ETV Bharat / state

বাজাচ্ছে রোগী, বাজছে গান ; চলছে লাইভ অপারেশন

author img

By

Published : Aug 1, 2019, 1:33 PM IST

Updated : Aug 1, 2019, 9:51 PM IST

চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুরের কথায়, "অপারেশন চলছে । আর, রোগী গান গাইছেন বা শুনছেন বা কোনও বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছেন । এটাই নতুনত্ব । অপারেশন থিয়েটারের চিত্রটা এক রকম হয় । সেই চিত্রটা একটু বদলে দেওয়া গেছে । এখানে আমার মূল সহযোগী হচ্ছে সুর বা মিউজ়িক । এবং দ্বিতীয় হচ্ছে কাউন্সেলিং বা কথা বলা ।"

ফাইল ফোটো

কলকাতা, 30 জুলাই : অপারেশন থিয়েটারে রোগী গান শুনছেন অথবা গাইছেন । কিংবা, বাজাচ্ছেন কোনও বাদ্যযন্ত্র । রোগী জানেন তাঁর অপারেশন চলছে । আর, এই ধরনের অপারেশনের পরে, বাড়ির লোকজনের সঙ্গে খোশমেজাজে মেতে উঠতে পারছেন রোগী । এমন কী, দ্রুত বাড়িতেও ফিরতে পারছেন । মিউজ়িক অর্থাৎ, সুরকে সঙ্গী করে এ ভাবেই অপারেশন থিয়েটারের ধারণাটাই বদলে দিয়েছেন কলকাতার অর্থোপেডিক সার্জন, চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুর । আন্তর্জাতিক জোড়া স্বীকৃতি মিলল তাঁর এই স্বপ্নের প্রচেষ্টার‌ ।

এই ধরনের অপারেশনের ক্ষেত্রে এমন অবস্থাও হয় যে, রোগী বলছেন, কী যে গান গাইলাম ! অথবা বলছেন, কী যে গান শুনলাম ! সুরের মূর্ছনায় এতটাই বিভোর হয়ে যান রোগী, যে অপারেশনের পরে তিনি চিকিৎসকের কাছে জানতে চান, তাঁর অপারেশন হয়ে গেছে কি না । বিষয়টা এমনও হয় যে, রোগীর এক হাতে হয়ত অপারেশন চলছে । আর অন্য হাতে তিনি মেতে উঠেছেন বাদ্যযন্ত্রে, কোনও গানের সুরে । চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুরের কথায়, "অপারেশন চলছে । আর, রোগী গান গাইছেন বা শুনছেন বা কোনও বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছেন । এটাই নতুনত্ব । অপারেশন থিয়েটারের চিত্রটা এক রকম হয় । সেই চিত্রটা একটু বদলে দেওয়া গেছে । এখানে আমার মূল সহযোগী হচ্ছে সুর বা মিউজ়িক । এবং দ্বিতীয় হচ্ছে কাউন্সেলিং বা কথা বলা ।" তবে, শুধুমাত্র এভাবে অপারেশন নয় । তিনি বলেন, "প্রেসক্রিপশনেও গানের কথা লিখি । যাঁদের ঘুম হয় না, ডিপ্রেশনে রয়েছেন, তাঁদের জন্য প্রেসক্রিপশনে কিছু কিছু সুরের কথা লিখি ।"

বাজাচ্ছে রোগী, চলছে লাইভ অপারেশন


কলকাতার এই চিকিৎসকের এমন মিউজ়িক থেরাপির আন্তর্জাতিক জোড়া স্বীকৃতি মিলল এবার । মিউজ়িক থেরাপির উপর ইউনিভার্সাল রেকর্ডস ফোরাম-এর গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড 2019-এর প্রাপক এই চিকিৎসক । সম্প্রতি, ইউনিভার্সাল রেকর্ডস ফোরাম-এর তরফে চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুরের হাতে তাঁর এই মিউজ়িক থেরাপির স্বীকৃতি স্বরূপ শংসাপত্র এবং স্মারক তুলে দেওয়া হয়েছে । এর পাশাপাশি, 19 জুলাই অ্যামেরিকা বুক অফ রেকর্ডস-এর তরফেও এই চিকিৎসককে মেইল করে জানানো হয়েছে, মিউজ়িক থেরাপির উপর তাঁর অ্যাচিভমেন্ট শীঘ্রই অ্যামেরিকান বুক অব রেকর্ডসের তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে । আন্তর্জাতিক এই দুই স্বীকৃতির বিষয়ে চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুর বলেন, "এই দুই কর্তৃপক্ষ আমার রিসার্চের বিষয়টা পড়েছে, দেখেছে । পর্যালোচনার পরে, তারা নথিভুক্ত করেছে । আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ । বহুদিনের স্বপ্ন, প্রচেষ্টাকে একটা জায়গায় নিয়ে আসতে পারলাম ।"

ছোটোবেলা থেকেই অন্য ধরনের ভাবনা ঘুরে বেড়িয়েছে এই চিকিৎসকের মনে । তিনি এমন মনে করতেন, 2+2 করলে 4 হয় । কিন্তু, 2+2 না করে, 4-কে আরও কী ভাবে 4 করা যায় । ছোটোবেলা থেকে সংগীতপ্রেমী এই চিকিৎসক প্রয়াত ভি ভালসারার ছাত্র ছিলেন । গানের জগতে সক্রিয়ভাবে তাঁর যাওয়া হয়নি । তবে কখনও কখনও সুযোগ পেলে তিনি গানবাজনা করেন । তাঁর কথায়, "আমার স্যার বলেছিলেন, পারলে এটা (সুর)-কে মানবপ্রেমের কাজে লাগিও । এটা আমার মাথায় ছিল । 1998 থেকে অপারেশন থিয়েটারে মিউজ়িক নিয়ে চিন্তা-ভাবনা, পড়াশোনা শুরু করি । 2007 থেকে সক্রিয়ভাবে এই কাজটি করছি ।"

