কলকাতা, 1 এপ্রিল : করোনা দৈনিক সংক্রমণ রাজ্যে ফের প্রায় এক হাজারে পৌঁছে গিয়েছে । এদিকে, ইতিমধ্যেই চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, এ রাজ্যেও করোনার সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হয়ে গিয়েছে । যদিও, স্বাস্থ্য দফতর বলছে, এখনও এ রাজ্যে সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হয়নি । আর, এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে চিকিৎসকদের বিভিন্ন অংশের তরফে জানানো হচ্ছে, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক । কিন্তু, ফের লকডাউন কাম্য নয় ।
গতকাল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, গত 24 ঘণ্টায় রাজ্যে 982 জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন । অর্থাৎ, এ রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ ফের প্রায় এক হাজারে পৌঁছে গিয়েছে । এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে রাজ্যে কি ফের লকডাউনের প্রয়োজন ? লকডাউনে আমাদের দুঃসহ অভিজ্ঞতা রয়েছে । লকডাউনে গরিব মানুষের রুটি-রুজি আঘাতপ্রাপ্ত হয় । এ কথা জানিয়ে রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের একটি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, "লকডাউন করলে একটা স্টেজ পর্যন্ত রোগটিকে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে । কিন্তু, যেখানে করোনার টিকাকরণ শুরু হয়ে গিয়েছে, সেখানে সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য লকডাউনের পরিবর্তে অন্য যে বিষয়গুলি রয়েছে , সেগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ।"
কোন বিষয়গুলি? চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, "আমাদের রাজ্যে দৈনিক টেস্টের সংখ্যা কম । দ্রুততার সঙ্গে এই টেস্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে । আক্রান্তদের আইসোলেট করতে হবে । কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করতে হবে । করোনা আক্রান্তদের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের কোয়ারানটিনে পাঠাতে হবে ।" তিনি আরও বলেন , "এর পাশাপাশি হাসপাতালগুলিতে করোনা রোগীদের জন্য ক্রিটিক্যাল কেয়ারের পরিষেবাকে আবার প্রস্তুত রাখতে হবে । জনস্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে । এসব লকডাউনের থেকে বেশি জরুরি । লকডাউনে অর্থনৈতিক, জীবন, জীবিকার যে ক্ষতি হয়, তা আবার নেওয়ার মতো অবস্থা রাজ্য বা দেশের আছে বলে আমাদের মনে হয় না । আবার লকডাউন, এটা যুক্তিযুক্ত-ও হবে না ।"
আরও পড়ুন, মাল্টিপল মায়োলোমা আক্রান্তদের জন্য বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট উপকারি
রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের অন্য একটি সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম-এর সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, "লকডাউনের এখন-ই প্রয়োজন নেই। কিন্তু, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সরকারের তরফে যে সব কিছু করণীয়, সে সব যদি করা না হয়, তখন লকডাউনের পথে যেতে বাধ্য হতে হবে । লকডাউন যাতে এড়িয়ে যাওয়া যায়, আমরা সেটাই চাইছি ।" চিকিৎসকদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের তরফে চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ী বলেন, "পরিষ্কার করেই বলছি, ফের লকডাউন আমরা কেউই চাই না । লকডাউন সর্বরোগহর নয়, এমনকি করোনার কিলারও নয় । লকডাউন একটা আপৎকালীন প্রক্রিয়া, যার মধ্যে দিয়ে একটা দেশ প্রস্তুত হয় ।"
করোনার সূচনাকালে রাজ্যে বা দেশে যথেষ্ট পরিমাণে পিপিই, মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার, করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বেড, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ভেন্টিলেটর, একমো মেশিন ছিল না । এই লকডাউন, সময় কেনার একটা পরীক্ষিত প্রক্রিয়া । এখন আমাদের করোনার সঙ্গে লড়াই করাও ওই প্রযুক্তিগুলি আছে । চিকিৎসাকর্মীরা আজ একবছর আগের তুলনায় অনেক বেশি প্রশিক্ষিত, অভিজ্ঞ । সরকারি, বেসরকারি ব্যবস্থাগুলিও প্রস্তুত, এমনকি এসে গিয়েছে ভ্যাকসিনও । এ কথা জানিয়ে চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ী বলেন, "তাই প্রায় পাঁচ লাখ সক্রিয় রোগী থাকা সত্ত্বেও লকডাউনের খাঁড়াটা এই বার ঠিক সেভাবে আর ঝুলছে না । কিন্তু যেটা খুব দরকার, সেটা হল জনমানসে সচেতনতা । মাস্ক, স্যানিটাইজ়েশন আর ফিজ়িকাল ডিস্ট্যানসিং আর, এটা মনে রাখা যে ভ্যাকসিন নেওয়া মানেই অতিমানব হয়ে যাওয়া নয় ।"
ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের তরফে চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ী জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনের সেকেন্ড ডোজ় নেওয়ার দুই-তিন সপ্তাহ পরে শরীরে প্রতিষেধক অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তখন করোনায় আক্রান্ত হলেও বিপদ কম হওয়ার কথা । তবে, এই মুহূর্তে করোনায় অপেক্ষাকৃত তরুণতর রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি, সংক্রমণ অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়া, আর গত বছরের তুলনায় কিছু ভয়ংকর রোগলক্ষণ চিন্তায় রাখছে চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের ।
রাজ্যে ফের লকডাউনের প্রয়োজন কি না, এই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "পরিকাঠামো প্রস্তুত করার জন্য লকডাউনের প্রয়োজন । পরিকাঠামো যেহেতু প্রস্তুত রয়েছে, এই কারণে লকডাউনে খুব একটা কাজ হবে বলে মনে হয় না ।" স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, "মানুষকে বলা হচ্ছে, যাতে তাঁরা মাস্ক পরেন, করোনা প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন ।" মাস্ক না পরলে, সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে, কোনও মতেই সংক্রমণ বন্ধ করা যাবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি ।