কলকাতা, 27 সেপ্টেম্বর: মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে হেফাজতে নিল ইডি । 6 নভেম্বর পর্যন্ত জ্যোতিপ্রিয়কে ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিল ব্যাঙ্কশাল কোর্ট । গ্রেফতারের দিনই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে আদালতে পেশ ইডির। রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী এবং বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে প্রায় 20 ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর শুক্রবার ভোরে গ্রেফতার করে ইডি ৷ আর তারপরই সময় নষ্ট করতে চায়নি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের গোয়েন্দারা ৷ এদিন সকালেই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ সেখানে প্রায় তিন ঘণ্টা মেডিক্যাল পরীক্ষার পর মন্ত্রীকে নগর দায়রা আদালতে পেশ করে ইডি। শুনানি শেষে ইডির আর্জি মেনে 11 দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত।
বৃহস্পতিবার ভোর 6টার সময় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে যান ইডি আধিকারিকরা ৷ শুরু হয় তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব ৷ দিন পেরিয়ে রাত হয়ে গেলেও ইডি আধিকারিকদের বেরোতে দেখা যয়নি ৷ এরপর শুক্রের ভোরে তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি। তদন্তকারীদের দাবি, বনমন্ত্রী তদন্তে অসহোযোগিতার পাশাপাশি তথ্য গোপন করেছেন ৷ গ্রেফতারের পর এদিন প্রথমে সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয় জ্যোতিপ্রিয়কে ৷ এরপর সেখান থেকেই সকালে জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে ৷
হাসপাতাল সূত্রে খবর, এদিন প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে মন্ত্রীর শারীরিক পরীক্ষা করা হয় ৷ তিন সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ডও গঠন করা হয় ৷ জ্যোতিপ্রিয়র উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি একাধিক সমস্যা রয়েছে ৷ তবে হাসপাতালের তরফে পরীক্ষার পর জানানো হয়েছে আপাতত কোনও সমস্যা নেই মন্ত্রীর ৷ তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন বলেও হাসপাতালের তরফে লিখিত আকারে ইডিকে জানানো হয় ৷ এদিন হাসপাতাল থেকে সোজা নগর দায়রা আদালতে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে নিয়ে যায় ইডি ৷ সূত্রের খবর, মন্ত্রীর মেডিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্ট আদালতে দাখিল করে ইডি ৷ একই সঙ্গে তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তদন্ত করতে চায় বলেও আদালতে জানায় তদন্তকারী সংস্থা ৷ এদিন ইডির হয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি ৷
আদালতে ইডি সওয়াল করে, বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের আপ্তসহায়ক অমিত দে'র বাড়ি থেকে মেরুন রঙের একটি ডাইরি উদ্ধার করেছে তদন্তকারীরা ৷ ওই ডায়েরিতে রেশন বন্টনের আর্থিক লেনদেনের হিসেব রাখা হতো বলেও দাবি ইডির। একই সঙ্গে ইডির আইনজীবী জানান, সেই ডায়েরিতে কোটি কোটি টাকা আর্থিক লেনদেনের উল্লেখ রয়েছে। 2020 এবং 2021 সালের করোনার সময় কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া রেশন চাল ও গম অন্যান্য সামগ্রী খোলা বাজারে বিক্রির অভিযোগও এনেছে ইডি। ইডি'র তল্লাশি থেকে উঠে এসেছে সাধারণ উপভোক্তাদের খাদ্য দ্রব্যের 10 থেকে 20 শতাংশ পর্যন্ত কেটে নিয়ে খোলা বাজারে বিক্রি করা হয়েছে। সেই কাজ করতেন বাকিবুর বলে ইডি'র দাবি।
অন্যদিকে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের আইনজীবী আদালতে জানান, শারীরিকভাবে অসুস্থ বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ডায়াবেটিস ছাড়া অন্যান্য রোগেও আক্রান্ত তিনি। ইনসুলিন চলে তাঁর। দিনে চার বার ইনসুলিন চলে। দুটো কিডনির মধ্যে এটি 90 শতাংশ খারাপ। গত 24 ঘণ্টায় মন্ত্রীর একটি পা দ্বিগুণ ভাবে ফুলে গিয়েছে বলেও জানান আইনজীবী। কল্যাণী এইমস অথবা এসএসকেএম হাসপাতালে রেখে যাতে তাঁর চিকিৎসা করা হয় এই মর্মে আবেদনও করেন মন্ত্রীর পরিবারের লোকেরা।
আরও পড়ুন: যত চোর গ্রেফতার হচ্ছে তত চোরের রানির ছটফটানি বাড়ছে, কটাক্ষ সুকান্তর; চাঁছাছোলা শুভেন্দুও
সম্প্রতি রেশন দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ বাকিবুর রহমান নামে এক ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করেছে ইডি। তার সঙ্গে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর যোজসাজস রয়েছে বলেই দাবি করা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থার তরফে। বিশেষত যে সময় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন 2011 থেকে 21 সাল পর্যন্ত সেই সময় রেশন ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে সিণ্ডিকেট বানিয়ে কেন্দ্রের ন্যায্য মুল্যের রেশন সামগ্রী বেআইনিভাবে খোলা বাজারে বিক্রি করেছেন বাকিবুর বলে অভিযোগ। 2020 সালে বাকিবুর-সহ অন্যান্য রেশন ডিলারদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করেছিল রাজ্য পুলিশ। নদিয়ার কোতোয়ালি থানার সেই এফআইআরের ভিত্তিতেই ইসিআইআর করে তদন্ত শুরু করে ইডি। আর সেই মামলাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ৷