ছকভাঙার মানসিকতা তো রয়েছে । কিন্তু, সাধারণত যেভাবে অপারেশন থিয়েটার চলে, সেভাবে না করে কেন এভাবে অপারেশন করেন তিনি? সুমন্ত ঠাকুর বলেন, "প্রথম কথা, রোগীর যে ভয়-ভীতি বা টেনশন, যেমন, তিনি কবে ভালো হবেন, ডিপ্রেশন । এ সব থেকে রোগীকে বার করে নিয়ে আসার একটি প্রচেষ্টা । হাসপাতালের পরিবেশে হসপিটাল সিকনেস নামে একটি রোগ হয় । একটি সমস্যার সৃষ্টি হয় । এক্ষেত্রে ঘুমের বা অ্যান্টি ডিপ্রেশনের ওষুধ দিতে হয় । অপারেশন চলাকালীন রোগীর ব্লাড প্রেসারে তারতম্য হতে পারে, তিনি ভয় পেতে পারেন । তখন তাঁকে আইভি চ্যানেলের মাধ্যমে ঘুমের ওষুধ দিতে হয় ।" তবে, এ ভাবেই মিউজ়িক প্রয়োগের মাধ্যমে, এ সবের কিছুরই প্রয়োজন হয় না । এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, "মিউজ়িক প্রয়োগ করে এবং কথা বলে আমি যেটুকু দেখেছি, তখন কোনও ওষুধেরই প্রয়োজন হয় না । একজন রোগী স্বতঃস্ফূর্তও থাকেন । এটার জন্য সংগীতের কাছে আমি ভীষণ রকম কৃতজ্ঞ ।"

এভাবে অপারেশনের জন্য জেনেরাল অ্যানাস্থেসিয়া করা হয় না । অর্থাৎ, রোগীকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করা হয় না । যেখানে অপারেশনের প্রয়োজন, সেখানে অবশ করে দেওয়া হয় । মিউজ়িকের ব্যবহারের মাধ্যমে এভাবে অপারেশনের বিষয়টি নিয়ে রিসার্চ করতে থাকেন এই চিকিৎসক । রোগীকে কেন সম্পূর্ণ অজ্ঞান না করে অপারেশনের সময় এভাবে মিউজিকের ব্যবহার করা হয়? এই চিকিৎসক বলেন, "জেনেরাল অ্যানাস্থেসিয়া করলে রোগী সম্পূর্ণ অজ্ঞান হয়ে যান । এর কিছুটা হ্যাজার্ড রয়েছে । এর জন্য আমাদেরও ভয় করে যদি রোগীর কোনও অসুবিধা হয়ে যায় ।" এই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে, ঘুমের ওষুধ দেওয়ার দরকার নেই এমন ভাবে অপারেশনের কথা ভাবেন তিনি । এই চিকিৎসকের কথায়, "শুধুমাত্র সঠিকভাবে যদি মিউজ়িককে ব্যবহার করা যায়, রোগীর সঙ্গে যদি সঠিক ভাবে কথাবার্তা বলা যায় । তাহলে রোগী অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্ত থাকেন । পাশাপাশি চিকিৎসার জন্য তাঁর খরচ কম হয় । হাসতে হাসতে রোগী অপারেশন থিয়েটারে ঢোকেন । হাসতে হাসতে বের হন । অপারেশনের কিছু ক্ষণ পরেই রোগীকে খাবার দিয়ে দেওয়া যেতে পারে ।"

তিনি বলেন, "জেনেরাল অ্যানাস্থেসিয়ায় কিছু কিছু সমস্যা হতে দেখেছি । আমার নিজেরও ভয় ছিল । এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নিই, রোগীকে আমরা জ্ঞানেই রাখব ।" কত শতাংশ সফল? তাঁর কথায়, "10 জনের মধ্যে 8 জন রেসপন্স করেন । দু'জনের রেসপন্স সেরকম আমরা হয়ত পাই না । সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা ঘুমের ওষুধ প্রয়োগ করতে হয় । 80-85 শতাংশ ক্ষেত্রে এটা সফল । কোনও ভয়-ভীতি কিছু থাকে না ।"

কী ভাবে অপারেশন করা হয়?

এই চিকিৎসক বলেন, "রোগীকে ভরতি করানোর পরে প্রথমে তাঁর বন্ধু হয়ে যেতে হবে । তার কী রোগ, জটিলতা কতটা, এসব বিষয়ে রোগীর সামনে সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা না করে, রোগীকে তাঁর দুশ্চিন্তার জায়গা থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে । তাঁর সঙ্গে অন্য কথা বলে অন্য গল্প করে, ভালো লাগা, না ভালোলাগা জেনে নিতে হবে । রোগীর হবি কী, এগুলো জেনে নিয়ে, সেগুলি নিয়ে বেশি কথা বলা । এ সবের কারণে রোগী অনেকটা রিলিফ হয়ে যান ।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "আমি তাঁকে একটি দুনিয়া থেকে অন্য একটি দুনিয়ায় নিয়ে আসি । যেটা হচ্ছে গানের দুনিয়া । রোগী এখানে অপারেশনের আগেই মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে যান । না হলে, একদিন বা দুই দিনের মধ্যে একজন রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে গান গাওয়ানো, বা বাজনা বাজানো সম্ভব নয় ।"

যে ক্ষেত্রে এটা সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে ঘুমের ওষুধ বা আরও কিছু ওষুধের সাহায্য নেওয়া হয় । চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুর বলেন, "এরজন্য যে রোগীর ক্ষতি হবে, তা বলব না । কিন্তু মিউজ়িক বা সুরের যে একটা জাদু রয়েছে, সেই জাদু বলে একজন মানুষ কতটা সুস্থ হতে পারেন, আমার এটাই প্রচেষ্টা ছিল এবং প্রচেষ্টা সফলভাবে চলছে ।"

যে কোনও অপারেশনের ক্ষেত্রে এটা সম্ভব? তিনি বলেন, "ব্রেন এবং স্পাইনাল সার্জারি ছাড়া, হাত, কোমর থেকে শুরু করে পায়ের পাতা পর্যন্ত হাড়ের যে সমস্যাগুলি হয়, ফ্রাকচার হয়, প্রতিটি ক্ষেত্রে মিউজ়িক থেরাপির আন্ডারে রেখে এ ভাবে অপারেশন করানো হয় ।"

সাধারণত যেভাবে অপারেশন করা হয়, সে ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে । এ কথা জানিয়ে চিকিৎসক বলেন, "ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি থাকে । তবে, মিউজ়িক থেরাপির মাধ্যমে এই ধরনের অপারেশনের ক্ষেত্রে তা একেবারেই থাকে না । রোগী স্বচ্ছন্দ্যে থাকেন । অতিরিক্ত ওষুধ প্রয়োগ করা হয় না । অপারেশন হয়েছে বুঝতেই পারেন না রোগী । অপারেশনের পরে তাড়াতাড়ি খাবার খেতে পারেন । সব মিলিয়ে কিছু কষ্ট কমে । বেশি কিছু ওষুধ আমরা প্রয়োগ করি না, এই জন্য তাঁর চিকিৎসার খরচও কমে ।"

এমন বলা হয়, রোগীদের সঙ্গে ডাক্তারবাবু যদি ভালোভাবে কথা বলেন, তা হলে 50 শতাংশ রোগ সেরে যায় । চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুর বলেন, "হয়ত তারও বেশি । যে কোনও ক্ষেত্রে ভালোবাসার হাত যদি মানুষের মাথায় বুলিয়ে দিতে পারা যায়, সত্যি সেখানে অর্ধেক রোগ সেরে যায় । কারণ রোগের ব্যথা যতটা শরীরে, তার থেকে মনেও অনেক বেশি থাকে । মানবিক হতে শেখা, একজন ডাক্তার হিসাবে তো বটেই, একজন মানুষ হিসাবেও এই রোলটি ফলো করা উচিত । যদি মানবিক হতে পারা যায়, যদি রোগীর বড় বন্ধু হতে পারা যায়, রোগ অনেকক্ষেত্রে কমে যায় ।"

আন্তর্জাতিক এই দুই স্বীকৃতির পরে কী পরিকল্পনা রয়েছে? তিনি বলেন, "মেডিকেল মিউজিক থেরাপির একটা কোর্স করাব । হাতে-কলমে কাজকর্ম শেখানো হবে । কিছু রোগের বিষয়ে বোঝানো হবে । যদি সরকারি বা সর্বভারতীয় স্তর থেকে একটু সহযোগিতা পাওয়া যায় তা হলে একটি মিউজ়িক থেরাপি ইনস্টিটিউট করার স্বপ্ন রয়েছে ।"

এই ধরনের অপারেশনের ক্ষেত্রে রোগী এবং তাঁর বাড়ির লোকজনদের কেমন মনোভাব?

এই চিকিৎসক বলেন, "রোগীর বাড়ির লোকজনরা এটাকে গ্রহণ করেন । তাঁরা বলেন, এ রকম চিকিৎসার কথা কোনও দিনও আগে শোনেননি । রোগীর অভিব্যক্তি সম্পূর্ণ আলাদা । অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরোনোর পরে বাইরে রোগীর বাড়ির লোকজন থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে আছেন, রোগী ঘুমিয়ে আছেন, কখন জ্ঞান ফিরবে, এমন অপেক্ষায় । এই ধরনের অপারেশনের ক্ষেত্রে এত প্রশ্নই আসে না । অপারেশনের পরে রোগীর সঙ্গে গল্প, হাসিঠাট্টায় মশগুল হয়ে পড়েন বাড়ির লোকজন । কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা অবাক হন, এটা কী ভাবে সম্ভব ৷ তাঁদের এমনও বক্তব্য থাকে, এটা কী হল ডাক্তারবাবু ৷ ঘুমোচ্ছিল, এখন পরিষ্কার কথা বলছে । এটা কী ভাবে হয় ৷" এই চিকিৎসক বলেন, "এখানে আমার কৃতিত্ব কতটা জানি না । এখানে সুরের এবং গানের কৃতিত্ব অনেক । তারই ফলস্বরূপ রোগীকে আমরা এভাবে দেখতে পাচ্ছি ।"

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলল । কী বলবেন?

চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুরের কথায়, "ভালো লাগছে । কেন বলছি? একটা দিন ছিল যখন সমালোচিত হয়েছি । মানুষ আমাকে পাগল বলেছেন । আজকে অনেক হাসপাতাল, অনেক জায়গায় এই কাজটা শুরু করেছে । আর আমি এটা করি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে । এর জন্য কোনও টাকা নেওয়া হয় না । এটাই আমার অ্যাচিভমেন্ট । এটাই আমার ভালোলাগা যে, আরও 10টি জায়গায় এই বিষয়টা ছড়িয়ে পড়ছে । মানুষ সচেতন হচ্ছেন । ডাক্তারবাবুরা মিউজ়িক ব্যবহার করছেন । এটার থেকে বড় পাওনা আর কী হতে পারে ।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "সব থেকে বড় স্বপ্ন এই যে মিউজ়িক থেরাপিস্ট বা পারফর্মিং আর্ট থেরাপিস্ট যাঁরা, তাঁদের প্লেসমেন্ট ঠিকমতো হচ্ছে না । সরকারের কাছে আবেদন জানাব, যাঁরা যোগ্য ক্যান্ডিডেট হবেন, তাঁদের জন্য যেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয় ।"

তিনি আরও বলেন, "সুরের জাদু দিয়ে মানুষকে ভালো করতে পারা, এটা সম্পূর্ণ আলাদা রকম । SSKM হাসপাতালে সদ্য শুরু হয়েছে । ধীরে ধীরে পশ্চিমবঙ্গে ছড়াচ্ছে । এটাতে আমি খুব খুশি হয়েছি । আমার ভালো লাগছে, আমার বহুদিনের ইচ্ছা আজকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে । ডাক্তাররা সচেতন হয়েছেন, মিউজ়িসিয়ানরা সচেতন হয়েছেন । এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে ।" আর, পুরস্কার? তিনি বলেন, "পুরস্কার তো পুরস্কারের জায়গাতে রইল । কিন্তু, সার্বিকভাবে এটা সফল হোক, এটাই আমার আন্তরিক ইচ্ছা ।"

কলকাতা, 30 জুলাই : অপারেশন থিয়েটারে রোগী গান শুনছেন অথবা গাইছেন । কিংবা, বাজাচ্ছেন কোনও বাদ্যযন্ত্র । রোগী জানেন তাঁর অপারেশন চলছে । আর, এই ধরনের অপারেশনের পরে, বাড়ির লোকজনের সঙ্গে খোশমেজাজে মেতে উঠতে পারছেন রোগী । এমন কী, দ্রুত বাড়িতেও ফিরতে পারছেন । মিউজ়িক অর্থাৎ, সুরকে সঙ্গী করে এ ভাবেই অপারেশন থিয়েটারের ধারণাটাই বদলে দিয়েছেন কলকাতার অর্থোপেডিক সার্জন, চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুর । আন্তর্জাতিক জোড়া স্বীকৃতি মিলল তাঁর এই স্বপ্নের প্রচেষ্টার‌ ।

এই ধরনের অপারেশনের ক্ষেত্রে এমন অবস্থাও হয় যে, রোগী বলছেন, কী যে গান গাইলাম ! অথবা বলছেন, কী যে গান শুনলাম ! সুরের মূর্ছনায় এতটাই বিভোর হয়ে যান রোগী, যে অপারেশনের পরে তিনি চিকিৎসকের কাছে জানতে চান, তাঁর অপারেশন হয়ে গেছে কি না । বিষয়টা এমনও হয় যে, রোগীর এক হাতে হয়ত অপারেশন চলছে । আর অন্য হাতে তিনি মেতে উঠেছেন বাদ্যযন্ত্রে, কোনও গানের সুরে । চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুরের কথায়, "অপারেশন চলছে । আর, রোগী গান গাইছেন বা শুনছেন বা কোনও বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছেন । এটাই নতুনত্ব । অপারেশন থিয়েটারের চিত্রটা এক রকম হয় । সেই চিত্রটা একটু বদলে দেওয়া গেছে । এখানে আমার মূল সহযোগী হচ্ছে সুর বা মিউজ়িক । এবং দ্বিতীয় হচ্ছে কাউন্সেলিং বা কথা বলা ।" তবে, শুধুমাত্র এভাবে অপারেশন নয় । তিনি বলেন, "প্রেসক্রিপশনেও গানের কথা লিখি । যাঁদের ঘুম হয় না, ডিপ্রেশনে রয়েছেন, তাঁদের জন্য প্রেসক্রিপশনে কিছু কিছু সুরের কথা লিখি ।"

