কলকাতা, 10 এপ্রিল : বেসরকারি স্কুলের ফি বৃদ্ধি নিয়ে এবার কড়া পদক্ষেপ করল রাজ্য সরকার । আজ শিক্ষা সচিবের তরফ থেকে CBSE ও CISCE বোর্ডের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে । চিঠি পাঠানো হয়েছে রাজ্যের প্রতিটি বেসরকারি ও আন-এডেড স্কুলের কাছেও । যাতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, এই শিক্ষাবর্ষে ফি বৃদ্ধি না করতে । এ ছাড়া, কোনও অভিভাবক যদি ফি দিতে দেরি করেন বা দিতে না পারেন তাহলে সেটাও সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করতে । বিকাশ ভবন সূত্রে খবর, যদি রাজ্যের বেসরকারি বা আন-এডেড স্কুলগুলি এই পরামর্শ না মানে সেক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে রাজ্য সরকার কড়া পদক্ষেপ করতে পারে ।
বুধবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় একটি ভিডিয়ো বার্তা দেন । যাতে তিনি বেসরকারি স্কুলগুলিকে কোরোনা পরিস্থিতিতে ফি বৃদ্ধি না করতে আবেদন করেন । তিনি বলেন, "পশ্চিমবঙ্গ সরকার সর্বশক্তি দিয়ে জনসাধারণকে রক্ষা করার জন্য একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে । রাজ্যের একাধিক মানুষকে COVID-19-এর সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে এবং খাদ্যের সংকট থেকে মুক্ত রাখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন । এই রকম অস্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের রাজ্যের কিছু বেসরকারি বিদ্যালয় টিউশন ফি বৃদ্ধি করেছেন বলে আমাদের কাছে অনেক অভিভাবক অভিযোগ জানিয়েছেন । এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি রাজ্য সরকার ও শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে বেসরকারি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পরিস্থিতি বিচার করে ফি বৃদ্ধি না করার আবেদন রাখছি । তা ছাড়া, যাঁরা আর্থিক কারণে সময়ে ফি দিতে অপারগ তাঁদের বিষয়টিও মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করে অনুমোদন করার আবেদন জানাচ্ছি ।"
স্কুল শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, শিক্ষামন্ত্রীর আবেদনের পরও দপ্তরের কাছে বেসরকারি বা আন-এডেড স্কুলগুলির ফি নিয়ে বহু অভিযোগ এসেছে । হাওড়া, কলকাতা, হুগলির বেশ কিছু স্কুলের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এসেছে । তাই স্কুল শিক্ষা দপ্তরের সচিব মনীশ জৈনের তরফ থেকে আজ রাজ্যের বেসরকারি এবং আন-এডেড স্কুলগুলিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে । স্কুলগুলির সংশ্লিষ্ট বোর্ড অর্থাৎ, CBSE ও CISCE বোর্ডকেও জানানো হয়েছে । চিঠিতে বলা হয়েছে, COVID-19-কে কেন্দ্র করে গোটা রাজ্যে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার মোকাবিলায় রাজ্য সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে । কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিভিন্ন বোর্ডের অ্যাফিলিয়েশন থাকা বহু বেসরকারি ও আন-এডেড স্কুল শুধু বর্তমান শিক্ষাবর্ষে ফি বৃদ্ধি করেই থেমে নেই । তাঁরা অভিভাবকদের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন এই লকডাউনের সময়ে সেই বর্ধিত ফি জমা করতে ।
চিঠিতে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আবেদনের কথা উল্লেখ করে আরও বলা হয়েছে, শিক্ষামন্ত্রীর আবেদনের ভিত্তিতে এখনও কয়েকটি স্কুল ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেয়নি । গোটা বিষয়টি রাজ্য সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছে । এই পরিস্থিতিতে তাই সংশ্লিষ্ট সকলকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে, তাঁরা যেন বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখেন এবং বর্তমান শিক্ষাবর্ষে ফি বৃদ্ধি করা থেকে বিরত থাকেন । দেরিতে ফি দেওয়া বা ফি না দিতে পারার ব্যাপারগুলিও সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে চিঠিতে ।
বিকাশ ভবন সূত্রে খবর, শিক্ষার অধিকার আইন অনুসারে স্কুলগুলো ঠিকমত চলছে কি না তা দেখার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের । তাই দপ্তরের কাছে আসা বহু অভিযোগের ভিত্তিতে একবার বার্তা দেওয়া হয়েছে । এবার পরামর্শ দেওয়া হল । এরপরও কেউ যদি রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের সম্মান না করে, তাহলে অবশ্যই রাজ্য সরকার কড়া পদক্ষেপ করবে ।