গ্রামীণ হাটগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । ফলে কৃষকরা নামমাত্র দামে ফসল বিক্রি করেছেন । অথচ শহর ও গ্রামে সেই ফসলই বিক্রি হয়েছে চার থেকে ছয় গুণ বেশি দামে । চিঠিতে এই সকল বিষয় জানানো হয়েছে ।
জানা গেছে, এর পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে চাষিরা রাস্তায় ফসল ফেলে দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন । এই সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি । সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির কারণে বোরো ধান, সবজি, ফল, ফুল, ভুট্টা, গম, পানচাষ, দুধ সরবরাহ, উদ্যান পালন প্রভৃতি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত কৃষিজীবী মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত । শস্য বিমার আওতায় থাকুক বা না থাকুক এই কৃষি উৎপাদকদের বিশেষত, ভাগচাষিদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দরকার । এই সকল বিষয়ও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে ।
সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির কথায়, বর্তমানে বোরো ধান কাটার কাজ শুরু হয়েছে । কিছু জায়গায় শুরু হতে চলেছে । এই ধান কাটার সঙ্গে একশো দিনের কর্ম নিশ্চয়তা প্রকল্পকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন । রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এবিষয়ে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করা একান্ত প্রয়োজন বলেও জানানো হয়েছে ।
তাদের দাবি, গ্রামীণ শ্রমজীবীরা খাদ্যদ্রব্য না পেয়ে অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন । এঁদের স্বার্থে অবিলম্বে কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্প চালু করতে পঞ্চায়েত দপ্তরের দ্রুত পদক্ষেপ করা জরুরি । পাশাপাশি ভিনরাজ্য থেকে শ্রমিকরা গ্রামে ফিরে আসছেন । এঁদের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের পরিকাঠামো উন্নয়ন করা সম্ভব । গ্রামীণ অর্থনীতি ও কৃষিনির্ভর মানুষের জীবন জীবিকার স্বার্থে এই পদক্ষেপ রাজ্য সরকারকে করতে হবে বলে মন্তব্য করেন কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কার্তিক পাল এবং অমল হালদার । তাঁরা জানিয়েছেন, অন্নদাতা কৃষক ও গ্রামীণ শ্রমজীবীরা যাতে নতুন করে ঋণগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য না হন, সেই জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে । এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ধর্ম নির্বিশেষে ঘৃণা, বিদ্বেষ সরিয়ে ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের কাজে লাগাতে হবে ।
কার্তিক পাল এবং অমল হালদাররা আরও বলেন, "লকডাউনের ফলে এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বোরো ধান, সবজি, ফল, ফুল, ভুট্টা, গম চাষের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের । কৃষকদের ভর্তুকি দিয়ে সার, বীজ, ডিজেল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে । গ্রামে ক্যাম্প করে সরকারি দরে সমস্ত রকম ফসল বিক্রি করতে হবে । ধান কেনায় রাজ্য সরকারকে অতিরিক্ত বোনাস দিতে হবে । কাজ না পাওয়ায় ভর্তুকি বাবদ প্রতিটি জবকার্ডে দশ হাজার টাকা জমা করতে হবে । অবিলম্বে কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্প চালু করতে হবে । ধান কাটাসহ কৃষিকাজকে এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে । রেশনে সমস্ত গ্রামীণ গরিব মানুষকে মাথাপিছু 15 কেজি চাল, গম, ডাল, ভোজ্যতেল সরবরাহ করতে হবে । কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের ট্রেনে করে এরাজ্যে ফিরিয়ে আনতে হবে । প্রত্যেক শ্রমিককে 10 হাজার টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে । কোরোনা মোকাবিলা ও গ্রামীণ চিকিৎসার উন্নতির জন্য জেলা ও ব্লকস্তরে উপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি জেলায় পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে । গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাও চালু রাখাতে হবে ।"