কলকাতা, 9 এপ্রিল : রাজনৈতিক অত্যাচারে ঘরছাড়া হওয়ার ট্রাডিশন চলছেই। আবারও অভিযোগ রাজ্যের শাসকদলের দিকে। অপরাধ, তৃণমূল ছেড়েছিলেন পঞ্চায়েত ভোটের আগে। পঞ্চায়েত ভোট মিটতেই নেমে আসে অত্যাচারের খাঁড়া। তছনছ করে দেওয়া হয় বাড়ি-ঘর। গ্রামছাড়া হতে হয় পরিবারকে। অভিযোগ তেমনই। গতকাল পুরো পরিবার নিয়ে এসেছিলেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরে। নিরাপত্তার দাবিতে। বাপ ঠাকুরদার ভিটেয় ফিরতে চাওয়ার আর্জি নিয়ে।
আতঙ্কের ছাপটা এখনও রয়ে গেছে চোখেমুখে। হাওড়ার বাগনানের বাঙালপুর গ্রামের শেখ একরামুল হকের পরিবারের এখন চেপে বসেছে খুন হয়ে যাওয়ার ভয়। পঞ্চায়েত ভোটের পর অত্যাচার শুরু হয়। যা এখনও থামেনি। একরামুলের আরও অভিযোগ, 11 মার্চ তাঁর 50 বছরের দিদি আনোয়ারা বেগমের ঘরও ভাঙচুর করা হয়েছে।
আনোয়ারা ঘর পেয়ে ছিলেন ইন্দিরা আবাস যোজনায়। অভিযোগ, 11 মার্চ রাত 2টোর সময় একদল দুষ্কৃতী বোমা, লোহার রড, শাবল, বাঁশ, ছুরি, বল্লম, ভোজালি নিয়ে চড়াও হয় তাঁর বাড়িতে। তারপর তাঁকে ব্যাপক মারধর করা হয়। মারের চোটে চারটি দাঁত ভেঙে যায় তাঁর। পরে বাগনান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ কিছুই করেনি। কমিশনে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে আনোয়ারা লিখেছেন, "ঘটনার 6 মাস আগে আমাদের এলাকার পাশের দোকান ঘরকে কেন্দ্র করে ঝামেলা হয়। আমার দাদা এবং ভাইকে ব্যাপক মারধর করা হয়। ভাইয়ের গাড়ি পুকুরে ফেলে দেয়।"
এ ইতিহাস সেই রক্তাক্ত পঞ্চায়েত ভোটের। স্থানীয় নেতাদের কাজকর্মে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগেই তৃণমূল ছেড়েছিলেন একরামুল। অভিযোগ, তারপর থেকেই সুযোগ খুঁজছিল স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা। একটি দোকানকে কেন্দ্র করে ছোটো ঝামেলায় অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রায় 27 জন। ভাঙচুর করা হয় একরামুলের ঘর। তাদের গাড়ি ফেলে দেওয়া হয় পুকুরে। বাগনান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন একরামুল। অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছিলেন, "প্ল্যান করে রড, তরোয়াল, লাঠি, বোমা, পাইপগান নিয়ে আমার বাড়ি আক্রমণ করে। আমায় খুন করবে বলে হুমকি দেয়। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। আমার দিদি তার প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় তাকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়। শেখ বেনো নামে এক ব্যক্তি আমার দিদির হাতে-পায়ে আঘাত করে থেঁতো করে দেয়।" শিউরে ওঠা অভিযোগ। একরামুলের অভিযোগ, এরপরেও তারা ক্ষান্ত হয়নি। ভাঙচুর করা হয় বাড়ি। তারপর থেকেই বাড়িছাড়া।
ঘটনার পর থেকেই পরিবার নিয়ে একরামুল ঘুরে বেড়াচ্ছেন এখানে ওখানে। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ভয়াবহ অত্যাচার সংগঠিত করার পরও গ্রেপ্তার করা হয়নি সবাইকে। দু-একজনকে ধরা হয়েছিল। পরের দিনই জামিন পেয়ে যায়।
লোকসভা নির্বাচনের আগে তাই একরামুল চাইছেন বাপ-ঠাকুরদার ভিটেয় ফিরতে। চাইছেন নিরাপত্তার আশ্বাস। আর নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে। সেই আর্জি নিয়ে একরামুলের পরিবার চলে আসে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরে। অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক সঞ্জয় বসু আশ্বাস দিয়েছেন, উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।