ETV Bharat / state

শিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সে কমছে আগ্রহ ? ভরতির আবেদন কমেছে D.El.Ed-এ

1 সেপ্টেম্বর থেকে সম্পূর্ণ মকুব করে দেওয়া হয় আবেদন ফি। কিন্তু, তাতেও কোনও কাজ হয়নি । অন্যান্য বছর D.El.Ed কোর্সে ভরতির জন্য 6 লাখের মতো আবেদন জমা পড়ে । কিন্তু, চলতি বছর সেই সংখ্যা 2 লাখেরও কম বলে জানা গেছে । D.El.Ed কোর্স করে চার-পাঁচ বছর ধরে নিয়োগের অপেক্ষায় বসে থাকা প্রার্থীরা কম আবেদনের পিছনে শিক্ষক নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতাকেই দায়ি করেছেন ।

Primary education
Primary education
author img

By

Published : Sep 18, 2020, 5:52 PM IST

কলকাতা, 18 সেপ্টেম্বর : 10 অগাস্ট থেকে রাজ্যজুড়ে ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন বা D.El.Ed কোর্সে ভরতির জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু করেছিল পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (WBBPE)। প্রথমে 31 অগাস্ট আবেদন জমার শেষ তারিখ থাকলেও পরে সেই সময়সীমা বৃদ্ধি করে 14 সেপ্টেম্বর করা হয় । কিন্তু, তাতেও বিশেষ কাজ হল না । অন্যান্য বছরের তুলনায় 50 শতাংশেরও কম আবেদন জমা পড়ল এই বছর । পর্ষদ সূত্রে জানা গেছে, ২ লাখেরও কম আবেদন জমা পড়েছে এই বছর । স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি শিক্ষক প্রশিক্ষণের কোর্সে আগ্রহ কমছে প্রার্থীদের ? আর তার নেপথ্যে শিক্ষক নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতাই কি দায়ি ?

প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক স্তরে শিক্ষকতার প্রশিক্ষণের জন্য দু'বছরের ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন কোর্সটি করানো হয়। এই নিয়ে চতুর্থ বছর অনলাইনে আবেদনপত্র গ্রহণ করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। রাজ্যজুড়ে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট 45 হাজার 700টি আসনের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হয় 10 অগাস্ট থেকে । এই বছর কোরোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে গত বছরের তুলনায় আবেদন ফি কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রথম থেকেই । আগে জেনেরাল ক্যাটেগরির প্রার্থীদের জন্য 300 টাকা ও সংরক্ষিত ক্যাটেগরির প্রার্থীদের জন্য 150 টাকা আবেদন ফি ছিল । তা এই বছর কমিয়ে যথাক্রমে 100 টাকা ও 50 টাকা করা হয়েছিল । সূত্রের খবর, তারপরেও খুব কম সংখ্যক আবেদন জমা পড়ে। তাই পরে আবেদনের সময়সীমা বাড়িয়ে 14 সেপ্টেম্বর করা হয় । 1 সেপ্টেম্বর থেকে সম্পূর্ণ মকুব করে দেওয়া হয় আবেদন ফি। কিন্তু, তাতেও কোনও কাজ হয়নি । অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম আবেদন জমা পড়েছে বলে জানা গেছে । অন্যান্য বছর D.El.Ed কোর্সে ভরতির জন্য 6 লাখের মতো আবেদন জমা পড়ে । কিন্তু, চলতি বছর সেই সংখ্যা 2 লাখেরও কম বলে জানা গেছে ।

পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের মতে, কোরোনা ভাইরাসের জেরে তৈরি পরিস্থিতিই কম আবেদন জমা পড়ার জন্য দায়ি। তাঁর বক্তব্য, "এই বছর লক্ষাধিক আবেদন জমা পড়েছে । অন্য বছর আর একটু বেশি হয় । এই বছর একটু কম আছে । এমনিতে একজন প্রার্থী একাধিক কলেজে ভরতির আবেদন করে থাকে । ফলে, আবেদনের সংখ্যাটা অনেক বেশি থাকে । এই বছর কোরোনার কারণে তাঁরা তাঁদের বাড়ির কাছের প্রতিষ্ঠানেই ভরতি হওয়া পছন্দ করছে ‌। ফলে, সে বাড়ির কাছের একটা-দুটো প্রতিষ্ঠানেই আবেদন করছে । এটা আবেদনের সংখ্যা কম হওয়ার একটা অন্যতম কারণ । আগে একজন প্রার্থী দশটা করে আবেদন করে থাকলে, এখন একটা কী দুটোতে আবেদন করছে । সবমিলিয়ে লক্ষাধিক আবেদন জমা পড়েছে । তবে, এক ব্যক্তির একাধিক আবেদন করার প্রবণতা অনেক কম COVID-19-এর কারণে । এই বছর আবেদন কম জমা পড়েছে । কিন্তু, তার পিছনে COVID-19 একটা বড় কারণ ।"

যদিও D.El.Ed কোর্স করে চার-পাঁচ বছর ধরে নিয়োগের অপেক্ষায় বসে থাকা প্রার্থীরা পর্ষদ সভাপতির যুক্তি মানতে নারাজ । তাঁরা কম আবেদনের পিছনে শিক্ষক নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতাকেই দায়ি করেছেন । বীরভূমের পলাশ মণ্ডল 2013-2015 সালের ব্যাচে D.El.Ed কোর্স করেছেন । এখনও পর্যন্ত মাত্র একটি টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্টে (TET) অংশগ্রহণ করতে পেরেছিলেন তিনি । তারপর প্রায় পাঁচ বছর কেটে গেলেও এখনও TET পরীক্ষায় বসতে পারেননি তিনি । চলতি বছর D.El.Ed-এর জন্য কম আবেদন জমা পড়া নিয়ে তাঁর বক্তব্য, "আমরা 2015-র পর আর TET পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাইনি । পাঁচ বছর হয়ে গেল । 2017 সালে শেষ ফর্ম পূরণ করলেও এখনও পরীক্ষার দিনও ঘোষণা হয়নি । বয়স বেড়ে যাচ্ছে । এর প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময় ধরে চলে । পরীক্ষা হয় । তার ছয়মাস, এক বছর পর রেজ়াল্ট বের হয় । তার এক বছর পর হয়ত ইন্টারভিউ হয় । তারপরে ভেরিফিকেশন । আর কেউ যদি পরীক্ষায় পাশ না করতে পারে তাঁকে যে আর কত বছর অপেক্ষা করতে হবে তার কোনও ঠিক নেই । আগে পরীক্ষাগুলো ঠিক করে হত । একজন এত টাকা, সময় খরচ করে চাকরির পরীক্ষাই না দিতে পারে বা চাকরি না পায় তাহলে একটা হতাশা তো আসবেই । সেই জন্য এই কোর্স করার উপর মানুষের আগ্রহটা কমে যাচ্ছে বলে আমার মনে হয় । কোরোনার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই । রাজ্য সরকার যা করছে তার উপর বিতৃষ্ণায় মানুষ আর এই কোর্স করতে চাইছেন না ।"

পূর্ব বর্ধমানের তরুণ গড়াই বলেন, "প্রথমদিকে 75 হাজারের মতো আবেদন জমা পড়েছিল বলে শুনেছিলাম । পরে আর কিছুটা বেড়েছে হয়ত । আমি 2013-15 সালের ব্যাচে পাশ করেছিলাম । এখন আমার ভাই-বোনের বয়সিদের D.El.Ed-এর কথা বললেই একটা নাক-সিটকানি ব্যাপার, অনিহা চলে এসেছে যে, কিছুই হবে না । দুই বছর নষ্ট, টাকা নষ্ট । বামেদের আমলে প্রত্যেক বছর নিয়োগ হত । প্রার্থীরা এক বছর না পেলে পরের বছর চেষ্টা করার সুযোগ পেত । এখন তো কিছুই হয় না । আমি 2015-তে একবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম । তারপর থেকে পাঁচ বছর হয়ে গেল, বসে আছি, পরীক্ষা দিতে পারিনি । নতুন জেনারেশন শিক্ষকতায় যেতে চায় । কিন্তু, পেশাদার কোর্স করার পর নিয়োগ না হলে সময়, অর্থ নষ্ট করে লাভ কী । আর দুই বছরের কোর্স হলেও আসলে তিন থেকে চার বছর লেগে যায় । এটা পেশাদারি প্রশিক্ষণের কোর্স হওয়ায় অন্য কোনও কাজেও লাগবে না । এইসব কারণেই অধিকাংশই এখন এই কোর্স করায় আগ্রহী হচ্ছে না ।"

