কলকাতা, 6 সেপ্টেম্বর: এ যেন কে কাকে টক্কর দেবে তার প্রতিযোগিতা। রাজ্যপাল এগিয়ে থাকবেন নাকি মুখ্যমন্ত্রী ! রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে একতরফাভাবে উপাচার্য নিয়োগ ও রাজ্য সরকারের নির্দেশ অমান্য করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেদের মতো শাসন চালাতে পারে, রাজ্যপালের এই নির্দেশের পর মঙ্গলবার শিক্ষক দিবসেই সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তার কয়েকঘণ্টার মধ্যেই ফের রাজ্যের আরও এক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস । মঙ্গলবার রাতে নদিয়ার কৃষ্ণনগরের কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক কাজল দে-কে নিয়োগ করেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। তা নিয়ে ফের বিতর্ক মাথা চাড়া দিয়েছে ।
কারণ, এক্ষেত্রেও উচ্চ শিক্ষা দফতর কিংবা সার্চ কমিটির কোনও পরামর্শ নেওয়া হয়নি । সূত্রের দাবি, রাজ্যপাল কলকাতায় নেই । তারপরও রাজ্যের বাইরে থেকে এ রাজ্যেরই এক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করেছেন । সেই খবর সরকারিভাবে রাজভবনের তরফের রাত সাড়ে বারোটার পরে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হচ্ছে । এর আগে এক দফায় 16টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করেন রাজ্যপাল। রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য প্রাক্তন বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়কে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাজকুমার কোঠারিকে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ এবং তাঁদের নিজেদের মতো করে কাজ করার নির্দেশ দেওয়ার পর রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত তীব্র আকার নেয় ৷
মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর উষ্মাপ্রকাশের পরই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু রাজ্যের 31টি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে বিকাশ ভবনে তলব করেছেন বৈঠক করতে । রাজ্য সরকারের বা রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতরের পরামর্শ বা নির্দেশ অনুসারে কাজ না করলে সরকারি তরফে সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও স্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে । রাজ্য এবং রাজ্যপালের এই দড়ি টানাটানির মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য এবং কর্তৃপক্ষরা বেকায়দায় পড়েছেন বলে শিক্ষামহলের একাংশের মত ।
পাশাপাশি রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং পড়ুয়ারাও সমস্যায় পড়ছেন বলে অভিযোগ। তা নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোও মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপালকে দোষারোপ করছেন এবং নিজেদের দড়ি টানাটানি বন্ধ রাখার কথা জানাচ্ছেন। কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, "রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল দু'জনই সমান অপরাধী। দু'জনের এই ধরনের কার্যকলাপ অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ এবং তাঁদের সর্বনাশ করার অধিকার দু'জনের কারও নেই । অবিলম্বে এই ধরনের কার্যকলাপ বন্ধ হওয়া উচিত । অভিভাবকদেরও এই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিত ।"
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, "আজ মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, মাইনে বন্ধ করে দেবেন। আগে একজন বলেছিলেন আমরা মাইনে দিই। তিনি এখন জেলে। নবান্ন আর রাজভবনের সংঘাতে নাভিশ্বাস উঠছে উচ্চ শিক্ষার । শিক্ষাকে লাটে তোলা হয়েছে। শিক্ষক দিবসে আমরা অভিভাবকদের বলব আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেরণায় আগামী প্রজন্ম যাতে মূর্খ না হন সেই শিক্ষা দিতে হবে ।"
আরও পড়ুন : মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, শুক্রে 31টি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের সঙ্গে বৈঠকে ব্রাত্য