কলকাতা, 28 অগস্ট: বিস্ফোরণে এগিয়ে বাংলা, এমনটাই মনে করেন এনএসজি-র প্রাক্তন কমান্ডো দীপাঞ্জন চক্রবর্তী ৷ উত্তর 24 পরগনার দত্তপুকুরে বিস্ফোরণের পর সোমবার ইটিভি ভারতকে এই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তিনি ৷
দীপাঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যদি সারা ভারতে গত পাঁচ বছরে কত বিস্ফোরণ হয়েছে এবং সেই ঘটনায় কতজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তার সঙ্গে যদি পাঁচ বছরে বাংলার পরিসংখ্যান দেখা যায় নিঃসন্দেহে আমি বলব এগিয়ে বাংলা । আমি গত 35 বছরে একাধিক এজেন্সিতে কাজ করেছি । কিন্তু এখানের অবস্থা দিনের পর দিন খারাপ হয়ে চলেছে ।’’
উল্লেখ্য, রবিবার সকাল প্রায় 8টা নাগাদ বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে উত্তর 24 পরগনার দত্তপুকুরের একটি বাজি কারখানা । এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিস্ফোরণের তীব্রতার জেরে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের দেহ । অনেক ঝলসে যাওয়া দেহ ছিটকে গিয়ে আটকে যায় চিলেকোঠায় । আবার কোনও কোনও দেহ ছিটকে গিয়ে পড়ে প্রায় 150 মিটার দূরে ।
এলাকাবাসীর দাবি, পুলিশ ও প্রশাসনের নাকের ডগায় বছরের পর বছর ধরে চলছিল এই বাজি কারখানা । মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা শামসুল আলি নামে একজনের জমির উপর তৈরি করা হয়েছিল কারখানাটি । যদিও সেটির চালানোর দায়িত্ব ছিল কেরামত আলি নামে একজনের বলে জানা গিয়েছে । সেই মালিকের ছেলেরও মৃত্যু হয়েছে এই ভয়াবহ বিস্ফোরণে । পরে মারা গিয়েছেন কেরামতও । রেহাই পাননি শামসুলও । তিনিও মারা গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে ।
আরও পড়ুন: বিস্ফোরণস্থলে এনআইএ, আইএসএফের ঘাড়েও দোষ চাপালেন পুলিশ সুপার
এনএসজি-র প্রাক্তন কমান্ডো দীপাঞ্জন চক্রবর্তীও এলাকাবাসীর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত ৷ তিনি দত্তপুকুর-সহ আগে যে বিস্ফোরণগুলি বাংলায় হয়েছে, সেগুলি নিয়ে দুষছেন পুলিশ ও প্রশাসনকেই ৷ তিনি বলেন, ‘‘এগরা-নৈহাটি, তারপর দত্তপুকুর এলাকায় এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ী পুলিশ ও প্রশাসন । একশ্রেণীর পুলিশ প্রশাসনের অকর্মণ্যতার জন্য গোটা পুলিশ ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে । যতদিন যাবে পশ্চিমবঙ্গে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনার মতো বিষয় বেড়েই চলবে ।’’
এই ঘটনায় স্থানীয়রা সরাসরি তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে । এই নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘শাসক দলের নেতা-নেত্রীদের হাত ধরে এই সব কাজ করা হচ্ছে । পুলিশ ধরলে তাঁরা নেতাদের বলছে । আর নেতারা পুলিশের থেকে অভিযুক্তদের ছাড়িয়ে নিচ্ছে । ফলে সমাজে একটা নতুন শ্রেণির গুন্ডা বাহিনীর জন্ম হয়েছে ।’’
প্রশ্ন উঠছে, এত বাজি কারখানা কেন হচ্ছে ? এই দীপাঞ্জন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘এই সকল বাজি কারখানা গড়ে ওঠার নেপথ্যে অন্য একটি কারণ হল আর্থিক বিষয় । কারণ, এই প্রকারের কারখানা গড়ে তুলতে গেলে যে সকল সেফটি সিকিউরিটি মেজারমেন্ট নিতে হয়, আর তাতে যে টাকা খরচ হয়, একটি কারখানা চালিয়ে সেই টাকা উঠে আসবে না । ফলে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী সরকারি নিয়ম কানুন না মেনেই দিনের পর দিন ধরে এই সকল বাজি কারখানা অবৈধভাবে চালিয়ে যাচ্ছে ।’’
এদিকে দত্তপুকুর বিস্ফোরণের তদন্তে সোমবার ঘটনাস্থলে যান রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সিদ্ধিনাথ গুপ্তা, ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ) আকাশ মাঘারিয়া ও বারাসাত পুলিশ জেলার সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় । পুলিশ সুপার জানান, এই ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । রমজান আলি নামে একজনকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ । এই রমজান আলি আইএসএফ-এর বুথ লেভেলের নেতা । তিনি পলাতক । শ্রমিকরা বাইরে থেকে এসে রমজানের বাড়িতেই থাকতেন । তাঁর সন্ধান চলছে ৷
আরও পড়ুন: 15 দিন আগেই হয় গৃহপ্রবেশ, শখের বাড়ি আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত