কলকাতা, 1 অক্টোবর: না-জানিয়ে জল ছাড়া নিয়ে ফের দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন বা ডিভিসিকে (DVC) দুষলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। টানা বৃষ্টিতে এমনিতেই দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ নদীতেই জল বাড়ছে । এই অবস্থায় ঝাড়খণ্ডের ছাড়া জলে আবার বন্যা পরিস্থিতি (Flood situation) তৈরি হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় । শুক্রবার আরও একবার এই নিয়ে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী । তাঁর দাবি, ডিভিসি এই পরিস্থিতিতে রাজ্যকে না-জানিয়ে জল ছাড়ার জন্য ইতিমধ্যেই বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত । বহু চাষের জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে । গ্রাম ও জনজীবন বিপর্যস্ত । এই বন্যাকে আরও একবার ম্যানমেড বলে তোপ দগেন মমতা ৷
ডিভিসির বিরুদ্ধে তোপ দেগে আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "কত বার বলেছি, না-বলে জল ছাড়বেন না । বলতে বলতে হতাশ হয়ে যাচ্ছি । না-জানিয়ে রাত 3টের সময় যদি জল ছেড়ে দেয়, তাহলে তো মানুষ ঘুমন্ত অবস্থাতেই ভেসে যাবে । এটা পাপ । এটা অপরাধ । আগে থেকে জানলে তো আমরা মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারি ।" মমতার তোপ, "জল ছেড়ে কেন বন্যা ঘটাবে ? ঝাড়খণ্ডের বোঝা আমরা কেন নেব ?" বানভাসি এলাকার মানুষদের কাছে প্রশাসনের সব রকম সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি ।
শুক্রবার সকালেই মাইথন জলাধার থেকে 80 হাজার কিউসেক এবং পাঞ্চেত থেকে 55 হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে । অন্য দিকে, দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে দেড় লক্ষ কিউসেকেরও বেশি জল ছাড়া হয়েছে । এতেই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে জেলা প্রশাসনগুলির কপালে । তবে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য জেলা প্রশাসনগুলিকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন । গত জুলাই-অগস্টেই জলাধার থেকে জল ছাড়ায় হুগলি, হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ একাধিক জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল । বেশ কয়েকটি নদীবাঁধ ভেঙেও গিয়েছিল । এর জেরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছিল ওই এলাকার মানুষের ।
আরও পড়ুন: Weather Forecast : পুজোয় কি এবার বঙ্গে বৃষ্টির ভ্রুকুটি ?
তিলপাড়া ব্যারাজ থেকে এক লক্ষ কিউসেকের উপরে জল ছাড়া হয়েছে । তার জেরে প্লাবিত কান্দি সালার রাজ্য সড়ক ও ভরতপুরের কিছু গ্রাম । জল বেড়েছে ভরতপুর ব্লকের যাকনা, ছত্রপুর, কোল্লা, চাঁদপুর, সুলতানপুর, কাশীপুরে ৷ জলমগ্ন চাঁদপুর ও কোল্লাও । জল আবারও ছাড়লে বিপদ বাড়বে ভেবে চিন্তিত প্রশাসন ।
আরও পড়ুন : Durgapur Barrage : দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ছাড়া হল 2 লক্ষ কিউসেক জল
গোঘাটের ভাদুরে দারকেশ্বর নদীর বাঁধ ভেঙেছে ইতিমধ্যেই । রাতে হু হু করে জল ঢোকে আরামবাগ শহরে । রাতে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে এলাকা । গোটা শহর অন্ধকার । দ্বারকেশ্বর নদীর জল গ্রামে হু হু করে ঢুকতে শুরু করে । আতঙ্কিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা । ত্রাণ শিবিরে যাওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায় ।
রাজ্য সড়কের উপর দিয়েই বইতে থাকে 6-7 ফিট উচ্চতার জলের স্রোত । রাতেই আরামবাগ শহরে 3 কোম্পানি সেনা নামানো হয় উদ্ধার কাজের জন্য । খানাকুলের বন্দিপুরে দ্বারকেশ্বরের নবনির্মিত বাঁধ ভেঙে এলাকায় হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করে । এরপর আরামবাগ পেরিয়ে তারকেশ্বরে রাজ্য সড়কের উপর দিয়ে জল বইতে শুরু করে । রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমে সঙ্কটজনক হওয়ার দায় ডিভিসির ঘাড়ে চাপিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
আরও পড়ুন : Ajoy High Tide : অজয়ে হঠাৎ বান, গোরু চরাতে গিয়ে চরের জঙ্গলে আটকে তিন গ্রামবাসী