বাজাচ্ছে রোগী, চলছে লাইভ অপারেশন


কলকাতার এই চিকিৎসকের এমন মিউজ়িক থেরাপির আন্তর্জাতিক জোড়া স্বীকৃতি মিলল এবার । মিউজ়িক থেরাপির উপর ইউনিভার্সাল রেকর্ডস ফোরাম-এর গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড 2019-এর প্রাপক এই চিকিৎসক । সম্প্রতি, ইউনিভার্সাল রেকর্ডস ফোরাম-এর তরফে চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুরের হাতে তাঁর এই মিউজ়িক থেরাপির স্বীকৃতি স্বরূপ শংসাপত্র এবং স্মারক তুলে দেওয়া হয়েছে । এর পাশাপাশি, 19 জুলাই অ্যামেরিকা বুক অফ রেকর্ডস-এর তরফেও এই চিকিৎসককে মেইল করে জানানো হয়েছে, মিউজ়িক থেরাপির উপর তাঁর অ্যাচিভমেন্ট শীঘ্রই অ্যামেরিকান বুক অব রেকর্ডসের তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে । আন্তর্জাতিক এই দুই স্বীকৃতির বিষয়ে চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুর বলেন, "এই দুই কর্তৃপক্ষ আমার রিসার্চের বিষয়টা পড়েছে, দেখেছে । পর্যালোচনার পরে, তারা নথিভুক্ত করেছে । আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ । বহুদিনের স্বপ্ন, প্রচেষ্টাকে একটা জায়গায় নিয়ে আসতে পারলাম ।"

ছোটোবেলা থেকেই অন্য ধরনের ভাবনা ঘুরে বেড়িয়েছে এই চিকিৎসকের মনে । তিনি এমন মনে করতেন, 2+2 করলে 4 হয় । কিন্তু, 2+2 না করে, 4-কে আরও কী ভাবে 4 করা যায় । ছোটোবেলা থেকে সংগীতপ্রেমী এই চিকিৎসক প্রয়াত ভি ভালসারার ছাত্র ছিলেন । গানের জগতে সক্রিয়ভাবে তাঁর যাওয়া হয়নি । তবে কখনও কখনও সুযোগ পেলে তিনি গানবাজনা করেন । তাঁর কথায়, "আমার স্যার বলেছিলেন, পারলে এটা (সুর)-কে মানবপ্রেমের কাজে লাগিও । এটা আমার মাথায় ছিল । 1998 থেকে অপারেশন থিয়েটারে মিউজ়িক নিয়ে চিন্তা-ভাবনা, পড়াশোনা শুরু করি । 2007 থেকে সক্রিয়ভাবে এই কাজটি করছি ।"

ছকভাঙার মানসিকতা তো রয়েছে । কিন্তু, সাধারণত যেভাবে অপারেশন থিয়েটার চলে, সেভাবে না করে কেন এভাবে অপারেশন করেন তিনি? সুমন্ত ঠাকুর বলেন, "প্রথম কথা, রোগীর যে ভয়-ভীতি বা টেনশন, যেমন, তিনি কবে ভালো হবেন, ডিপ্রেশন । এ সব থেকে রোগীকে বার করে নিয়ে আসার একটি প্রচেষ্টা । হাসপাতালের পরিবেশে হসপিটাল সিকনেস নামে একটি রোগ হয় । একটি সমস্যার সৃষ্টি হয় । এক্ষেত্রে ঘুমের বা অ্যান্টি ডিপ্রেশনের ওষুধ দিতে হয় । অপারেশন চলাকালীন রোগীর ব্লাড প্রেসারে তারতম্য হতে পারে, তিনি ভয় পেতে পারেন । তখন তাঁকে আইভি চ্যানেলের মাধ্যমে ঘুমের ওষুধ দিতে হয় ।" তবে, এ ভাবেই মিউজ়িক প্রয়োগের মাধ্যমে, এ সবের কিছুরই প্রয়োজন হয় না । এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, "মিউজ়িক প্রয়োগ করে এবং কথা বলে আমি যেটুকু দেখেছি, তখন কোনও ওষুধেরই প্রয়োজন হয় না । একজন রোগী স্বতঃস্ফূর্তও থাকেন । এটার জন্য সংগীতের কাছে আমি ভীষণ রকম কৃতজ্ঞ ।"

এভাবে অপারেশনের জন্য জেনেরাল অ্যানাস্থেসিয়া করা হয় না । অর্থাৎ, রোগীকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করা হয় না । যেখানে অপারেশনের প্রয়োজন, সেখানে অবশ করে দেওয়া হয় । মিউজ়িকের ব্যবহারের মাধ্যমে এভাবে অপারেশনের বিষয়টি নিয়ে রিসার্চ করতে থাকেন এই চিকিৎসক । রোগীকে কেন সম্পূর্ণ অজ্ঞান না করে অপারেশনের সময় এভাবে মিউজিকের ব্যবহার করা হয়? এই চিকিৎসক বলেন, "জেনেরাল অ্যানাস্থেসিয়া করলে রোগী সম্পূর্ণ অজ্ঞান হয়ে যান । এর কিছুটা হ্যাজার্ড রয়েছে । এর জন্য আমাদেরও ভয় করে যদি রোগীর কোনও অসুবিধা হয়ে যায় ।" এই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে, ঘুমের ওষুধ দেওয়ার দরকার নেই এমন ভাবে অপারেশনের কথা ভাবেন তিনি । এই চিকিৎসকের কথায়, "শুধুমাত্র সঠিকভাবে যদি মিউজ়িককে ব্যবহার করা যায়, রোগীর সঙ্গে যদি সঠিক ভাবে কথাবার্তা বলা যায় । তাহলে রোগী অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্ত থাকেন । পাশাপাশি চিকিৎসার জন্য তাঁর খরচ কম হয় । হাসতে হাসতে রোগী অপারেশন থিয়েটারে ঢোকেন । হাসতে হাসতে বের হন । অপারেশনের কিছু ক্ষণ পরেই রোগীকে খাবার দিয়ে দেওয়া যেতে পারে ।"

তিনি বলেন, "জেনেরাল অ্যানাস্থেসিয়ায় কিছু কিছু সমস্যা হতে দেখেছি । আমার নিজেরও ভয় ছিল । এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নিই, রোগীকে আমরা জ্ঞানেই রাখব ।" কত শতাংশ সফল? তাঁর কথায়, "10 জনের মধ্যে 8 জন রেসপন্স করেন । দু'জনের রেসপন্স সেরকম আমরা হয়ত পাই না । সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা ঘুমের ওষুধ প্রয়োগ করতে হয় । 80-85 শতাংশ ক্ষেত্রে এটা সফল । কোনও ভয়-ভীতি কিছু থাকে না ।"

কী ভাবে অপারেশন করা হয়?

