কলকাতা, 18 অগাস্ট : বহুদিন ধরে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছেন পার্শ্ব শিক্ষকরা । গত শুক্রবার তাঁরা বেতন বৃদ্ধির দাবি নিয়ে বিকাশ ভবন অভিযান করেন । কিন্তু সল্টলেকে ঢোকার মুখেই আটকে দেয় পুলিশ । এরপরই পুলিশের সঙ্গে পার্শ্ব শিক্ষকদের ধস্তাধস্তি হয় । পুলিশের বাধা পেয়ে তাঁরা ফিরে যান । এরপর গতকাল নদিয়ার কল্যাণীতে জমায়েত করেন । সেখানে তাঁদের অবস্থানে লাঠিচার্জ করে পুলিশ ৷ এই ঘটনায় ছিঃ ছিঃ রব উঠেছে শিক্ষা মহলে । নিন্দা জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরাও । পাশাপাশি আন্দোলন ও প্রতিবাদ না করতে দিলে আখেরে এই সরকার আরও জনসমর্থন হারাবে এবং BJP-কে আরও সুবিধা করে দেওয়া হবে বলে মত শিক্ষাবিদদের একাংশের ।
শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, "এটা তো একটা দুর্ভাগা দেশ । যেখানে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির জন্য বৃষ্টির মধ্যে পথে নামতে হয় । আমাদের খুব লজ্জা লাগে রাজ্য সরকার (পুলিশ) সহানুভূতিহীন হয়ে তাঁদের উপর লাঠিচার্জ করে । এটাকে ধিক্কার জানাবার ভাষা আমার নেই ।"
আরও পড়ুন : কল্যাণীতে পার্শ্ব শিক্ষকদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ
শিক্ষাবিদ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, "কয়েকদিন আগেই শিক্ষাবন্ধুরা একটা আন্দোলনে গেছিলেন । সেখানে তাঁদের বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ডেপুটেশন দিতে দেওয়া হয়নি । পার্শ্ব শিক্ষকরা পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে ধরে রেখেছেন । তাঁরা যে কাজটা করছেন সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কেন না কলেজ এবং স্কুলে শিক্ষকের প্রচণ্ড অভাব । আমি নিজে দুটো স্কুলের সঙ্গে যুক্ত আছি । আমি সেখানে দেখছি যে, অনেক শিক্ষকের পদ খালি আছে । কাজেই আমরা পার্শ্ব শিক্ষকদের দিয়ে কাজ চালাচ্ছি । পার্শ্ব শিক্ষকরাই কার্যত এই পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে ধরে রেখেছেন । তাঁরা গতকাল যখন তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে কল্যাণী স্টেশনে গেলেন তখন তাঁদের লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেওয়া হল । কোনও রকম অসভ্যতা বা হিংসার প্রকাশ তো তাঁদের মধ্যে দেখা যায়নি । এটা ছিল একটা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ । সেখানে তো এমন কিছু হয়নি যে তাঁরা কাউকে লাঠি মেরেছেন বা ঢিল ছুঁড়েছেন । জমায়েত লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে । এটা কী হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে? আমরা কি গণতন্ত্রে বাস করছি? না স্বৈরাতন্ত্রে বাস করছি? অথবা, একটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে বাস করছি । মনে রাখতে হবে, প্রত্যেক মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আছে সংবিধানের 19 ধারা অনুসারে । আমরা যদি শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করি সেখানে পুলিশের লাঠিচার্জ করাটা একটা বিরাট ব্যাপার । এটা প্রমাণ করে যে, আমাদের বর্তমান সরকার গণতন্ত্র মানতে চাইছে না । তারা লাঠি, বন্দুকের জেরে মানুষকে শায়েস্তা করতে চাইছে । এই দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক । এতে করে তারা আরও জনসমর্থন হারাবে ।"
শিক্ষাবিদ ও অধ্যাপক সংহতি মঞ্চের সভাপতি তরুণকান্তি নস্কর বলেন, "পার্শ্ব শিক্ষকরা তাঁদের দাবি নিয়ে বহুদিন ধরেই আন্দোলন করছেন । বহুদিন ধরে বেতন বাড়ানো হয়নি । এই অবস্থায় বিকাশ ভবনের সামনে তাঁরা বসতে চেয়েছিলেন, পুলিশ মেরে তুলে দিয়েছে । নৈহাটি স্টেশনের সামনে থেকেও মেরে তুলে দেওয়া হয়েছে । কল্যাণীতেও একই অবস্থা । শিক্ষিকারাও রেহাই পাননি । একদিকে ওরা BJP-র অগণতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে বলবে, অন্যদিকে প্রতিবাদ, আন্দোলন কিছুই করতে দেবে না । এতে কিন্তু BJP-কেই সুবিধা করে দিচ্ছে । আমি এর তীব্র নিন্দা করছি ।"