কলকাতা, 10 মার্চ: সেনা থেকে অবসর নেওয়ার পর তাঁরা রাজ্যের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষকতা করছেন৷ অথচ শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য প্রাপ্য বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাকরি জীবনে৷ এই দাবিতে NIOS (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওপেন স্কুলিং)-এর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছেন প্রাক্তন সেনাকর্মীরা। যদিও সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় তাঁরা যে বিশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করেছেন তাঁর স্বীকৃতি দিয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। অভিযোগ, সেই শিক্ষাগত যোগ্যতাকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওপেন স্কুলিং। ফলে প্রাক্তন সেনাকর্মীরা রাজ্যের প্রাইমারি স্কুলগুলিতে শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন ঠিকই কিন্তু উপযুক্ত প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই দাবিতেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিলেন প্রাক্তন সেনাকর্মীরা৷
2009 সালের শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী NCT বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল, 2019 সালের 31 মার্চের মধ্যে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাকে শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিতে হবে৷ কিন্তু দেশে যথেষ্ট সংখ্যায় কলেজ না থাকায় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক NIOS (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওপেন স্কুলিং)-কে দায়িত্ব দেয় ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টরি এডুকেশন (D.El.Ed) প্রশিক্ষণের । সেইমতো 2017-2019 সালের শিক্ষাবর্ষের প্রার্থীদের 2019 সালের মার্চ মাসে অন্তিম পরীক্ষা নেওয়া হয়। সম্প্রতি তার ফলাফলও ঘোষণা হয়েছে । এরপরই দেখা যায়, প্রাক্তন সেনাকর্মীদের মার্কসিটে লেখা হয়েছে NC বা নট কমপ্লিটেড। এক্ষেত্রে NIOS-এর যুক্তি, প্রাক্তন সেনাকর্মীরাদের উচ্চমাধ্যমিকে পঞ্চাশ শতাংশ নম্বর না থাকায় তাঁদের মার্কসিট অসমাপ্ত রাখা হয়েছে। এখানেই প্রশ্ন, সেনাকর্মীরা সাধারণত মাধ্যমিক পাশ যোগ্যতাতেই সেনাবাহিনীতে চাকরি পেয়ে থাকেন। নির্দিষ্ট সময় চাকরি করার পর তাঁরা প্রাক্তন সেনাকর্মী হিসেবে প্রাইমারি স্কুলের চাকরিতে নিযুক্ত হন। এবিষয়ে 2017 সালে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, সেনাবাহিনীতে পনেরো বছরের বেশি চাকরি করা প্রত্যেক প্রার্থীকে উচ্চমাধ্যমিকে পঞ্চাশ শতাংশ নম্বর প্রাপ্ত প্রার্থী হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে। কেন্দ্রের এই নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্যের তরফেও বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তারপরেও NIOS ঠিক কী কারণে প্রাক্তন সেনাকর্মীদের ফলাফল অসমাপ্ত রেখেছে তা এখনও স্পষ্ট নয় । এমত অবস্থায় বাধ্য হয়েই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছেন বলে জানাচ্ছেন প্রাক্তন সেনাকর্মীরা।
সেনা কর্মীদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, "27 আগস্ট 2017-তে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক একটি মেমোরেন্ডাম দিয়ে জানিয়েছিল, যাঁরা সেনাকর্মী তাঁরা কর্মরত অবস্থায় যে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন তা উচ্চমাধ্যমিকে 50% নম্বরের সমতুল্য। কিন্তু NIOS তা মানছে না। এর ফলেই চাকরি জীবনে প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা । অর্থাৎ, সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় তাঁরা যে শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করেছেন সরকারের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সেই যোগ্যতাকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না।"