কলকাতা, 26 জুন : কোরোনা সংক্রমণে না কি সহায়ক হতে পারে সরষের তেলের ব্যবহার । সোশাল মিডিয়ায় এমনই জানিয়েছিল শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট । এরপরই তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাল সরকারি চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন ।
শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের তরফে 22 জুন সোশাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করা হয় । তাতে বলা হয়, এই টোটকা কোরোনার মোকাবিলায় যথেষ্ট কার্যকর হতে পারে । ইয়ার বাড দিয়ে নাকে সরষের তেল দেওয়া, সরষের তেল দিয়ে মাখা আলুসেদ্ধ ও সরষের তেল দিয়ে মাখা মুড়ি, স্যালাড খাওয়া, গরম লেবু জল ও হলুদ মিশ্রিত দুধ খেলে কোরোনার সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা যাবে । খোদ পুলিশের তরফে সোশাল মিডিয়ায় এই ধরনের প্রচারের জেরে বিভিন্ন মহলে শুরু হয়েছে বিতর্ক ৷ উঠছে বিভিন্ন প্রশ্ন । খোদ পুলিশের তরফে এই ধরনের প্রচারের বিষয়ে রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গলের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, " গোমূত্র ও গোবর দিয়ে যাঁরা COVID-19 সারাবেন বলেছিলেন মনে হচ্ছে এরা তাঁদেরই উত্তরসূরি । মানুষ যখন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন, একটি রোগ নিয়ে গোটা বিশ্বে যখন এত ধরনের রিসার্চ চলছে কীভাবে এই রোগ ঠেকানো যায় ৷ সেখানে এমন একটা অপ্রমাণিত কোনও কিছু দিয়ে প্রভাবিত করা, অপরাধের মধ্যেই পড়ে ৷ এটা অন্যায় । যদি সাধারণ কোনও মানুষ বা ব্যক্তি এমন কিছু করত তা হলে বলতাম তিনি বলেছেন, ইগনোর করুন । "
তিনি আরও বলেন, "প্রশাসনের কেউ যদি এরকম প্রচার করে, তাকে জবাব দিতে হবে কেন তিনি এরকম কাজ করলেন । মানুষ আতঙ্কে রয়েছে । এই অবস্থার মধ্যে কোনও অপ্রমাণিত বিষয় নিয়ে গুজব যদি ছড়ানো হয়, মানুষের উপর তার কী প্রভাব পড়তে পারে, সেটা ভেবে দেখতে হবে । এখন মহামারী আইন রয়েছে । গুজব ছড়ানোর এমন কোনও প্রচার করলে আইন অনুযায়ী শাস্তি হওয়া উচিত । অপ্রমাণিত এরকম বিষয়ে যাঁরা বলছেন, সরকারি জায়গায় থেকে এরকম কেন করা হচ্ছে ৷ নিয়ম অনুযায়ী তাঁদেরকেও আইনের আওতায় আসতে হবে । " এই পোস্টের বিষয়ে উত্তরবঙ্গে COVID-19-এর মোকাবিলায় নিযুক্ত OSD সুশান্ত রায় ETV ভারতকে জানান, সোশাল মিডিয়ায় এই পোস্ট সরিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি জেলাশাসককে বলেছেন । না হলে সরকারি স্তর থেকে জনমানসে ভুল বার্তা যাবে । ওই পোস্টে বলা হয়েছে তার কোনও ভিত্তি নেই । OSD-র বক্তব্যের ভিত্তিতে চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, " শুধুমাত্র ওই পোস্ট সরিয়ে নিলেই হবে না । মানুষের কাছে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে এই প্রচার । এর ফলে আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ বিভ্রান্ত হল । এই গভীর সংকট, এই বিপদের সময় এই ধরনের কাজকে কোনও ভাবেই সমর্থন করা যায় না । এবিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত । "
এবিষয়ে রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের অন্য একটি সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, "এই ধরনের চটকদার বিষয় গুজব ছড়াবে ৷ মানুষকে বিভ্রান্ত করবে । পুলিশের তরফে এমন বক্তব্য দেওয়া হলে মানুষ বিশ্বাস করবে । এর আদৌ কোনও প্রমাণ আছে কি না সেই বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার । যদি প্রমাণ না থাকে তা হলে পুলিশের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত । যিনি এই ধরনের পোস্ট করেছেন তিনি যদি কোনও প্রমাণ দেখাতে না পারেন তা হলে অবশ্যই সেক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত । এমন বিষয় বন্ধ করার জন্য সরকারের তরফে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত । মহামারীর জন্য শুধুমাত্র আইন চালু করলে হবে না সেটা দেখভালেরও প্রয়োজন । দেখভাল হচ্ছে না । সরকার দায়িত্ব নিচ্ছে না বলেই যে কেউ এধরনের যে কোনও রকম বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালিয়ে যেতে পারছেন । পুলিশের স্তর থেকেও এমন করে যেতে পারছে । অবিলম্বে এগুলি বন্ধ করা উচিত । না হলে COVID-19-এর পরিস্থিতিতে যা ক্ষতি হয়েছে, এই ধরনের প্রচারে আরও মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে । এই ধরনের প্রচারের জন্য আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হোক । এই ধরনের বিভ্রান্তি যাঁরা তৈরি করছেন, তাঁদের সকলের উপর সরকারের নজরদারি রাখা উচিত । এই ধরনের প্রচার যাতে না হয় তার জন্য সরকারের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত । "
সোশাল মিডিয়ায় এই ধরনের পোস্টের বিষয়ে চিকিৎসকদের অন্য একটি সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সম্পাদক, চিকিৎসক কৌশিক চাকি বলেন, "এটা হাস্যকর, অবৈজ্ঞানিক । এই ধরনের প্রচারে জনমানসে ভুল বার্তা যাবে । পুলিশের কাজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা । চিকিৎসার কাজ চিকিৎসকদের । "