কলকাতা, 10 সেপ্টেম্বর : ইরা বসু নামটা রাজ্যের বাসিন্দারা আগে না কেউ জানতেন, না কেউ শুনেছেন ৷ আর গত 24 ঘণ্টার মধ্যেই এই নামটি রাজ্যের প্রায় অধিকাংশ মানুষের জানা এবং চেনা হয়ে গিয়েছে ৷ তিনি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শ্যালিকা ইরা বসু ৷ অর্থাৎ, মীরা ভট্টাচার্যের বোন ৷ তিনি গত দু’বছর ধরে ডানলপ ব্রিজের কাছে রাস্তায় ভবঘুরের জীবন কাটাচ্ছিলেন ৷ আজ সকালে সংবাদ মাধ্যমে খবরটি প্রকাশ হতেই হইচই পড়ে যায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় চলতে থাকে চর্চা ৷ তারপরেই নড়চড়ে বসে প্রশাসন ৷ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে ৷ এখন তাঁর ঠিকানা সরকারি মানসিক হাসপাতাল লুম্বিনী পার্ক ৷
জানা গিয়েছে, ইরা বসু খড়দার প্রিয়নাথ উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষিকা ছিলেন ৷ 2009 সালে চাকরি থেকে অবসর নেন তিনি ৷ তার পর লিচুবাগানের বাড়িতে থাকতেন ৷ কিন্তু, হঠাৎ সেখান থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যান ৷ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি ৷ একসময় শিয়ালদা স্টেশনেও নাকি থেকেছেন ৷ সম্প্রতি গত দু’বছর ধরে ইরা বসু ডানলপে ফুটপাথে থাকতে শুরু করেছিলেন ৷ সেখানকার চায়ের দোকানে এবং আশেপাশের দোকানে ঘুরে ঘুরে খাবার চেয়ে খেতেন তিনি ৷ ডানলপে মোড়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক গার্ডরা তাঁর মুখ চিনতেন ৷ মানসিক ভারসাম্য হারানো হওয়ায়, তাঁকে সাবধান করতেন যখন তখন রাস্তা পারাপার না করার জন্য ৷
স্থানীয় এক চা দোকানির কাছ থেকে জানা গিয়েছে, মাঝে মধ্যেই তাঁর অবিন্যস্ত কথাবার্তায় অতীতের কথা বেরিয়ে আসত ৷ যেখানে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কথাও বলতেন ৷ কিন্তু, কেউ সেভাবে পাত্তা দিত না তাঁকে ৷ কিন্তু, আজ তাঁর পরিচয় সামনে আসতেই সবাই হতবাক ৷ কীভাবে এতদিন তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে গেলেন? কেউ তাঁর খোঁজ করলেন না ? এক সময় স্কুল শিক্ষিকা ইরা বসু অবসরের পর থেকেই একা থাকতেন ৷ আজ তাঁর এই দুর্দশার খবর পেয়ে তাঁর স্কুলের এক সময়ের সহকর্মীরাও হতবাক ৷ তাঁরা সবাই চাইছেন দ্রুত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন ইরা বসু ৷
আরও পড়ুন : কীভাবে সচল রাখা যায় উৎপাদন ও ছোটো ব্যবসা, পথ খুঁজলেন মুখ্যমন্ত্রী
এ নিয়ে ইটিভি ভারতের তরফে যোগাযোগ করা হয় সিপিআইএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেবের সঙ্গে ৷ তিনি জানিয়েছেন, ঘটনাটি অনেক দিন ধরেই চলছে এবং দলের তরফ থেকে তাঁকে যথাসম্ভব সাহায্য করার চেষ্টাও করা হয়েছিল ৷ কিন্তু, বেশি সাহায্য করতে গেলেও মুশকিল হত ৷ উনি ভীষণ ভাবে রিঅ্যাক্ট করতেন ৷ পাশাপাশি, উনি নাবালিকা নন ৷ এককালে চাকরি করেছেন । কোনও কারণে আঘাত পেয়ে উনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন ৷ সিপিআইএমের তরফ থেকে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ওঁনাকে সাহায্য করার যথাসম্ভব চেষ্টা করেন বলে জানিয়েছেন রবীন দেব ৷ পাশাপাশি বিষয়টি খুবই ব্যক্তিগত ব্যাপারে ৷ তাই এ নিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বা তাঁর স্ত্রী’র সঙ্গে আলোচনা করাটাও ভাল দেখাবে না বলে জানান রবীন দেব ৷