এই চিকিৎসক বলেন, "রোগীকে ভরতি করানোর পরে প্রথমে তাঁর বন্ধু হয়ে যেতে হবে । তার কী রোগ, জটিলতা কতটা, এসব বিষয়ে রোগীর সামনে সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা না করে, রোগীকে তাঁর দুশ্চিন্তার জায়গা থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে । তাঁর সঙ্গে অন্য কথা বলে অন্য গল্প করে, ভালো লাগা, না ভালোলাগা জেনে নিতে হবে । রোগীর হবি কী, এগুলো জেনে নিয়ে, সেগুলি নিয়ে বেশি কথা বলা । এ সবের কারণে রোগী অনেকটা রিলিফ হয়ে যান ।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "আমি তাঁকে একটি দুনিয়া থেকে অন্য একটি দুনিয়ায় নিয়ে আসি । যেটা হচ্ছে গানের দুনিয়া । রোগী এখানে অপারেশনের আগেই মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে যান । না হলে, একদিন বা দুই দিনের মধ্যে একজন রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে গান গাওয়ানো, বা বাজনা বাজানো সম্ভব নয় ।"

যে ক্ষেত্রে এটা সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে ঘুমের ওষুধ বা আরও কিছু ওষুধের সাহায্য নেওয়া হয় । চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুর বলেন, "এরজন্য যে রোগীর ক্ষতি হবে, তা বলব না । কিন্তু মিউজ়িক বা সুরের যে একটা জাদু রয়েছে, সেই জাদু বলে একজন মানুষ কতটা সুস্থ হতে পারেন, আমার এটাই প্রচেষ্টা ছিল এবং প্রচেষ্টা সফলভাবে চলছে ।"

যে কোনও অপারেশনের ক্ষেত্রে এটা সম্ভব? তিনি বলেন, "ব্রেন এবং স্পাইনাল সার্জারি ছাড়া, হাত, কোমর থেকে শুরু করে পায়ের পাতা পর্যন্ত হাড়ের যে সমস্যাগুলি হয়, ফ্রাকচার হয়, প্রতিটি ক্ষেত্রে মিউজ়িক থেরাপির আন্ডারে রেখে এ ভাবে অপারেশন করানো হয় ।"

সাধারণত যেভাবে অপারেশন করা হয়, সে ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে । এ কথা জানিয়ে চিকিৎসক বলেন, "ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি থাকে । তবে, মিউজ়িক থেরাপির মাধ্যমে এই ধরনের অপারেশনের ক্ষেত্রে তা একেবারেই থাকে না । রোগী স্বচ্ছন্দ্যে থাকেন । অতিরিক্ত ওষুধ প্রয়োগ করা হয় না । অপারেশন হয়েছে বুঝতেই পারেন না রোগী । অপারেশনের পরে তাড়াতাড়ি খাবার খেতে পারেন । সব মিলিয়ে কিছু কষ্ট কমে । বেশি কিছু ওষুধ আমরা প্রয়োগ করি না, এই জন্য তাঁর চিকিৎসার খরচও কমে ।"

এমন বলা হয়, রোগীদের সঙ্গে ডাক্তারবাবু যদি ভালোভাবে কথা বলেন, তা হলে 50 শতাংশ রোগ সেরে যায় । চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুর বলেন, "হয়ত তারও বেশি । যে কোনও ক্ষেত্রে ভালোবাসার হাত যদি মানুষের মাথায় বুলিয়ে দিতে পারা যায়, সত্যি সেখানে অর্ধেক রোগ সেরে যায় । কারণ রোগের ব্যথা যতটা শরীরে, তার থেকে মনেও অনেক বেশি থাকে । মানবিক হতে শেখা, একজন ডাক্তার হিসাবে তো বটেই, একজন মানুষ হিসাবেও এই রোলটি ফলো করা উচিত । যদি মানবিক হতে পারা যায়, যদি রোগীর বড় বন্ধু হতে পারা যায়, রোগ অনেকক্ষেত্রে কমে যায় ।"

আন্তর্জাতিক এই দুই স্বীকৃতির পরে কী পরিকল্পনা রয়েছে? তিনি বলেন, "মেডিকেল মিউজিক থেরাপির একটা কোর্স করাব । হাতে-কলমে কাজকর্ম শেখানো হবে । কিছু রোগের বিষয়ে বোঝানো হবে । যদি সরকারি বা সর্বভারতীয় স্তর থেকে একটু সহযোগিতা পাওয়া যায় তা হলে একটি মিউজ়িক থেরাপি ইনস্টিটিউট করার স্বপ্ন রয়েছে ।"

এই ধরনের অপারেশনের ক্ষেত্রে রোগী এবং তাঁর বাড়ির লোকজনদের কেমন মনোভাব?

এই চিকিৎসক বলেন, "রোগীর বাড়ির লোকজনরা এটাকে গ্রহণ করেন । তাঁরা বলেন, এ রকম চিকিৎসার কথা কোনও দিনও আগে শোনেননি । রোগীর অভিব্যক্তি সম্পূর্ণ আলাদা । অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরোনোর পরে বাইরে রোগীর বাড়ির লোকজন থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে আছেন, রোগী ঘুমিয়ে আছেন, কখন জ্ঞান ফিরবে, এমন অপেক্ষায় । এই ধরনের অপারেশনের ক্ষেত্রে এত প্রশ্নই আসে না । অপারেশনের পরে রোগীর সঙ্গে গল্প, হাসিঠাট্টায় মশগুল হয়ে পড়েন বাড়ির লোকজন । কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা অবাক হন, এটা কী ভাবে সম্ভব ৷ তাঁদের এমনও বক্তব্য থাকে, এটা কী হল ডাক্তারবাবু ৷ ঘুমোচ্ছিল, এখন পরিষ্কার কথা বলছে । এটা কী ভাবে হয় ৷" এই চিকিৎসক বলেন, "এখানে আমার কৃতিত্ব কতটা জানি না । এখানে সুরের এবং গানের কৃতিত্ব অনেক । তারই ফলস্বরূপ রোগীকে আমরা এভাবে দেখতে পাচ্ছি ।"

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলল । কী বলবেন?

চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুরের কথায়, "ভালো লাগছে । কেন বলছি? একটা দিন ছিল যখন সমালোচিত হয়েছি । মানুষ আমাকে পাগল বলেছেন । আজকে অনেক হাসপাতাল, অনেক জায়গায় এই কাজটা শুরু করেছে । আর আমি এটা করি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে । এর জন্য কোনও টাকা নেওয়া হয় না । এটাই আমার অ্যাচিভমেন্ট । এটাই আমার ভালোলাগা যে, আরও 10টি জায়গায় এই বিষয়টা ছড়িয়ে পড়ছে । মানুষ সচেতন হচ্ছেন । ডাক্তারবাবুরা মিউজ়িক ব্যবহার করছেন । এটার থেকে বড় পাওনা আর কী হতে পারে ।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "সব থেকে বড় স্বপ্ন এই যে মিউজ়িক থেরাপিস্ট বা পারফর্মিং আর্ট থেরাপিস্ট যাঁরা, তাঁদের প্লেসমেন্ট ঠিকমতো হচ্ছে না । সরকারের কাছে আবেদন জানাব, যাঁরা যোগ্য ক্যান্ডিডেট হবেন, তাঁদের জন্য যেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয় ।"

তিনি আরও বলেন, "সুরের জাদু দিয়ে মানুষকে ভালো করতে পারা, এটা সম্পূর্ণ আলাদা রকম । SSKM হাসপাতালে সদ্য শুরু হয়েছে । ধীরে ধীরে পশ্চিমবঙ্গে ছড়াচ্ছে । এটাতে আমি খুব খুশি হয়েছি । আমার ভালো লাগছে, আমার বহুদিনের ইচ্ছা আজকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে । ডাক্তাররা সচেতন হয়েছেন, মিউজ়িসিয়ানরা সচেতন হয়েছেন । এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে ।" আর, পুরস্কার? তিনি বলেন, "পুরস্কার তো পুরস্কারের জায়গাতে রইল । কিন্তু, সার্বিকভাবে এটা সফল হোক, এটাই আমার আন্তরিক ইচ্ছা ।"

Intro:কলকাতা, ২৪ জুলাই: অপারেশন থিয়েটারে রোগী গান শুনছেন অথবা, গাইছেন। কিংবা, বাজাচ্ছেন কোনও বাদ্যযন্ত্র। এই অবস্থায় রোগী বুঝতেই পারছেন না যে, তাঁর অপারেশন করে চলেছেন চিকিৎসকরা। আর, এই ধরনের অপারেশনের পরে, বাড়ির লোকজনের সঙ্গে খোশমেজাজে মেতে উঠতে পারছেন রোগী। এমনকী, দ্রুত বাড়িতেও ফিরতে পারছেন। মিউজিক অর্থাৎ, সুরকে সঙ্গী করে এ ভাবেই অপারেশন থিয়েটারের ধারণাটাই বদলে দিয়েছেন কলকাতার অর্থোপেডিক সার্জন, চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুর। অবশেষে, আন্তর্জাতিক জোড়া স্বীকৃতি মিলল তাঁর এই স্বপ্নের প্রচেষ্টার‌।
Body:এই ধরনের অপারেশনের ক্ষেত্রে এমন অবস্থাও হয় যে, রোগী বলছেন, কী যে গান গাইলাম! অথবা, বলছেন, কী যে গান শুনলাম! সুরের মূর্ছনায় এতটাই বিভোর হয়ে যান রোগী, যে অপারেশনের পরে তিনি চিকিৎসকের কাছে জানতে চান, তাঁর অপারেশন হয়ে গিয়েছে কি না। বিষয়টা এমনও হয় যে, রোগীর এক হাতে হয়তো অপারেশন চলছে। আর অন্য হাতে তিনি মেতে উঠেছেন বাদ্যযন্ত্রে, কোনও গানের সুরে। চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুরের কথায়, "অপারেশন চলছে। আর, রোগী গান গাইছেন, বা শুনছেন, বা কোনও বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছেন। এটাই নতুনত্ব। অপারেশন থিয়েটারের চিত্রটা এক রকম হয়। সেই চিত্রটা একটু বলে দেওয়া গিয়েছে। এখানে আমার মূল সহযোগী হচ্ছে সুর বা মিউজিক। এবং, দ্বিতীয় হচ্ছে কাউন্সেলিং বা কথা বলা।" তবে, শুধুমাত্র এভাবে অপারেশন নয়। তিনি বলেন, "প্রেসক্রিপশনেও গানের কথা লিখি। যাঁদের ঘুম হয় না, ডিপ্রেশনে রয়েছেন, তাঁদের জন্য প্রেসক্রিপশনে কিছু কিছু সুরের কথা লিখি।"

আর, কলকাতার এই চিকিৎসকের এমন মিউজিক থেরাপির আন্তর্জাতিক জোড়া স্বীকৃতি মিলল এবার। মিউজিক থেরাপির উপর ইউনিভার্সাল রেকর্ডস ফোরাম-এর গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড ২০১৯-এর প্রাপক এই চিকিৎসক। সম্প্রতি, ইউনিভার্সাল রেকর্ডস ফোরাম-এর তরফে চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুরের হাতে তাঁর এই মিউজিক থেরাপির স্বীকৃতি স্বরূপ শংসাপত্র এবং স্মারক তুলে দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি, গত ১৯ জুলাই আমেরিকা বুক অফ রেকর্ডস-এর তরফেও চিকিৎসক সম্বন্ধে ঠাকুরকে মেল করে জানানো হয়েছে, মিউজিক থেরাপির উপর এই চিকিৎসকের অ্যাচিভমেন্ট শীঘ্রই আমেরিকান বুক অব রেকর্ডসের তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক এই দুই স্বীকৃতির বিষয়ে চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুর বলেন, "এই দুই কর্তৃপক্ষ আমার রিসার্চের সাবজেক্টটা পড়েছে, দেখেছে। পর্যালোচনার পরে, তাঁরা নথিভুক্ত করেছে। আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। বহুদিনের স্বপ্ন, প্রচেষ্টাকে একটা জায়গায় নিয়ে আসতে পারলাম।"

