কলকাতা, 10 এপ্রিল: এ চিত্রনাট্য হার মানাবে বলিউডের তাবড় চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্টকেও ৷ হিন্দিতে অক্ষয় কুমার অভিনীত 'স্পেশাল 26' সিনেমায় ভুয়ো সিবিআই অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘটা করে ইন্টারভিউ বোর্ড বসেছিল ৷ এ রাজ্য়েও বসেছিল তেমনই এক ইন্টারভিউ বোর্ড ৷ সিনেমার সঙ্গে এর পার্থক্য শুধু চাকরির বিষয়বস্তুর উপর ৷ সিনেমায় ভুয়ো সিবিআই নিয়োগের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছিল, বাস্তবে শিক্ষক নিয়োগের জন্য ৷ মিল শুধু একটাই, দুটিই ছিল ভুয়ো ৷
চাকরি বিক্রি বা চাকরি দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয় ৷ দীর্ঘদিন ধরে রাজ্য়ে সরকারি চাকরি সংক্রান্ত একাধিক দুর্নীতির তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ৷ এবার সেই তদন্তে আরও বেশ কিছু নয়া তথ্য় সামনে এল ৷ বিস্ফোরক সেই তথ্য অনুযায়ী, সরকারি অফিসেই নাকি রমরমিয়ে চলেছিল চাকরি বিক্রির এই চক্র। আর সে অফিস আবার যেমন তেমন অফিস নয় । খাস বিকাশ ভবনে বসেই এই চাকরি বিক্রি হচ্ছিল বলে খবর তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে। রাজ্য সরকারের শিক্ষা বিভাগের মূল দফতর বিকাশ ভবনে বসেই চলেছিল এই দুর্নীতি ৷ এমনকি, ভুয়ো চাকরির জন্য বসেছিল নকল ইন্টারভিউ বোর্ডও ৷ যা দেখে-শুনে হতবাক তদন্তকারী আধিকারিক থেকে আমজনতা সকলেই ৷
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে তদন্তে নেমে তারা জানতে পেরেছেন, 2017 সালের জুন মাসে সল্টলেক বিকাশ ভবনের ছয় তলার আট নম্বর ঘরে তিন দিন চলেছিল ভুয়ো চাকরিপ্রার্থীদের ইন্টারভিউর পর্ব। তদন্তকারী আধিকারিকরা দাবি করছেন, বিভিন্ন জেলা থেকে একাধিক চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা নিয়ে তাদের সল্টলেক বিকাশ ভবনে ডাকা হয়েছিল ৷ এক্ষেত্রে তাদের প্রাথমিক অনুমান, চাকরি প্রার্থীদের শুধুমাত্র বিশ্বাস অর্জনের জন্যই এই ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছিল। আর সেখানে পুরোটাই হয়েছিল নকল ইন্টারভিউ ।
ইতিমধ্যেই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় হুগলির প্রাক্তন যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষকে জেরা করে এমন বিস্ফোরক তথ্য পেয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সল্টলেকের বিকাশ ভবনের ছয় তলার আট নম্বর ঘরে একসময় প্রায় একটি অস্থায়ী অফিস বানিয়ে ফেলেছিলেন হুগলির এই প্রাক্তন যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল। শুধু রাজ্যের প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং কুন্তল ঘোষের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তি নয় বরং ইডির দাবি বিকাশ ভবনের একাধিক আধিকারিক থেকে শুরু করে নিচু তলার পিয়ন এবং ক্লার্কের মতো গ্রুপ-ডি'র কর্মীরাও এই নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় যুক্ত।
জানা গিয়েছে, কুন্তল ঘোষ ভুয়ো নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি আধিকারিকদের পাশাপাশি পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ একাধিক কাউন্সিলরদের প্রায় 10 কোটি টাকা দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যেই কুন্তল ঘোষকে জেরা করে তদন্তকারীরা একাধিক সরকারি আধিকারিকদের নাম পেয়েছেন বলেও খবর। অভিযোগ এই সকল সরকারি আধিকারিক নিয়োগ-দুর্নীতি মামলার সঙ্গেই যুক্ত রয়েছেন ৷ ইডি সূত্রে খবর, কুন্তল ঘোষকে জেরা করে যাদের নাম পাওয়া যাচ্ছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করছে তদন্তকারীরা। অন্যদিকে, কুন্তলকে জেরা করে এই ঘটনায় একাধিক বিএড কলেজের কর্ণধারের নামও পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের ৷
আরও পড়ুন: বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারির শর্তসাপেক্ষে জামিন হাইকোর্টের
এসএসসি বা টেট, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের গ্রেফতারি দিয়ে কার্যত তদন্তের অগ্রগতীর সূচনা করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ৷ এরপর একে একে জালে ধরা পড়েছে মানিক ভট্টাচার্য, মানিক ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডল, কুন্তল, শান্তনু এবং হালে অয়ন শীল ৷ গোয়েন্দাদের দাবি, এই চক্রের প্রত্য়েকেই একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত ৷ পাশাপাশি এমন কয়েকজন আধিকারিকের নামও পেয়েছেন তদন্তকারীরা, যারা বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। সূত্রের খবর, খুব শীঘ্রই এই সকল আধিকারিকদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।