পশ্চিম মেদিনীপুরের কৃষ্ণেন্দু দেব বলেন, "এই কোর্সটা দীর্ঘদিন ধরে চলে । একটা দুই বছরের কোর্স শেষ হতে তিন-চার বছর লাগিয়ে দেয় । 2018-20 ব্যাচের পরীক্ষা এখনও হয়নি । দ্বিতীয়ত, নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা ‌‌। 2017 সালের অক্টোবর ফর্ম পূরণের পর প্রায় তিন বছর হয়ে গেল । এখনও প্রাইমারি TET হয়নি । সরকারের কোনও হেলদোল নেই । পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে । এই কারণেই কেউ ভরতি হতে চাইছে না । নিজের বাড়ি, জমি বেঁচে চাকরির আশা নিয়ে পড়াশোনা করার পর এই অবস্থা হলে কে পড়তে চাইবে ? ছেলে-মেয়েরা এই অবস্থা দেখে সচেতন হয়ে গেছে । এটা স্বাভাবিক ব্যাপার । মানুষ কোর্সটাতেই আসতে চাইছে না । কোরোনা কোনও ইশু নয় । সবাই দেখছে নিয়োগের টালমাটাল অবস্থা । পর্ষদ সভাপতি নিজেদের মুখ বাঁচাবার জন্য এই কথা বলছেন ।"

রাজ্যের মোট 649টি প্রতিষ্ঠানে D.El.Ed কোর্স করানো হয় । যার মধ্যে 60টি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বাকিগুলি সেল্ফ ফিনান্স প্রতিষ্ঠান । চলতি বছর সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে মোট আসন সংখ্যা তিন হাজার 700টি ও বেসরকারিতে 42 হাজার । মোট 45 হাজার 700টি আসনের মধ্যে 45 হাজার 200টি আসন বাংলা মাধ্যমের জন্য। 300টি আসন হিন্দি, 100টি নেপালি, 50টি উর্দু ও সাঁওতালি মাধ্যমের জন্য 50টি আসন রয়েছে ।

কলকাতা, 18 সেপ্টেম্বর : 10 অগাস্ট থেকে রাজ্যজুড়ে ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন বা D.El.Ed কোর্সে ভরতির জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু করেছিল পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (WBBPE)। প্রথমে 31 অগাস্ট আবেদন জমার শেষ তারিখ থাকলেও পরে সেই সময়সীমা বৃদ্ধি করে 14 সেপ্টেম্বর করা হয় । কিন্তু, তাতেও বিশেষ কাজ হল না । অন্যান্য বছরের তুলনায় 50 শতাংশেরও কম আবেদন জমা পড়ল এই বছর । পর্ষদ সূত্রে জানা গেছে, ২ লাখেরও কম আবেদন জমা পড়েছে এই বছর । স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি শিক্ষক প্রশিক্ষণের কোর্সে আগ্রহ কমছে প্রার্থীদের ? আর তার নেপথ্যে শিক্ষক নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতাই কি দায়ি ?