ছোটবেলা থেকেই অন্য ধরনের ভাবনা ঘুরে বেরিয়েছে এই চিকিৎসকের মনে। তিনি এমন মনে করতেন, ২+২ করলে ৪ হয়। কিন্তু, ২+২ না করে, ৪-কে আরও কীভাবে ৪ করা যায়। এ রকম ছকভাঙ্গা মানসিকতা অপারেশন থিয়েটারে সুর নিয়ে রিসার্চের ক্ষেত্রে এই চিকিৎসকের অঙ্গ। ছোটবেলা থেকে সঙ্গীতপ্রেমী এই চিকিৎসক প্রয়াত ভি ভালসারার ছাত্র ছিলেন। গানের জগতে সক্রিয়ভাবে তাঁর যাওয়া হয়নি। তবে কখনও কখনও সুযোগ পেলে তিনি গানবাজনা করেন। তাঁর কথায়, "আমার স্যার বলেছিলেন, পারলে এটা (সুর)-কে মানবপ্রেমের কাজে লাগিও। এটা আমার মাথায় ছিল। ১৯৯৮ থেকে অপারেশন থিয়েটারে মিউজিক নিয়ে চিন্তা-ভাবনা, পড়াশোনা শুরু করি। ২০০৭ থেকে সক্রিয়ভাবে এই কাজটি করছি।"

ছকভাঙ্গা মানসিকতা তো রয়েছে। কিন্তু, সাধারণত যেভাবে অপারেশন থিয়েটার চলে, সেভাবে না করে কেন এভাবে অপারেশন করেন তিনি? সুমন্ত ঠাকুর বলেন, "প্রথম কথা, রোগীর যে ভয়-ভীতি বা টেনশন, যেমন, তিনি কবে ভালো হবেন, ডিপ্রেশন। এ সব থেকে রোগীকে বার করে নিয়ে আসার একটি প্রচেষ্টা। হাসপাতালের পরিবেশে হসপিটাল সিকনেস নামে একটি রোগ হয়। একটি সমস্যার সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে ঘুমের বা অ্যান্টি ডিপ্রেশনের ওষুধ দিতে হয়। অপারেশন চলাকালীন রোগীর ব্লাড প্রেসারে তারতম্য হতে পারে, তিনি ভয় পেতে পারেন। তখন তাঁকে আইভি চ্যানেলের মাধ্যমে ঘুমের ওষুধ দিতে হয়।" তবে, এ ভাবেই মিউজিক প্রয়োগের মাধ্যমে, এ সবের কিছুরই প্রয়োজন হয় না। এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, "মিউজিক প্রয়োগ করে এবং কথা বলে আমি যেটুকু দেখেছি, এগুলির কিছুরই প্রয়োজন হয় না, একজন রোগী স্বতঃস্ফূর্ত থাকেন। এটার জন্য সঙ্গীতের কাছে আমি ভীষণ রকম কৃতজ্ঞ।"

এভাবে অপারেশনের জন্য জেনারেল অ্যানেসথেসিয়া করা হয় না। অর্থাৎ, রোগীকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করা হয় না। যেখানে অপারেশনের প্রয়োজন, সেখানে অবশ করে দেওয়া হয়। মিউজিকের ব্যবহারের মাধ্যমে এভাবে অপারেশনের বিষয়টি নিয়ে রিসার্চ করতে থাকেন এই চিকিৎসক। রোগীকে কেন সম্পূর্ণ অজ্ঞান না করে অপারেশনের সময় এভাবে মিউজিকের ব্যবহার করা হয়? এই চিকিৎসক বলেন, "জেনারেল অ্যানাসথেসিয়া করলে রোগী সম্পূর্ণ অজ্ঞান হয়ে যান। এর কিছুটা হ্যাজার্ড রয়েছে। এর জন্য আমাদেরও ভয় করে যদি রোগীর কোনও অসুবিধা হয়ে যায়।" এই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে, ঘুমের ওষুধ দেওয়ার দরকার নেই এমন ভাবে অপারেশনের কথা ভাবেন তিনি। এই চিকিৎসকের কথায়, "শুধুমাত্র সঠিকভাবে যদি মিউজিককে ব্যবহার করা যায়, রোগীর সঙ্গে যদি সঠিক ভাবে কথাবার্তা বলা যায়। তাহলে রোগী অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্ত থাকেন। দ্বিতীয়তঃ, চিকিৎসার জন্য তাঁর খরচ কম হয়। হাসতে হাসতে রোগী অপারেশন থিয়েটারে ঢোকেন। হাসতে হাসতে বের হন। অপারেশনের কিছু ক্ষণ পরেই রোগীকে খাবার দিয়ে দেওয়া যেতে পারে।"

তিনি বলেন, "জেনারেল অ্যানেসথেসিয়ায় কিছু কিছু সমস্যা হতে দেখেছি। আমার নিজেরও ভয় ছিল। এর পর আমরা সিদ্ধান্ত নিই, রোগীকে আমরা জ্ঞানেই রাখব।" কত শতাংশ সফল? তাঁর কথায়, "১০ জনের মধ্যে ৮ জন রেসপন্স করেন। দু'জনের রেসপন্স সেরকম আমরা হয়তো পাই না। সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা ঘুমের ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। ৮০-৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এটা সফল। কোনও ভয়-ভীতি কিছু থাকে না।" কীভাবে অপারেশন করা হয়? এই চিকিৎসক বলেন, "রোগীকে ভর্তি করানোর পরে প্রথমে তাঁর বন্ধু হয়ে যেতে হবে। তার কী রোগ, জটিলতা কতটা, এসব বিষয়ে রোগীর সামনে সম্পূর্ণ এক্সপ্লানেশন না করে, রোগীকে তাঁর দুশ্চিন্তার জায়গা থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে। তাঁর সঙ্গে অন্য কথা বলে অন্য গল্প করে, ভালো লাগা, না ভালোলাগা জেনে নেওয়া। রোগীর হবি কী, এগুলো জেনে নিয়ে, সেগুলি নিয়ে বেশি কথা বলা। এ সবের কারণে রোগী অনেকটা রিলিফ হয়ে যান।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "আমি তাঁকে একটি দুনিয়া থেকে অন্য একটি ভালো দুনিয়ায় নিয়ে এলাম। এটা হচ্ছে গানের দুনিয়া। এবং, এর সঙ্গে ভালো কথাবার্তা বলা। রোগী এখানে অপারেশনের আগেই মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে যান। না হলে, একদিন বা দুই দিনের মধ্যে একজন রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে গান গাওয়ানো, বা বাজনা বাজানো সম্ভব নয়।"

যে ক্ষেত্রে এটা সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে ঘুমের ওষুধ বা আরও কিছু ওষুধের সাহায্য নেওয়া হয়। চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুর বলেন, "এর জন্য যে রোগীর ক্ষতি হবে, তা বলব না। কিন্তু মিউজিক বা সুরের যে একটা যাদু রয়েছে, সেই যাদু বলে একজন মানুষ কতটা সুস্থ হতে পারেন, আমার এটাই প্রচেষ্টা ছিল এবং প্রচেষ্টা সফলভাবে চলছে।" যে কোনও অপারেশনের ক্ষেত্রে এটা সম্ভব? তিনি বলেন, "ব্রেন এবং স্পাইনাল সার্জারি ছাড়া, গোটা হাত, কোমর থেকে শুরু করে পায়ের পাতা পর্যন্ত হাড়ের যে সমস্যাগুলি হয়, ফ্র্যাকচার হয়, প্রতিটি ক্ষেত্রে মিউজিক থেরাপির আন্ডারে রেখে এ ভাবে অপারেশন করানো হয়।"

