কলকাতা, 29 জুন: সরকারি সার্কুলার অনুযায়ী হওয়ার কথা 500 বেডের COVID হাসপাতাল । তবে, সম্প্রতি এই হাসপাতালে চালু হয়েছে মাত্র 50 টি বেড । অথচ, COVID-19 রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে রাজ্যের কোন হাসপাতালে কতগুলি বেড ফাঁকা রয়েছে, এই বিষয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের ওয়েবসাইটে সর্বশেষ আপডেট হওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই হাসপাতালে 500টি বেড চালু রয়েছে, এর মধ্যে ফাঁকা রয়েছে 493টি বেড । ত্রুটিপূর্ণ এমন তথ্যের বিষয়ে সরকারি চিকিৎসকদের একটি অংশ যেমন বলছে, মানুষ যাতে বুঝতে না পারেন তার জন্য বেডের বিষয়টি এ ভাবে ধোঁয়াশার মধ্যে রাখা হচ্ছে । তেমনই, অন্য অংশ বলছে, এ ভাবে মানুষকে প্রতারিত করা হচ্ছে ।
কোনও COVID-19 রোগীকে হাসপাতালে ভরতি করানোর ক্ষেত্রে দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে পরিজনদের । ঘুরতে হচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতালে । কোনও COVID-19 রোগীর পরিজনদের দুর্ভোগের মধ্যে যাতে না পড়তে হয় , তার জন্য সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের তরফে সরকারের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে ৷ COVID-19 রোগীদের চিকিৎসার জন্য কোন হাসপাতালে কতগুলি বেড ফাঁকা রয়েছে, তার তথ্য প্রকাশের দাবি করা হোক । নবান্নে গত 17 জুন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের বৈঠকেও এই বিষয়টি পেশ করেছিলেন চিকিৎসকরা ।
পরের দিন 18 জুন থেকে প্রতিদিন রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের ওয়েবসাইটে জানানো হচ্ছে COVID-19 রোগীদের চিকিৎসার জন্য রাজ্যের কোন হাসপাতালে কতগুলি বেড ফাঁকা রয়েছে । গত 18 জুন স্বাস্থ্য দপ্তরের এই তথ্যে জানানো হয়েছে, কামারহাটিতে অবস্থিত কলেজ অব মেডিসিন অ্যান্ড সাগর দত্ত হসপিটালে 500টি বেড রয়েছে। এবং, 500টি বেড-ই ফাঁকা রয়েছে । অথচ, তখনও পর্যন্ত এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে COVID-19 রোগীদের চিকিৎসার জন্য একটিও বেড চালু করা হয়নি । গত শনিবার স্বাস্থ্য দপ্তরের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, COVID-19 রোগীদের চিকিৎসার জন্য কামারহাটির এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে 500টির মধ্যে 493টি বেড ফাঁকা রয়েছে । অথচ, এখনও পর্যন্ত COVID-19 রোগীদের চিকিৎসার জন্য এখানে 50টি বেড চালু করা হয়েছে ।
কামারহাটির এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে 500 বেডের COVID হাসপাতাল হিসাবে চালু করার কথা গত 5 জুন স্বাস্থ্য দপ্তরের সার্কুলারে জানানো হয়েছিল । যদিও, এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে COVID-19 রোগীদের চিকিৎসার জন্য পরিকাঠামোগত কারণে 500টি বেড চালু করা যাবে কি না, সেই বিষয়ে খোদ কর্তৃপক্ষের কাছেই প্রশ্ন রয়েছে । তবে, এই 500টি বেডের মধ্যে মাত্র 50টি বেড চালু করা হয়েছে গত 24 জুন । COVID-19 রোগীদের চিকিৎসার জন্য এখনও পর্যন্ত এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ICU এবং ভেন্টিলেটরের সাপোর্ট রয়েছে, এমন কোনও বেড চালু করা হয়নি । এ দিকে, গত শনিবার এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রে খবর, এ দিন পর্যন্ত এখানে 15 জন COVID-19 রোগীকে ভর্তি করানো হয়েছে । অর্থাৎ, 50টি বেডের মধ্যে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখানে 35টি ফাঁকা রয়েছে । গত শুক্রবার, 26 জুন পর্যন্ত এখানে ভর্তি ছিলেন সাত জন COVID-19 রোগী ।
এ রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের একটি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গলের সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, "COVID-19 রোগীদের চিকিৎসার জন্য কামারহাটির এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কোনও বেড চালু হওয়ার আগেই ওয়েবসাইটে দেখানো হয়েছে যে এখানে 500টি বেড ফাঁকা রয়েছে । এই হাসপাতালে এক সঙ্গে 500টি বেড চালু-ও হচ্ছে না। পরিষেবা চালু হওয়ার আগেই বলা হয়েছে পরিষেবা চালু রয়েছে । এর কোনও মানে আছে? এভাবে মানুষকে প্রতারিত করা হচ্ছে ।"
তিনি বলেন, "অন্য হাসপাতালের ক্ষেত্রেও এমন হতে পারে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে এর কতটা সত্যি আর কতটা ঘোষণা ।"
এই বিষয়ে এ রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের অন্য একটি সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, "এ ক্ষেত্রে দুটি কারণ রয়েছে। এক, সরকারের দিক থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধোঁয়াশা তৈরি করে রাখার প্রচেষ্টা রয়েছে, যাতে মানুষ বুঝতে না পারেন যে COVID-19-এর চিকিৎসার জন্য কোন হাসপাতালে কত বেড চালু রয়েছে, কত বেড ফাঁকা রয়েছে। দুই, ওয়েবসাইটে সঠিকভাবে তথ্য আপলোড করার ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল সমস্যাও রয়েছে । এই দুই সমস্যারই সমাধান হওয়া উচিত ।"
সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসকদের বিভিন্ন অংশের তরফে এমনই জানা গিয়েছে, COVID-19 রোগীদের চিকিৎসার জন্য রাজ্যের কোন হাসপাতালে কতগুলি বেড ফাঁকা রয়েছে, এই বিষয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের ওয়েবসাইটে কামারহাটির এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ক্ষেত্রে এই ধরনের ত্রুটিপূর্ণ তথ্য যেখানে দেখা যাচ্ছে, সেখানে অন্য কোনও হাসপাতালের ক্ষেত্রে যে এমন ত্রুটিপূর্ণ তথ্য নেই, তা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না, এই বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে ।