কলকাতা, 2 নভেম্বর: দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের প্রথম মহিলা ইএমইউ চালক দীপান্বিতা দাস । রেলশহর খড়গপুরেই তাঁর বাড়িতে ৷ স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে সংসার৷ স্বামীও রেলের উচ্চপদস্থ আধিকারিক ৷
তবে ট্রেনের চালকের আসনে দীপান্বিতা একেবারেই নতুন নন ৷ দীর্ঘ 20 বছর ধরে বছর 45-এর দীপান্বিতা রেলের চাকরি করছেন ৷ তার মধ্যে টানা 10 বছর পণ্যবাহী ট্রেন চালিয়েছেন ৷ তবে যাত্রীবাহী ট্রেন নিয়ে এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনের উদ্দেশে যাওয়া এই প্রথম ৷ আপাতত তিনি দক্ষিণ পূর্ব রেলের খড়গপুর-মেদিনীপুর এবং হাওড়া-খড়গপুর রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচ্ছেন ৷
রেল সূত্রে খবর, যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর কাজটা একেবারেই সহজ নয় । লোকাল ট্রেন রাজ্যের লাইফ লাইন । লোকাল ট্রেনে প্রতিদিন যাতায়াত করেন লক্ষ লক্ষ মানুষ । তাই বলাই বাহুল্য যে বাড়তি সতর্কতা ও সাহসের সঙ্গে উপস্থিত বুদ্ধিরও প্রয়োজন হয় প্রতি মুহূর্তে ৷ মালগাড়ি বা পণ্যবাহী ট্রেনে লোকো পাইলটের সঙ্গে আরও একজন সহকারী থাকেন । কিন্তু প্যাসেঞ্জার বা যাত্রীবাহী ট্রেনের ক্ষেত্রে ইঞ্জিনে একাই থাকতে হয় চালককে ৷
দীপান্বিতা দাস জানিয়েছেন যে এই দায়িত্ব পাওয়ার পরে তিনি বুঝেছিলেন যে একেবারে ঠান্ডা মাথায় তাঁকে এই কাজটা করতে হবে প্রতিদিন । তবে মাঝেমধ্যে কিছু যাত্রীর কটূক্তি করে চালকদের বিব্রত করে ৷ তাঁদের উত্তেজিত করে ৷ কিন্তু এই সব ক্ষেত্রেও মাথা একেবারে ঠান্ডা রেখে ট্রেন চালাতে হবে । না হলে ঘটে যেতে পারে কোনও বড়সড় বিপত্তি ।
উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে দীপান্বিতা ইঞ্জিনিয়ারিং ও রেল কমিউনিকেশনে ডিপ্লোমা শেষ করেন ৷ তারপর রেলের পরীক্ষা দিয়ে 2003 সালে সহকারি লোকো পাইলট হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন ৷ সেখানেও তিনিই প্রথম মহিলা সহকারী লোকো পাইলট হয়েছিলেন । প্রথমে আদ্রা ডিভিশনে, তারপর চাকরিতে বদলি হয়ে 2006 সালে খড়গপুর ডিভিশনে আসেন । এরপর 2014 সাল পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রেনের লোকো পাইলট ছিলেন তিনি । দক্ষিণ পূর্ব রেল ডিভিশনে তিনিও প্রথম মহিলা লোকো পাইলট ছিলেন ।
কাজের ক্ষেত্রে একাধিক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আজ তিনি একাই প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ যাত্রীকে সুরক্ষিতভাবে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছেন । তিনি জানান যে কাজের সময় নির্দিষ্ট থাকে না । তবে তিনি তাঁর পরিবার থেকে পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছেন ।
দীপান্বিতা বলেন, ‘‘এই পদোন্নতি হওয়ার আগে দু’মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েছি । তবে আমি আলাদা করে বিরাট কিছু করেছি বলে মনে হয় না ৷ কারণ, আমি এই কাজ গত 20 বছর ধরেই করে আসছি । তবে হ্যাঁ যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে অনেক বেশ সচেতন থাকতে হয় । মাথা ঠান্ডা রাখতে হয় । ট্রেন চালাতে চালাতে প্রতিদিন নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, সেগুলিকে কী সমাধান করা যায় সেই বিষয়ে সচেতন থাকতে হয় ।"
এর আগে দেশের প্রথম মহিলা ট্রেন চালক হয়ে নজির গড়েছিলেন সুরেখা যাদব । 1988 সালে তিনিই এশিয়া মহাদেশের প্রথম ট্রেন চালক হন ।
আরও পড়ুন: বন্দে ভারতের প্রথম মহিলা চালক, কে এই সুরেখা যাদব ?