সাধারণত যেভাবে অপারেশন করা হয়, সে ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ কথা জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, "ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি থাকে। তবে, মিউজিক থেরাপির মাধ্যমে এই ধরনের অপারেশনের ক্ষেত্রে তা একেবারেই থাকে না। রোগী স্বচ্ছন্দ্যে থাকেন। এখানে, অতিরিক্ত ওষুধের প্রয়োগ করা হচ্ছে না। অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে রোগী অত্যন্ত স্বচ্ছন্দে থাকেন আর ১০ জন সাধারণ মানুষের মতো। অপারেশন হয়েছে বুঝতেই পারবেন না রোগী। অপারেশনের পরে তাড়াতাড়ি খাবার খেতে পারেন। সব মিলিয়ে কিছু কষ্ট কমে। বেশ কিছু ওষুধ আমরা প্রয়োগ করছি না, এই জন্য তাঁর চিকিৎসার খরচও কমে।"
Conclusion:এমন বলা হয়, রোগীদের সঙ্গে ডাক্তারবাবু যদি ভালোভাবে কথা বলেন, তা হলে ৫০ শতাংশ রোগ সেরে যায়। চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুর বলেন, "হয়তো তারও বেশি। যে কোনও ক্ষেত্রে ভালোবাসার হাত যদি মানুষের মাথায় বুলিয়ে দিতে পারা যায়, সত্যি সেখানে অর্ধেক রোগ সেরে যায়। কারণ রোগের ব্যথা যতটা শরীরে, তার থেকে মনেও অনেক বেশি থাকে। মানবিক হতে শেখা, একজন ডাক্তার হিসাবে তো বটেই, একজন মানুষ হিসাবেও এই রোলটি ফলো করা উচিত। যদি মানবিক হতে পারা যায়, যদি রোগীর বড় বন্ধু হতে পারা যায়, রোগ অনেকক্ষেত্রে কমে যায়।" আন্তর্জাতিক এই দুই স্বীকৃতির পরে কী পরিকল্পনা রয়েছে? তিনি বলেন, "মেডিকেল মিউজিক থেরাপির একটা কোর্স করাব। হাতে-কলমে কাজকর্ম শেখানো হবে। কিছু রোগের বিষয়ে বোঝানো হবে। যদি সরকারি বা সর্বভারতীয় স্তর থেকে একটু সহযোগিতা পাওয়া যায় তা হলে একটি মিউজিক থেরাপি ইনস্টিটিউট করার স্বপ্ন রয়েছে।"

এই ধরনের অপারেশনের ক্ষেত্রে রোগী এবং তাঁর বাড়ির লোকজনদের কেমন মনোভাব? এই চিকিৎসক বলেন, "রোগীর বাড়ির লোকজনরা এটাকে অ্যাক্সেপ্ট করেন। তাঁরা বলেন, এ রকম কোনও দিন শোনেননি। রোগীর অভিব্যক্তি সম্পূর্ণ আলাদা। অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরোনোর পরে বাইরে রোগীর বাড়ির লোকজন থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে আছেন, রোগী ঘুমিয়ে আছেন, কখন জ্ঞান ফিরবে, এমন অপেক্ষায়। এই ধরনের অপারেশনের ক্ষেত্রে এত প্রশ্নই আসে না। অপারেশনের পরে রোগীর সঙ্গে গল্প, হাসিঠাট্টায় মশগুল হয়ে পড়েন বাড়ির লোকজন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা অবাক হন, এটা কীভাবে সম্ভব! তাঁদের এমনও বক্তব্য থাকে, এটা কী হল ডাক্তারবাবু! ঘুমোচ্ছিল, এখন পরিষ্কার কথা বলছে। এটা কীভাবে হয়!" এই চিকিৎসক বলেন, "এখানে আমার কৃতিত্ব কতটা জানি না। এখানে সুরের এবং গানের কৃতিত্ব অনেক। তারই ফলস্বরূপ রোগীকে আমরা এভাবে দেখতে পাচ্ছি‌।"

এই কৃতিত্বের স্বীকৃতি মিলল। কী বলবেন? চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুরের কথায়, "ভালো লাগছে। কেন বলছি? একটা দিন ছিল যখন সমালোচিত হয়েছি। মানুষ আমাকে পাগল বলেছেন। আজকে অনেক হাসপাতাল, অনেক জায়গায় এই কাজটা শুরু করেছে। আর আমি এটা করি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এর জন্য কোনও টাকা নেওয়া হয় না। এটাই আমার অ্যাচিভমেন্ট। এটাই আমার ভালোলাগা যে, আরও ১০টি জায়গায় এই বিষয়টা ছড়িয়ে পড়ছে। মানুষ সচেতন হচ্ছেন। ডাক্তারবাবুরা মিউজিক ব্যবহার করছেন। এটার থেকে বড় পাওনা আর কী হতে পারে।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "সব থেকে বড় স্বপ্ন এই যে মিউজিক থেরাপিস্ট বা পারফর্মিং আর্ট থেরাপিস্ট যাঁরা, তাঁদের প্লেসমেন্ট ঠিকমতো হচ্ছে না। সরকারের কাছে আবেদন জানাব, যাঁরা যোগ্য ক্যান্ডিডেট হবেন, তাঁদের জন্য যেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়।"

এই চিকিৎসক বলেন, "সুরের যাদু দিয়ে মানুষকে ভালঝ করতে পারা, এটা সম্পূর্ণ আলাদা রকম। পিজি হাসপাতালে সদ্য শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে পশ্চিমবঙ্গে ছড়াচ্ছে। এটাকে আমি খুব খুশি হয়েছি। আমার ভালো লাগছে, আমার বহুদিনের ইচ্ছা আজকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। ডাক্তাররা সচেতন হয়েছেন, মিউজিসিয়ানরা সচেতন হয়েছেন। এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে।" আর, পুরস্কার? তিনি বলেন, "পুরস্কার তো পুরস্কারের জায়গাতে রইল। কিন্তু, সার্বিকভাবে এটা সফল হোক, এটাই আমার আন্তরিক ইচ্ছা।"

_______

বাইট:
wb_kol_01a_music_operation_dr_award_byte_7203421
চিকিৎসক সুমন্ত ঠাকুরের বক্তব্য


ভিস্যুয়াল: সুরের তালে চলছে অপারেশন
wb_kol_01b_music_operation_dr_award_vis_7203421
এবং,
wb_kol_01c_music_operation_dr_award_vis_7203421



Last Updated : Aug 1, 2019, 9:51 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.