কলকাতা, ১৭ মার্চ: নভেল কোরোনা ভাইরাস ডিজ়িজ় (COVID-19)-এর সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে সরকারি পরামর্শ অনুযায়ী কলকাতার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে রোগী, তাঁদের পরিজন এবং মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ সহ অন্য সাক্ষাৎকারীদের উপর বিধিনিষেধ জারি করল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ । জানানো হয়েছে, আপাতত আগামী 31 মার্চ পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ জারি থাকবে । সরকারি পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে ।
এই বিধিনিষেধ অনুযায়ী, রোগীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য একজন করে পরিজন যেতে পারবেন । মেডিকেল রিপ্রেজ়েন্টেটিভরা যাতে কোনও চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাতে না আসেন অথবা আসলেও যেন কমসংখ্যায় আসেন, এমনই জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে ৷ অতিরিক্ত ভিড় এড়ানোর জন্যই এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে । তবে শুধুমাত্র অতিরিক্ত ভিড় এড়ানোর বিষয় নয়, কোনও হাসপাতালে যদি কোনও রোগীর পরিজন, মেডিকেল রিপ্রেজ়েন্টেটিভ, সাক্ষাৎপ্রার্থীর জ্বর, সাধারণ ফ্লু-র উপসর্গ দেখা যায়, তাহলে তাঁকে হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না । তেমনই, কোনও রোগীর ক্ষেত্রে যদি ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী COVID-19-এর উপসর্গ (জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টের সমস্যা) ধরা পড়ে, তা হলে সংশ্লিষ্ট রোগীকে আইসোলেশনে নিয়ে যাওয়া হবে ও তাঁর সোয়াবের নমুনা পরীক্ষার জন্য ব্যবস্থা করা হবে । এ দিকে, রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তী জানিয়েছেন,‘‘সরকারি হাসপাতালগুলিতে এই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ।’’
মিন্টোপার্কের কাছে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালের CEO প্রদীপ ট্যান্ডন বলেন, "রোগীর পরিজনদের জন্য একটি করে ভিজ়িটিং কার্ড ইশু করা হচ্ছে । আমরা বলছি, রোগীর কাছে একজন যান । তিনি ফিরে এলে অন্য একজন যান ।" প্রতিদিন এই হাসপাতালে 150 থেকে 200 জন মেডিকেল রিপ্রেজ়েন্টেটিভ আসেন । এ কথা জানিয়ে CEO বলেন, "রোগীদের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে । চিকিৎসকদেরও সমস্যা হচ্ছে । চিকিৎসকরা অনুরোধ করেছেন, মেডিকেল রিপ্রেজ়েন্টেটিভদের বিষয়টি যেন দেখা হয় । মেডিকেল রিপ্রেজ়েন্টেটিভদের অনুরোধ করা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতির কারণে তাঁরা যেন চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করতে না আসেন। রোগীদের স্বার্থে গতকাল থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই দুই ধরনের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।" তিনি জানিয়েছেন, রোগীদের সঙ্গে তাঁদের পরিজনদের সাক্ষাতের সময় যেমন ছিল তেমনই রাখা হয়েছে । অর্থাৎ, এই হাসপাতালে সকালে দেড় ঘণ্টা, সন্ধ্যায় দেড় ঘণ্টা ।
COVID-19-এর সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে মানুষের অতিরিক্ত ভিড় এড়ানোর জন্য আগামী 31 মার্চ পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে । এই কারণে কলকাতার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও আগামী 31 মার্চ পর্যন্ত অতিরিক্ত ভিড় এড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে । পঞ্চসায়রে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, "হাসপাতালে প্রবেশের সময় স্ক্যান করা হচ্ছে । যদি দেখা যায়, কোনও ভিজ়িটরের জ্বর রয়েছে বা, ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী অন্যান্য উপসর্গ রয়েছে, সেই ভিজ়িটরকে হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না । এ ছাড়া একজন করে ভিজ়িটরকে রোগীর কাছে যেতে দেওয়া হচ্ছে ।" তিনি বলেন, "চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য মেডিকেল রিপ্রেজ়েন্টেটিভদের সংখ্যা আমরা কমিয়ে দিয়েছি । মেডিকেল রিপ্রেজ়েন্টেটিভরা, তাঁরা নিজেরাও চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি কমিয়ে দিয়েছেন । মেডিকেল রিপ্রেজ়েন্টেটিভদের কারও ক্ষেত্রে ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী উপসর্গ ধরা পড়লে আমরা তাঁকেও হাসপাতালে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না ।"
পঞ্চসায়রের ওই বেসরকারি হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট বলেন, "আমরা সতর্ক রয়েছি। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর পরে স্বাস্থ্য দপ্তর যে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলবে, সেই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" ইকবালপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, হাসপাতালে যাতে বেশি ভিড় না হয়, সেই জন্য ভিজ়িটরদের বলা হয়েছে। মেডিকেল রিপ্রেজ়েন্টেটিভরা এমনিতেই এই হাসপাতালে কম আসেন বলেও জানানো হয়েছে। হাসপাতালে মানুষের অতিরিক্ত ভিড় এড়ানোর লক্ষ্যে বেসরকারি একটি হাসপাতাল গোষ্ঠীর ঢাকুরিয়া, মুকুন্দপুর, সল্টলেক এবং ভুবনেশ্বর শাখায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে । এই হাসপাতাল গোষ্ঠীর তরফে জানানো হয়েছে, COVID-19, সোয়াইন ফ্লু (H1N1) এবং অন্যান্য ফ্লু-র সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রোটোকল মেনে চলা হচ্ছে । এই প্রটোকলে যেসব গাইডলাইন রয়েছে তা শুধুমাত্র চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নয়, সে সব রোগী এবং অন্যান্য ভিজ়িটরদের জন্যেও রয়েছে ৷
বেসরকারি এই হাসপাতাল গোষ্ঠীর তরফে জানানো হয়েছে, ICU-তে ভরতি রোগীদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বিকাল চারটা থেকে পাঁচটা এবং জেনেরাল ওয়ার্ডে ভরতি রোগীদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বিকাল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা ছ'টা পর্যন্ত সময় রাখা হয়েছে। পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত কোনও রোগীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য একজন করে ভিজ়িটরকে যেতে দেওয়া হবে । হাসপাতালে ভরতি কোনও রোগীর বিষয়ে প্রয়োজনে পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমের ঘোষণা করা হবে । রোগীর পরিজনদের কাছে আরজি রাখা হয়েছে, আগামী কয়েক দিন তাঁরা যেন রোগীর সঙ্গে হাসপাতালে রাতে না থাকেন । এই হাসপাতাল গোষ্ঠীর প্রতিটি ইউনিটে মেডিকেল রিপ্রেজ়েন্টেটিভদের প্রবেশের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ভিজ়িটরদের জন্য এই হাসপাতালের প্রতিটি প্রবেশ দ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার রাখা হয়েছে । কীভাবে হাত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, তা দেখিয়ে দেওয়া হবে । কীভাবে মাস্কের ব্যবহার করতে হবে, তাও দেখিয়ে দেওয়া হবে । বহির্বিভাগে যাঁরা আসবেন, তাঁদের কারও ক্ষেত্রে যদি ফ্লু-র উপসর্গ থাকে, তা হলে তাঁকে মাস্ক দেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে আইসোলেশনে পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হবে । বেসরকারি এই হাসপাতাল গোষ্ঠীর গ্রুপ CEO রূপক বড়ুয়া বলেন, "এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে COVID-19-এ কোনও আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যায়নি । তবে, COVID-19-এর সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি।"