কলকাতা, 29 জুলাই: লকডাউনের কারণে পূর্ব নির্ধারিত সময়ে হাসপাতালে পৌঁছতে পারেননি ক্যান্সারের আক্রান্ত রোগী । মাস দুই পরে তিনি যখন হাসপাতালে পৌঁছলেন, তখন জানলেন তাঁর ক্যান্সার স্টেজ-টু থেকে পৌঁছে গেছে স্টেজ ফোর- । এর ফলে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছিল তাঁর ফুসফুসে । আর কি বেঁচে ওঠা সম্ভব নয়? ভরসা পাননি চিকিৎসকদের কাছে । তবে, বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে এর পরে অন্য এক চিকিৎসকের কাছে যান রোগী । জানতে পারেন, তাঁর ক্যান্সার স্টেজ টু-তেই রয়েছে, ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়েনি । এই চিকিৎসকের কাছেই আবার অস্ত্রোপচার করে আপাতত ক্যান্সারমুক্ত হয়েছেন এই রোগী । ক্যান্সারের চিকিৎসার এই ঘটনা কলকাতার ।
অরূপকুমার দত্ত নামে 68 বছর বয়সি এই রোগী হাওড়ার বাসিন্দা । পানের সঙ্গে জর্দা মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস ছিল তাঁর । এই অভ্যাসই তাঁর কাল হয়ে দাঁড়ায় । গত বছরের জুন মাস থেকে তাঁর নিচের চোয়ালে ব্যথা হতে শুরু করে । তবে, প্রথমে সেভাবে গুরুত্ব দেননি তিনি । এর পরে যন্ত্রণা বাড়তে থাকায় গত বছরের অক্টোবর মাসে তিনি কলকাতার একটি হাসপাতালে যান । সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে ধরা পড়ে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত । তাঁর মুখে ক্যান্সার হয়েছে । তবে, সেখানে ক্যান্সারের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকার কারণে অন্য একটি হাসপাতালে যান এই রোগী । সেখানে তাঁর চোয়ালে অপারেশন করা হয় । এরপরে সেখানে তাঁকে রেডিয়েশন, কেমোথেরাপি দেওয়া হয় । পরে তিনি বাড়িতেও ফিরে যান ।
কিন্তু, ফলো আপের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ে যান তিনি । কারণ, তখন লকডাউন শুরু হয়ে গেছে । যার জেরে তিনি আর ওই হাসপাতালে যেতে পারেননি । এ দিকে, চোয়ালে আবার যন্ত্রণা শুরু হয়েছিল তাঁর । যে কারণে, ক্যান্সার আবার ফিরে এসেছে কি না, তা জানার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় । তবে, লকডাউনের কারণে ওই হাসপাতালে পৌঁছতে পারছিলেন না রোগী । অবশেষে, জুন মাসে ওই হাসপাতালে যেতে পারেননি তিনি । তখন তাঁর যন্ত্রণা অসহনীয় হয়ে উঠেছে । চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রোগীর ক্যান্সার স্টেজ-টু থেকে বেড়ে স্টেজ-ফোরে পৌঁছে গেছে । কেমোথেরাপির মাধ্যমে রোগীকে যে ক'দিন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব, তা বাদে আর কিছু করার নেই । অরূপবাবুর মেয়ে মৌমিতা পাঁজা বলেন, " চিকিৎসকরা বলেন, আর কিছু করা যাবে না । বাবাকে কেমোথেরাপি দিয়ে রাখতে হবে । তবে, আমাদের মনে হয়নি এটা ঠিক । বাবাকে বাঁচানোর জন্য আমরা অন্য চিকিৎসকের কাছে যাই ।"
14 জুলাই আবার অপারেশন করে এই রোগীর নিচের চোয়াল কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে । চেস্ট থেকে মাসলস নিয়ে এই রোগীর চোয়াল রিকনস্ট্রাকশন করে দেওয়া হয়েছে। এই কথা জানিয়ে এই চিকিৎসক শুভদীপ চক্রবর্তী বলেন, "একবার অপারেশন এবং তার পরে রেডিয়েশন, কেমোথেরাপির কারণে রোগীর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বারের এই অপারেশন জটিল হয়ে পড়েছিল । এ ক্ষেত্রে অপারেশন ফেলিওর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় । তবে, সাত ঘণ্টার এই অপারেশন সফল হয়েছে । রোগী আপাতত ক্যান্সারমুক্ত।"