কলকাতা, 23 সেপ্টেম্বর: বৃষ্টির জমা জলই এবার আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দাদের ৷ গত কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টিতে জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আজ পর্যন্ত 13 জনের মৃত্যু হয়েছে ৷ গতকাল, দমদমের মতিঝিল এলাকাতে জমাজলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায় দুই কিশোরী শ্রেয়া বণিক (12) এবং অনুষ্কা নন্দী (13)। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বুধবার বিকেলে একসঙ্গে বাড়িরই বাইরে বেরিয়েছিল এই দুই কিশোরী। জলমগ্ন রাস্তা দিয়ে হাঁটবার সময় তাদের মধ্যে একজন ছুঁয়ে ফেলে রাস্তার ধরে থাকা একটি বাতিস্তম্ভকে। তাতেই দুর্ঘটনা ঘটে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই কিশোরীর। তাকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ যায় তার বন্ধুরও।
একইভাবে গতকাল রাতে উত্তর 24 পরগনা জেলার আগরপাড়া তারাপুকুর অঞ্চলে জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায় 65 বছরের প্রৌঢ় দীপক চৌধুরী। বাড়ির সামনেই জমা জলের নিচে পড়ে থাকা বিদ্যুতের ছেঁড়া তারের সংস্পর্শে আসেন তিনি এবং তৎক্ষণাৎ তাঁর মৃত্যু হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার উত্তর 24 পরগনার খড়দায় ঠিক একইরকমভাবে জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান রাজা দাস, তাঁর স্ত্রী পৌলোমী দাস ও পুত্র শুভ দাস। স্বভাবতই এই ঘটনায় প্রশাসন, স্থানীয় পুরসভা এবং বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার উপর ক্ষোভ বাড়ছে মানুষের। তাঁদের বক্তব্য, কলকাতা সংলগ্ন বহু অঞ্চলে বাতিস্তম্ভের সুইচ বক্স খোলা থাকে। যত্রতত্র বিপজ্জনকভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে খোলা তার। ফলত ভরা বর্ষাতে বাড়ে বিপদ। সে কোনও সময় জমা জলে ছেঁড়া তার বা বাতিস্তম্ভের সংস্পর্শে এসে ঘটে যাচ্ছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। যদিও এই ঘটনার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
আরও পড়ুন: খড়দার ঘটনার পুনরাবৃত্তি আগরপাড়ায়, জমা জলে বাড়িতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু বৃদ্ধের
এই ঘটনার ব্যাপারে চুপ রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর, সিইএসসি এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থা ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইলেকট্রিসিটি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের কর্তারাও। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা জানান, যে যেকোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় বিদ্যুৎ দফতর আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয় ৷ যাতে এই ধরনের মৃত্যু এড়ানো যায় । এবারও সেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল । যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যেখানে আবহাওয়া দফতরের কোনও পূর্বাভাস ছিল না। সেখানেও অত্যধিক মাত্রায় বৃষ্টি হয়েছে। ফলে আমরা চেষ্টা করছি যাতে এই অবস্থাগুলি দ্রুত এড়ানো যায়। এবারও বেশকিছু মৃত্যু হয়েছে যার সঙ্গে রাস্তার খোলা তারের কোনও সম্পর্ক নেই। সাধারণ মানুষের জমা জলের এলাকা এড়িয়ে চলা উচিত। মৃত্যু নিয়ে একে অন্যের উপর দায় চাপিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়েছে পুরসভা এবং বিদ্যুৎ দফতর ৷