কলকাতা, 27 মার্চ: দু'দিনের বঙ্গ সফরে এসে সোমবার নেতাজি ভবন ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি ঘুরে দেখলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (Murmu Visits Netaji and Tagore Houses)৷ তাঁর সফর ঘিরে শহরজুড়ে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷
সোমবার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পৈতৃক বাসভবন পরিদর্শন করলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (Droupadi Murmu in Kolkata)৷ রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে নেতাজি ভবন ঘুরে দেখার পাশাপাশি স্বাধীনতা সংগ্রামীর উদ্দেশে শ্রদ্ধাও জানান রাষ্ট্রপতি ৷ সোমবার সকালে 'নেতাজি ভবন' পরিদর্শনের সময় তাঁকে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বেশ কয়েকটি ঘটনার সাক্ষী এই ঐতিহাসিক ভবনটির তাৎপর্য সম্পর্কে জানান নেতাজির প্রপৌত্র সুমন্ত্র বসু ৷
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে মুর্মুকে প্রথমে ঐতিহাসিক গাড়ি 'দ্য 1937 ওয়ান্ডারার ডব্লিউ24' দেখানো হয় ৷ 1941 সালের 16 জানুয়ারি এই গাড়িতে চড়েই তাঁর বাসভবন থেকে নেতাজির মহানিষ্ক্রমণ ঘটে । রাষ্ট্রপতি নেতাজির অধ্যয়ন কক্ষ, তাঁর শয়নকক্ষ এবং 'মহানিষ্ক্রমণের সিঁড়ি' চাক্ষুস করেন ৷ এই সিঁড়ি দিয়েই নেতাজি নীচে নেমে এসেছিলেন যেখানে তাঁর ভাগ্নে শিশির বসু তাঁকে নিয়ে পালানোর জন্য ওয়ান্ডারার পার্ক করে রেখেছিলেন ।
নেতাজি ভবনে প্রায় 10 মিনিট কাটানোর পর, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু উত্তর কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শনে যান (Murmu in Jorasanko Thakurbari)৷ ঠাকুরবাড়ির কক্ষগুলির চারপাশ ঘুরে দেখেন ৷ যেখানে কবিগুরুর জন্ম হয়েছিল, যেখানে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং যেখানে তিনি তাঁর বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছিলেন -এই সব ঘুরে দেখে শতাব্দী প্রাচীন কাঠামোর সংরক্ষণে হতবাক হন রাষ্ট্রপতি ৷ রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সুবীর মৈত্র এ কথা জানিয়েছেন ৷ আরবিইউ কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রপতিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চারটি প্রকাশনা এবং তাঁর একটি ছবি উপহার দিয়েছে । জোড়াসাঁকোয় রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং শশী পাঁজা ৷
আরও পড়ুন: আদিবাসীর সাজে নাচের তালে রাষ্ট্রপতিকে সংবর্ধনা মমতার
ঠাকুরবাড়ির ভিজিটরস লগ বুকে রাষ্ট্রপতি লিখেছেন, "আমার জন্য সত্যিই একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হল জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করা ৷ বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের বিখ্যাত আবাসস্থল যেখানে কবিগুরু বিশ্বব্যাপী আইকনে পরিণত হয়েছিলেন । এই পরিদর্শনটি আমাকে মহান পরিবারের অকুতোভয় ব্যক্তিদের বহুমুখী অবদান সম্পর্কে আলোকিত করেছে । একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত এই বাড়ির মধ্যে দিয়ে হেঁটে গিয়ে আমি দেখতে পেলাম যে, ঠাকুর পরিবারের সদস্যরা কীভাবে ভারতের ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে এবং এর উন্নয়ন ও পুনর্জাগরণে সহায়তা করেছে ।"
এর আগে, রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ও রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং সুজিত বোস । প্রতিরক্ষা বাহিনী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গার্ড অব অনার প্রদান করে রাষ্ট্রপতিকে । রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর দ্রৌপদী মুর্মুর রাজ্যে প্রথম সফর ঘিরে শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে ।
বিমানবন্দর থেকে তিনি হেলিকপ্টারে করে রয়্যাল ক্যালকাটা টার্ফ ক্লাব মাঠে যান, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতিকে । পরে সন্ধ্যায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একটি অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার দ্রৌপদী মুর্মুকে সংবর্ধনা দেয় ৷ সেই অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন ।
রাষ্ট্রপতি মঙ্গলবার রামকৃষ্ণ মঠ এবং রামকৃষ্ণ মিশনের সদর দফতর বেলুড় মঠ পরিদর্শন করার পরে সরকারি খাতের ব্যাংকের 80 বছর পূর্তি উদযাপনের জন্য একটি ইউকো ব্যাংকের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে জানা গিয়েছে ৷ বিশ্বভারতীর বার্ষিক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে যাওয়ার কথা রয়েছে রাষ্ট্রপতির ৷