কলকাতা, 16 মে: বয়স কম তাই সাহস বেশি । ফল্গুধারার মতো এই আপ্তবাক্যে লড়াইয়ের একটা বার্তা থাকে । সাধারণ সময়ে তার উপযোগিতা উপলব্ধ হয় না । কিন্তু মানবজীবন যখন সংকটে পড়ে তখন তারুণ্যের সাহস যুদ্ধ জয়ের প্রেরণা জোগায় । কোরোনা পরিস্থিতিতে কলকাতার ঈশিতা রায়ের জীবন যুদ্ধ আমাদের গর্ব ।
পেশায় নার্স এই যুবতি কলকাতা মেডিকেল কলেজে গত 2 বছর ধরে কর্মরত । নার্সিংয়ের পেশায় অসুস্থ-আর্ত মানুষের সেবাই শেষ কথা । বিপদ যত বড় হয় ততই মমতার বাঁধনে চোয়ালচাপা দৃঢ়তাকে সঙ্গী করে অসহায় মানুষের সামনে আলো দেখায় নার্সরা । সেবার এই ব্রতকে সঙ্গী করেই মানস রায় এবং প্রণতি রায়ের মেয়ে নার্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন । রোগের সঙ্গে বাস, কিন্তু অচেনা জীবাণুর আক্রমণ কোনও একদিন তাঁকেই আশঙ্কার অন্ধকারে ঠেলে দেবে তা বুঝতে পারেননি ঈশিতা । কোরোনা ঠেকাতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সামাল দেওয়ার নির্দেশ এসেছিল । ভয় না পেয়ে আক্রান্তদের সেবা করতে গিয়ে কখন মারণ ভাইরাস তাঁর শরীরে প্রবেশ করেছিল, জানতেও পারেননি ঈশিতা ।
ঈশিতার কথায়, "আইসোলেশন ওয়ার্ডে কাজ করার জন্য নিয়মমাফিক পরীক্ষাতে পজ়িটিভ রিপোর্ট দেখে অবাক হয়েছিলাম । ঘাবড়ে গেলেও সাহস হারাইনি । বরং জীবনে ফিরতে হবে এই মন্ত্রকে সামনে রেখে ইতিবাচক থেকেছি । সেই সময় বাবা-মা থেকে বাড়ির প্রতিটি মানুষ রোজ আমাকে উৎসাহ জুগিয়েছিল । ফলে মানসিকভাবে শক্ত থাকাটাই আমাকে সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে ।" মেয়ের যুদ্ধ জয়ের গৌরব মা প্রণতি রায়ের আনন্দ অশ্রুতে । "নার্সিংয়ের মতো পেশাতে আত্মত্যাগ সবার আগে । তবে আমি তো মা । তাই আক্রান্ত হওয়ার খবরে আশঙ্কিত হইনি তা বলব না । তবে সাহস হারাইনি । মেয়ে সুস্থ হয়ে কাজে যোগ দিয়েছে দেখে আমি গর্বিত," কথাগুলো বলতে গিয়ে চোখের কোণ চিকচিক করে ওঠে ঈশিতার মায়ের । ইতিমধ্যেই কাজে যোগ দিয়েছেন ঈশিতা । তবে কী ডিউটি করতে হবে নির্দেশ আসেনি । অকুতোভয় ঈশিতা বলছেন, "সব ধরনের ডিউটি করতে আমি বা আমরা প্রস্তুত । শো মাস্ট গো অন ।"
কিন্তু তাদের নিরলস পরিশ্রম যখন কিছু অসচেতন মানুষের নির্বুদ্ধিতায় কলুষিত হয় তখন দুঃখ পান ঈশিতা । যখন তাঁরই পেশায় থাকা অন্য নার্সদের বর্ণবিদ্বেষমূলক আচরণ, মন্তব্যের শিকার হতে হয় তখন যন্ত্রণাটা আরও বেড়ে যায় । সংবাদ মাধ্যমে দেখেছেন, পড়েছেন ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছেন যে উত্তর পূর্বাঞ্চলের নার্সরা তাঁদের রাজ্যে ফিরে যাচ্ছেন । এই প্রসঙ্গে ঈশিতা বলেছেন, "যেভাবে সাধারণ মানুষকে অসচেতন আচরণ করতে দেখছি তা সত্যিই খারাপ লাগার । এই নার্সরা চলে যাওয়ার অর্থ স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বড় ধাক্কা । অসুস্থ হয়ে মানুষ চিকিৎসার জন্য পৌঁছালে সেবা পাওয়া কঠিন হবে এটা কেউ ভাবছে না । তাই সমালোচনা,নিগৃহীত করা,বর্ণবিদ্বেষমূলক মন্তব্যে দুঃখ দেওয়া নয় । পাশে থেকে সহমর্মিতার হাত বাড়ানো প্রয়োজন ।"
বেলেঘাটা ID-তে চিকিৎসা এবং কোয়ারানটিনে থাকার সময় সকলের সহমর্মিতা পেয়েছেন । সুস্থ হয়ে ফেরার পর গ্র্যান্ড রিসেপশনে আরও উদ্দীপ্ত হয়েছেন ঈশিতা । তাই নতুন ভাবে কাজে ফিরে খুশি তিনি । যা ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গলের কথাই আরও একবার মনে করায় ।