কলকাতা, 11 অগস্ট: রাত দশটায় ফোন যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়ের ডিন অফ স্টুডেন্টের কাছে। এক ছাত্র জানায়, এক জনকে ঝাঁপ দিতে বলা হয়েছে। তারপরই ঘটে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে এক জনকে। তবে ওইদিন হস্টেল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে বারবারই উঠছে প্রশ্ন ? অভিযোগ উঠেছে দিনের পর দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীরা মেন হস্টেলে কীভাবে থেকে গিয়েছে ? ওইদিন রাতে ডিন অফ স্টুডেন্টকেও ফোন করা হয়েছিল, তবে কোনও উত্তর মেলেনি বলেই অভিযোগ পড়ুয়াদের। তা নিয়ে এবার মুখ খুললেন ডিন অফ স্টুডেন্ট রজত রায়। ফোন না-তোলার কথা অস্বীকার করেছেন তিনি ৷
শুক্রবার তিনি বলেন, "ঘটনার দিন রাত 10টা পাঁচ মিনিট নাগাদ আমার কাছে এক পড়ুয়ার ফোন আসে। সে আমায় বলে এক পড়ুয়াকে বলা হয়েছে হস্টেলে থাকবি না, ওখান থেকে ঝাঁপাতে হবে। আমি তখনই তাঁকে হস্টেলের সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলি। উনি ক্যাম্পাসেই থাকেন ৷ যাতে পড়ুয়ারা প্রতি মুহূর্তে ওনাকে পান। তারপর আমি সুপারকেও ফোন করি। যে পড়ুয়াটি আমায় ফোন করেছিল তার নামও বলেছি এবং সুপার তাকে চিনতেও পারেন। ওর অভিযোগটা তখন আমি সুপারকে জানাই এবং এ বিষয়ের রিপোর্টও আমাকে জানাতে বলেছিলাম।"
তবে এই কথোপকথনের পর আর কোনও ফোন পাননি বলেই জানান ডিন অফ স্টুডেন্ট। প্রায় দু'ঘণ্টা পর 12টা পাঁচ মিনিট নাগাদ হস্টেলের সুপারিনটেন্ট ফোন করেন রজতবাবুকে। সে তখন জানায় এক ছাত্র উপর থেকে নীচে পড়ে গিয়েছে। তাঁর মুখ দিয়ে অনর্গল রক্ত পড়ছে বলেও জানান তিনি। বহু ছাত্র তাঁকে ঘিরে রয়েছে এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে তাঁর কাছে খবর আসে। এই কথা শোনা মাত্রই নিজের গাড়ি নিয়ে হস্টেলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন ডিন অফ স্টুডেন্ট। এদিন তিনি বলেন, "তবে যে অভিযোগ উঠেছে আমি ফোন ধরিনি সেটা হল গাড়ি চালানোর সময় ৷ কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে পৌঁছে যাই ৷ তারপর সারাক্ষণ সেখানেই ছিলাম।"
আরও পড়ুন: যাদবপুরে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সৌরভ
এই পুরো ঘটনার পর আবারও প্রশ্ন উঠছে হস্টেল কর্তৃপক্ষর বিরুদ্ধে। প্রায় দু'ঘণ্টা তাদের লেগে যায় এই পুরো বিষয়টা নজরদারি করতে এবং ততক্ষণে শেষরক্ষা করা যায় না স্বপ্নদীপ কুণ্ডুকে। তবে ইতিমধ্যেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে অভিযুক্ত সৌরভ চৌধুরীকে। যে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ৷ 2022 সালে তাঁর পড়াশোনা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও দীর্ঘদিন ওই হস্টেলেই গেস্ট হিসেবে থেকে গিয়েছেন। এমনকি স্বপ্নদীপের মা-বাবাও অভিযোগ তুলেছে সৌরভই তাদের সন্তানকে গেস্ট হিসাবে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে এই স্বপ্নদ্বীপের ঘটনা ঘটার পরই হস্টেলের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে যে, সমস্ত পড়ুয়ারা ব্লক এ-1 এবং ব্লক এ-2-তে থাকে তাদের নিউ বয়েজ হস্টেলের কিছুদিনের জন্য স্থানান্তর করা হবে ৷ পাশাপাশি বহিরাগত ও প্রাক্তনদের হস্টেলে প্রবেশ বন্ধ।