কলকাতা, 10 এপ্রিল : স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, এরাজ্যে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা 116। অথচ, স্বাস্থ্য দপ্তরের সর্বশেষ দেওয়া আপডেট অনুযায়ী, রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা 89। তথ্যের এমন ফারাক যেখানে রয়েছে, সেখানে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের অ্যানালিসিস সেল কতটা কার্যকর ? তা নিয়েই এবার প্রশ্ন তুললেন সরকারি চিকিৎসকরা। শুধুমাত্র তথ্য বিশ্লেষণ নয়, এই অ্যানালিসিস সেলের কমিটি গঠনের বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা ।
যেভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে কোরোনা ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণের জন্য এই সংক্রান্ত যাবতীয় সঠিক তথ্য প্রকাশ্যে আনার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা । অথচ, রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে কোরোনার বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে। রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠনগুলির তরফেও স্বাস্থ্য দপ্তরের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে গঠন করা হয়েছে COVID-19 ডেটা অ্যানালিসিস সেল। এই সেলে 9 জন সদস্য রয়েছেন। এই 9 জনের মধ্যে দু'জন কমিউনিটি মেডিসিন, একজন এন্ডোক্রিনোলজি, একজন নিউরো মেডিসিনের চিকিৎসককে রাখা হয়েছে। বাকি 5 সদস্যের মধ্যে একজন স্বাস্থ্য দপ্তরের স্পেশাল সেক্রেটারি এবং একজন DDHS রয়েছেন। এই সেলের বাকি তিন সদস্যের কেউ চিকিৎসক নন। কিন্তু এবার তাঁদের কাজ নিয়েই নানা প্রশ্ন উঠছে । ফারাক দেখা যাচ্ছে রাজ্য ও কেন্দ্রের পরিসংখ্যানে ।
এবিষয়ে রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, "বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে COVID-19-এ কতজন আক্রান্ত হয়েছেন, কত জনের মৃত্যু হয়েছে, কত জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন, এ সব বিষয়ে সঠিক তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। এটাই বড় সমস্যার জায়গা। এই অবস্থায় স্বাস্থ্য দপ্তরের COVID-19 ডেটা অ্যানালিসিস সেলের কার্যকারিতা কী থাকবে?"
তিনি বলেন, "এই অ্যানালিসিস সেলের গুরুত্ব রয়েছে। সামগ্রিকভাবে তথ্যের সঠিক অ্যানালিসিস হলে বড় কাজ হবে । এটা প্রয়োজন। কিন্তু, তথ্য যদি চেপে দেওয়া হয়, যদি তথ্যের অপব্যাখ্যা করা হয়, তা হলে কোনও লাভ নেই। এই অ্যানালিসিস সেলে এন্ডোক্রিনোলজিস্ট এবং নিউরো মেডিসিনের চিকিৎসকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কমিউনিটি মেডিসিনের দু'জন চিকিৎসক রয়েছেন, এটা প্রয়োজন। কিন্তু, এই সেলে ভাইরোলজিস্ট, পালমোনোলজিস্ট, ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিস্টদের রাখা হয়নি। এই সেল নাম কা ওয়াস্তে হয়েছে । করতে হয়, তাই করা হয়েছে।"
রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের অন্য একটি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গলের সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, "যে কোনও মহামারির ক্ষেত্রে সঠিক পরিসংখ্যান, তথ্যের উপর নির্ভর করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হয়। এই অ্যানালিসিস সেল নিয়ে বিরোধিতা নেই। কিন্তু, এই সেলে সদস্য হিসেবে কাদের রাখা হয়েছে, সেটা দেখতে হবে। এই সেলে শুধু কম্পিউটার জানা লোক দরকার না কি এপিডেমিওলজিস্ট দরকার না কি ভাইরোলজিস্ট দরকার। এই সেলে এন্ডোক্রিনোলজিস্ট, নিউরোলজিস্ট কী করবেন, সেটাই আমাদের প্রশ্ন।"
তিনি বলেন, "COVID-19 ডেটা অ্যানালিসিস সেলে কমিউনিটি মেডিসিনের পাশাপাশি ভাইরোলজিস্ট, এপিডেমিওলজিস্ট, চেস্ট মেডিসিন, ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিস্টের প্রয়োজন। যে উদ্দেশ্যে এই সেল এবং বিভিন্ন কমিটি গড়া হচ্ছে, তার সঙ্গে এই সেল এবং অন্য কমিটির সদস্য হিসেবে যাঁদের রাখা হয়েছে, তাঁরা কতটা সাযুজ্যপূর্ণ, তা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে।"
গতকাল স্বাস্থ্য দপ্তরের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী এ রাজ্যে COVID-19-এ আক্রান্তের সংখ্যা 89 । গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী আক্রান্তের সংখ্যা ছিল 103। আজ সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য বলছে, এরাজ্যে কোরোনায় আক্রান্তের সংখ্যা 116 । সুস্থ হয়েছেন 16 জন। মৃতের সংখ্যা 5।