কলকাতা, 19 জানুয়ারি : প্রথম দিনে রাজ্যে কোরোনা ভ্যাকসিনেশনের হার ছিল 75.9 শতাংশ । দ্বিতীয় দিনে এই হার নেমে আসে 68 শতাংশে । কলকাতায় প্রথম দিনে ভ্যাকসিনেশনের হার ছিল 92 শতাংশ, আর দ্বিতীয় দিনে এই হার নেমে আসে 72 শতাংশে । কোরোনা ভ্যাকসিনেশনের ভবিষ্যৎ নিয়েও রাজ্যের স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একাংশের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে ।
গত 16 জানুয়ারি থেকে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে কোরোনার ভ্যাকসিনেশন । দুটি ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে এ দেশে। কোনও রাজ্যে দেওয়া হচ্ছে কোভিশিল্ড, কোনও রাজ্যে দেওয়া হচ্ছে কোভ্যাকসিন । এ রাজ্যে দেওয়া হচ্ছে কোভিশিল্ড । রাজ্যের 207টি সেন্টারের মধ্যে কলকাতায় রয়েছে 19টি সেন্টার । এর মধ্যে কলকাতার চারটি বেসরকারি হাসপাতালও রয়েছে । সপ্তাহে চারদিন ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে । নেওয়া হয়েছে প্রতিদিন 100 জনকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা । অর্থাৎ, এ রাজ্যে যেদিন ভ্যাকসিন দেওয়া হবে, সেদিন মোট 20,700 জনকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তী জানান, আগের দিনের তুলনায় রাজ্যে কিছুটা কম হয়েছে ভ্যাকসিনেশন । আগের দিন 207টি সেন্টারে 15,707 জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। গতকাল 207টি সেন্টারে 14,110 জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়েছে।"
কেন ভ্যাকসিনেশনের হার কমে গিয়েছে ? এই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, "যাঁদের আজ(সোমবার) ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের খামতির কারণে ভ্যাকসিনেশনের হার কমে গিয়েছে।"
ভ্যাকসিন প্রাপকদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই খামতির অন্যতম কারণ কো-উইন পোর্টালে সমস্যা । রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তী বলেন,"এই পোর্টাল আজ(সোমবার) সাবলীলভাবে কাজ করেনি । আজ যাঁদেরকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, এই পোর্টালের মাধ্যমে তাঁদের অনেকের কাছে এসএমএস পৌঁছায়নি । ফোন করে ভ্যাকসিন প্রাপকদের জানানো হয়েছে ।"
আগের দিন এই কো-উইন পোর্টালে বিভ্রাটের পাশাপাশি ভ্যাকসিন প্রাপকদের মধ্যে আতঙ্ক এবং অনীহার কারণে এরাজ্যে 100 শতাংশ ভ্যাকসিনেশন সম্ভব হয়নি । স্টেট ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার অফিসার অসীম দাস মালাকার বলেছেন, "রাজ্যে আজ 68 শতাংশ ভ্যাকসিনেশন সম্ভব হয়েছে । কলকাতায় এই হার এদিন(সোমবার) ছিল 72 শতাংশ ।"
কোরোনা চিকিৎসার জন্য এ রাজ্যে প্রথম প্রস্তুত করা হয়েছিল বেলেঘাটায় অবস্থিত আইডি হাসপাতালকে । রাজ্যের এই সরকারি হাসপাতালের সেন্টারেও প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিনে কমেছে ভ্যাকসিনেশনের হার । প্রথম দিনে এই হাসপাতালে 68 জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়েছিল । দ্বিতীয় দিনে হাসপাতালে 63 জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়েছে ।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, প্রথম দিন কো-উইন পোর্টালে বিভ্রাটের কারণে ম্যানুয়ালি অর্থাৎ হাতে লিখে ওই দিনের জন্য তালিকাভুক্ত প্রাপকদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে । তবে এমনও হয়েছে, ওইদিনের জন্য নয় অথচ ভ্যাকসিন প্রাপক হিসাবে নাম রয়েছে এমন অনেককেও প্রথম দিন ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে । এই কারণে প্রথম দিন এ রাজ্যে ভ্যাকসিনেশনের হার 75.9 শতাংশে পৌঁছাতে পেরেছিল । দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ 18 জানুয়ারি যাঁদেরকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে তাঁদের নাম কো-উইন পোর্টালের মাধ্যমে নথিভুক্ত করা হয়েছে । প্রথম দিনের মতো হাতে লিখে নাম নথিভুক্ত করার সুযোগ এই দ্বিতীয় দিনে না থাকার কারণে আগের দিনের তুলনায় ভ্যাকসিন দেওয়ার হার আরও কমে গিয়েছে । এর পাশাপাশি ভ্যাকসিন প্রাপকদের অনেকের মধ্যে ভ্যাকসিনের বিষয়ে আতঙ্ক, অনীহাও রয়েছে ।
তবে, শুধুমাত্র ভ্যাকসিনেশনের হার কমে যাওয়া নয় । ভ্যাকসিনেশনের ভবিষ্যৎ নিয়েও রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের একাংশে সংশয় দেখা দিয়েছে । এ রাজ্যে কোরোনার ভ্যাকসিন কোভিশিল্ডের 6.89 লাখ ডোজ় এসেছে । প্রথম পর্যায়ে যাঁদেরকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, এ রাজ্যে সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে তাঁদের সংখ্যা ছয় লাখের মতো । যাঁকে COVID-19-এর এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে, তাঁকে এই ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ় দিতে হবে । ফলে, এ রাজ্যে যত ডোজের ভ্যাকসিন পাঠানো হয়েছে, তা দিয়ে প্রথম পর্যায়ের সকলকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব নয় । এর পরে আবার কবে ভ্যাকসিন এ রাজ্যে আসবে, এই বিষয়ে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কিছু জানেও না স্বাস্থ্য দপ্তর । কোভিশিল্ডের যত ভ্যাকসিন এরাজ্যে এসেছে, তা থেকে দুটি ডোজ়ের হিসাবে প্রথম পর্যায়ের তিন লাখের কিছু বেশি প্রাপককে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হবে । স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, "এ রাজ্যে কবে আবার ভ্যাকসিন আসবে, তখন কোভিশিল্ড আসবে, না কোভ্যাকসিন আসবে, এ সবের কিছুই এখনও পর্যন্ত আমাদের জানা নেই । শোনা যাচ্ছে, এই ভ্যাকসিনেশন উঠে যাবে ।"