প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক স্তরে শিক্ষকতার প্রশিক্ষণের জন্য দু'বছরের ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন কোর্সটি করানো হয়। এই নিয়ে চতুর্থ বছর অনলাইনে আবেদনপত্র গ্রহণ করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। রাজ্যজুড়ে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট 45 হাজার 700টি আসনের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হয় 10 অগাস্ট থেকে । এই বছর কোরোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে গত বছরের তুলনায় আবেদন ফি কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রথম থেকেই । আগে জেনেরাল ক্যাটেগরির প্রার্থীদের জন্য 300 টাকা ও সংরক্ষিত ক্যাটেগরির প্রার্থীদের জন্য 150 টাকা আবেদন ফি ছিল । তা এই বছর কমিয়ে যথাক্রমে 100 টাকা ও 50 টাকা করা হয়েছিল । সূত্রের খবর, তারপরেও খুব কম সংখ্যক আবেদন জমা পড়ে। তাই পরে আবেদনের সময়সীমা বাড়িয়ে 14 সেপ্টেম্বর করা হয় । 1 সেপ্টেম্বর থেকে সম্পূর্ণ মকুব করে দেওয়া হয় আবেদন ফি। কিন্তু, তাতেও কোনও কাজ হয়নি । অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম আবেদন জমা পড়েছে বলে জানা গেছে । অন্যান্য বছর D.El.Ed কোর্সে ভরতির জন্য 6 লাখের মতো আবেদন জমা পড়ে । কিন্তু, চলতি বছর সেই সংখ্যা 2 লাখেরও কম বলে জানা গেছে ।

পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের মতে, কোরোনা ভাইরাসের জেরে তৈরি পরিস্থিতিই কম আবেদন জমা পড়ার জন্য দায়ি। তাঁর বক্তব্য, "এই বছর লক্ষাধিক আবেদন জমা পড়েছে । অন্য বছর আর একটু বেশি হয় । এই বছর একটু কম আছে । এমনিতে একজন প্রার্থী একাধিক কলেজে ভরতির আবেদন করে থাকে । ফলে, আবেদনের সংখ্যাটা অনেক বেশি থাকে । এই বছর কোরোনার কারণে তাঁরা তাঁদের বাড়ির কাছের প্রতিষ্ঠানেই ভরতি হওয়া পছন্দ করছে ‌। ফলে, সে বাড়ির কাছের একটা-দুটো প্রতিষ্ঠানেই আবেদন করছে । এটা আবেদনের সংখ্যা কম হওয়ার একটা অন্যতম কারণ । আগে একজন প্রার্থী দশটা করে আবেদন করে থাকলে, এখন একটা কী দুটোতে আবেদন করছে । সবমিলিয়ে লক্ষাধিক আবেদন জমা পড়েছে । তবে, এক ব্যক্তির একাধিক আবেদন করার প্রবণতা অনেক কম COVID-19-এর কারণে । এই বছর আবেদন কম জমা পড়েছে । কিন্তু, তার পিছনে COVID-19 একটা বড় কারণ ।"

যদিও D.El.Ed কোর্স করে চার-পাঁচ বছর ধরে নিয়োগের অপেক্ষায় বসে থাকা প্রার্থীরা পর্ষদ সভাপতির যুক্তি মানতে নারাজ । তাঁরা কম আবেদনের পিছনে শিক্ষক নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতাকেই দায়ি করেছেন । বীরভূমের পলাশ মণ্ডল 2013-2015 সালের ব্যাচে D.El.Ed কোর্স করেছেন । এখনও পর্যন্ত মাত্র একটি টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্টে (TET) অংশগ্রহণ করতে পেরেছিলেন তিনি । তারপর প্রায় পাঁচ বছর কেটে গেলেও এখনও TET পরীক্ষায় বসতে পারেননি তিনি । চলতি বছর D.El.Ed-এর জন্য কম আবেদন জমা পড়া নিয়ে তাঁর বক্তব্য, "আমরা 2015-র পর আর TET পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাইনি । পাঁচ বছর হয়ে গেল । 2017 সালে শেষ ফর্ম পূরণ করলেও এখনও পরীক্ষার দিনও ঘোষণা হয়নি । বয়স বেড়ে যাচ্ছে । এর প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময় ধরে চলে । পরীক্ষা হয় । তার ছয়মাস, এক বছর পর রেজ়াল্ট বের হয় । তার এক বছর পর হয়ত ইন্টারভিউ হয় । তারপরে ভেরিফিকেশন । আর কেউ যদি পরীক্ষায় পাশ না করতে পারে তাঁকে যে আর কত বছর অপেক্ষা করতে হবে তার কোনও ঠিক নেই । আগে পরীক্ষাগুলো ঠিক করে হত । একজন এত টাকা, সময় খরচ করে চাকরির পরীক্ষাই না দিতে পারে বা চাকরি না পায় তাহলে একটা হতাশা তো আসবেই । সেই জন্য এই কোর্স করার উপর মানুষের আগ্রহটা কমে যাচ্ছে বলে আমার মনে হয় । কোরোনার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই । রাজ্য সরকার যা করছে তার উপর বিতৃষ্ণায় মানুষ আর এই কোর্স করতে চাইছেন না ।"

পূর্ব বর্ধমানের তরুণ গড়াই বলেন, "প্রথমদিকে 75 হাজারের মতো আবেদন জমা পড়েছিল বলে শুনেছিলাম । পরে আর কিছুটা বেড়েছে হয়ত । আমি 2013-15 সালের ব্যাচে পাশ করেছিলাম । এখন আমার ভাই-বোনের বয়সিদের D.El.Ed-এর কথা বললেই একটা নাক-সিটকানি ব্যাপার, অনিহা চলে এসেছে যে, কিছুই হবে না । দুই বছর নষ্ট, টাকা নষ্ট । বামেদের আমলে প্রত্যেক বছর নিয়োগ হত । প্রার্থীরা এক বছর না পেলে পরের বছর চেষ্টা করার সুযোগ পেত । এখন তো কিছুই হয় না । আমি 2015-তে একবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম । তারপর থেকে পাঁচ বছর হয়ে গেল, বসে আছি, পরীক্ষা দিতে পারিনি । নতুন জেনারেশন শিক্ষকতায় যেতে চায় । কিন্তু, পেশাদার কোর্স করার পর নিয়োগ না হলে সময়, অর্থ নষ্ট করে লাভ কী । আর দুই বছরের কোর্স হলেও আসলে তিন থেকে চার বছর লেগে যায় । এটা পেশাদারি প্রশিক্ষণের কোর্স হওয়ায় অন্য কোনও কাজেও লাগবে না । এইসব কারণেই অধিকাংশই এখন এই কোর্স করায় আগ্রহী হচ্ছে না ।"

পশ্চিম মেদিনীপুরের কৃষ্ণেন্দু দেব বলেন, "এই কোর্সটা দীর্ঘদিন ধরে চলে । একটা দুই বছরের কোর্স শেষ হতে তিন-চার বছর লাগিয়ে দেয় । 2018-20 ব্যাচের পরীক্ষা এখনও হয়নি । দ্বিতীয়ত, নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা ‌‌। 2017 সালের অক্টোবর ফর্ম পূরণের পর প্রায় তিন বছর হয়ে গেল । এখনও প্রাইমারি TET হয়নি । সরকারের কোনও হেলদোল নেই । পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে । এই কারণেই কেউ ভরতি হতে চাইছে না । নিজের বাড়ি, জমি বেঁচে চাকরির আশা নিয়ে পড়াশোনা করার পর এই অবস্থা হলে কে পড়তে চাইবে ? ছেলে-মেয়েরা এই অবস্থা দেখে সচেতন হয়ে গেছে । এটা স্বাভাবিক ব্যাপার । মানুষ কোর্সটাতেই আসতে চাইছে না । কোরোনা কোনও ইশু নয় । সবাই দেখছে নিয়োগের টালমাটাল অবস্থা । পর্ষদ সভাপতি নিজেদের মুখ বাঁচাবার জন্য এই কথা বলছেন ।"

রাজ্যের মোট 649টি প্রতিষ্ঠানে D.El.Ed কোর্স করানো হয় । যার মধ্যে 60টি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বাকিগুলি সেল্ফ ফিনান্স প্রতিষ্ঠান । চলতি বছর সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে মোট আসন সংখ্যা তিন হাজার 700টি ও বেসরকারিতে 42 হাজার । মোট 45 হাজার 700টি আসনের মধ্যে 45 হাজার 200টি আসন বাংলা মাধ্যমের জন্য। 300টি আসন হিন্দি, 100টি নেপালি, 50টি উর্দু ও সাঁওতালি মাধ্যমের জন্য 50টি আসন রয়েছে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.