কলকাতা, 24 নভেম্বর: অতিরিক্ত পদ তৈরি করে এসএসসি'র নিয়োগ ইস্যুতে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার ৷ তাদের আবেদন বৃহস্পতিবার খারিজ করে দিয়েছে আদালত (Division Bench of Cal HC rejects WB Govt Plea on SSC Recruitment Probe) ৷
নতুন শূন্যপদ তৈরি করে চাকরিহারাদের চাকরি দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত স্কুল সার্ভিস কমিশন নিয়েছিল তা খতিয়ে দেখতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় । সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করে রাজ্য । কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চেও ধাক্কা খেল রাজ্য । একই সঙ্গে, এই বিষয়ে জবাব দেওয়ার জন্য রাজ্যের শিক্ষা সচিবকে আদালতে হাজিরা দেওয়ার যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, বহাল থাকছে তাও (SSC Recruitment Case) ৷
এদিন নির্দেশে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ইতিমধ্যেই সিবিআই তদন্ত চলছে একাধিক মামলায় । তারমধ্যেই কোর্ট (Calcutta High Court) সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছে অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করে নিয়োগের জন্য আদালতে যে আবেদন জমা হয়েছে এবং পরে তা প্রত্যাহার করতে চেয়ে আবেদন করা হয়েছে, তার নেপথ্যে কে বা কারা রয়েছে তা খতিয়ে দেখতে ৷ ভিভিশন বেঞ্চের মতে, এই নির্দেশ অযৌক্তিক কিছু নয় । তারপরই রাজ্যের আবেদন খারিজ করে ডিভিশন বেঞ্চ । বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ এদিন জানিয়েছে, সিঙ্গেল বেঞ্চের দেওয়া সিবিআই তদন্তের নির্দেশে হস্তক্ষেপ করবে না ডিভিশন বেঞ্চ ।
আরও পড়ুন: শীর্ষ আদালতের বিচারপতিদের কাজের চাপ নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রধান বিচারপতি
এদিন ডিভিশন বেঞ্চে মমলার শুনানিতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,"রাজ্য অতিরিক্ত শূন্য পদ তৈরির বিজ্ঞপ্তি দেয় 19 মে । বুধবার বিকেল সাড়ে চারটের সময় আদালতের এই অর্ডার লেখা হলেও সাড়ে 6টা পর্যন্ত সেটা আপলোড হয়নি । অথচ সাড়ে 4টের পরেই সিবিআই আমাদের আইনজীবীকে জেরা শুরু করে ।"
তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন,"এখানে আদালত গ্রাহ্য অপরাধ নেই । সেখানে কী করে তদন্ত হয়! এর আগে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যে সব তদন্ত শুরু হয়েছে এটা তার থেকে ভিন্ন । এখানে তেমন কিছু নেই, তাহলে কী করে তদন্ত । আমি একটা কোনও প্রশাসনিক ত্রুটি করেছি, ধরে নিলাম । যদি সেই ত্রুটি হয়, তার জন্য ফৌজদারি মামলা কী হতে পারে? আমি যদি আবেদন প্রত্যাহার করতে চাই তাহলে কী সেটা পারব না? সিঙ্গেল বেঞ্চ কোনও আইন মেনে অর্ডার দেয়নি । আগের এই সংক্রান্ত যেসব মামলা চলছে তার সঙ্গে জুড়ে এই মামলা তদন্ত চালাতে বলছে কোর্ট । সেটা কী করে হয়? ওই মামলাগুলি একেবারে পৃথক মামলা । সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ আছে । এখানে ফৌজদারি অপরাধের ধারা দেওয়ার সুযোগ নেই । এখানে যে ফৌজদারি অপরাধ সংগঠিত হয়েছে সেই প্রমাণ কোথায়?"
অন্যদিকে, রাজ্যের এডভোকেট জেনারেল (এজি) বলেন, "যে তদন্ত করতে বলা হয়েছে, সেখানে কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই । সরকারের 19 মে'র বিজ্ঞপ্তি নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই এই এজলাসে । অন্য এজলাসে সেই বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ হয়েছে । রিট মামলায় কোনও কর্তাকে ডেকে পাঠানোর এক্তিয়ার নেই । অতিরিক্ত পদে চাকরি যাওয়াদের যুক্ত করার ব্যাপারে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল । কোনও সিদ্ধান্ত নয় । কোর্টের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল । এসএসসি র আবেদন নিয়ে শিক্ষা সচিবকে উত্তর দিতে ডাকা যায় না । কে আবেদন লিখেছে সেটা খোঁজার নির্দেশ দেওয়ার এক্তিয়ার কি কোর্টের আছে?"
মামলাকারীদের তরফে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্রাচার্য বলেন,"সিঙ্গেল বেঞ্চের এক্তিয়ার আছে কি না, এই প্রশ্নে ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলায় আগেই রায় দিয়েছে সিঙ্গেল বেঞ্চের পক্ষে । চারটে আবেদন করা হয়েছে । রাজ্যের পদ পূরণের বিজ্ঞপ্তিতে চাকরি যাওয়াদের চাকরি দেওয়ার কথা ছিল না । সেটা এসএসসি আবেদনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে ।"
বিচারপতি এদিন জানতে চান চক্রান্ত যে হয়েছে এটা কোথা থেকে পাওয়া যাচ্ছে? জবাবে বিকাশ রঞ্জন জানান, নিয়োগে দুর্নীতির কথা মেনেছে ডিভিশন বেঞ্চও । সেখানে এই নিয়োগে ওই দুর্নীতির যোগ আছে । একজন সচিবকে কোর্ট ডাকলেই সরকারকে চ্যালেঞ্জ করা হয় না । হাইকোর্ট ডাকতেই পারে । সব পক্ষের বক্তব্যর পর ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, সিঙ্গেল বেঞ্চের দেওয়া সিবিআই তদন্তের নির্দেশই বহাল থাকবে ।