কলকাতা, 22 জুলাই : নৃশংস খুন । ট্রলি ব্যাগের মধ্যে যুবতির দেহাংশ দেখে প্রথমে চমকে উঠেছিলেন তদন্তকারীরা । প্রাথমিকভাবে সূত্র পেতে রীতিমতো বেগ পেতে হয়েছিল । পরে একটি হোটেলের ক্যাশমেমো পুলিশের হাতে তুলে দেয় সূত্র । সমাধান হয় রহস্যের । পাঁচ বছর বিচারপ্রক্রিয়া চলার পর আজ ওই যুবতির স্বামী, তার প্রেমিকা এবং এক সুপারি কিলারের ফাঁসির সাজা শোনাল শিয়ালদা আদালত ।
2014 সালের 20 মে । শিয়ালদা স্টেশনের VIP পার্কিং লটে একটি ট্রলি পড়ে থাকতে দেখেন কয়েকজন ৷ সন্দেহ হওয়ায় তাঁরাই শিয়ালদা GRP থানায় খবর দেন । পুলিশ উদ্ধার করে সেই ট্রলি । সেটি খুলতেই বের হয় একটি কাটা মুন্ডু । লেপে মোড়া অবস্থায় উদ্ধার হয় আরও কয়েকটি দেহাংশ । তদন্তে নামে GRP । সূত্র বলতে, ওই ট্রলিতে থাকা একটি ক্যাশ মেমো । তার মাধ্যমে জানা যায় ওই মহিলার নাম জয়ন্তী দেব । পাওয়া যায় ঠিকানা । লেকটাউনে রয়েছে তার ফ্ল্যাট । সেখানে পৌঁছে পুলিশ ফ্ল্যাটটি চিহ্নিত করে । পরে দেখা যায় জিনিসপত্র সব লন্ডভন্ড । দেওয়ালে, মেঝেতে রয়েছে রক্তের ছাপও । তদন্তকারীরা জানতে পারেন জয়ন্তী সুরজিৎ দেবের স্ত্রী । পলাতক ছিল সুরজিৎ ।
একের পর এক জট খুলতে থাকে । জানা যায়, সুরজিতের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই সম্পর্ক ছিল ললিতা পোদ্দার নামে একজনের । তার সঙ্গে একটি ভাড়াবাড়িতে থাকত সুরজিৎ । পরে পাকড়াও করা হয় সুরজিৎ এবং ললিতাকে । খোলে জট । জানা যায় এই খুনের পরিকল্পনা করেছিল সুরজিৎ এবং ললিতা । বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে স্বামীর সঙ্গে নিত্য অশান্তি লেগে থাকত জয়ন্তীর । তাই তাঁকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করে ওই দুজন । একদিন সুরজিৎ প্রদীপের স্ট্যান্ড দিয়ে জয়ন্তীর মাথায় আঘাত করে । তারপর সে চলে যায় ভাড়াবাড়িতে । সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল ললিতা এবং সুপারি কিলার সঞ্জয় বিশ্বাস । তাদের দু'জনকে সঙ্গে নিয়ে ফের ফ্ল্যাটে যায় সুরজিৎ । তখনও বেঁচে ছিলেন জয়ন্তী । এবার ললিতা ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁর উপর । মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় তাঁকে । পরে দেহ টুকরো টুকরো করে কাটে সঞ্জয় ।
তদন্তকারীরা রীতিমতো দক্ষতার সঙ্গে ঘটনার তথ্য প্রমাণ জোগাড় করেন । পাশাপাশি অভিযুক্তরা স্বীকার করে নেয় তাদের দোষ । দীর্ঘ পাঁচ বছরের আইনি লড়াই শেষে আজ শিয়ালদা আদালত তাদের ফাঁসির সাজা শোনায় ।