কলকাতা 30 সেপ্টেম্বর:রাজ্যের অন্যান্য হাসপাতালগুলিতে কোরোনা আক্রান্তদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেওয়া হয় ৷ কিন্তু মেডিকেল কলেজ ও এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আক্রান্তদের মোবাইল ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ তাই অবিলম্বে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রশাসনকে মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের। না হলে প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানাতে হবে কেন এই দুই হাসপাতলে আক্রান্তদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না। নির্দেশ প্রধান বিচারপতি টিবিএন রাধাকৃষ্ণাণ ও অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের।
কোভিড হাসপাতালগুলিতে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না এই মর্মে চলতি বছরের 22 এপ্রিল রাজ্য সরকার একটি নির্দেশ দিয়েছিল ৷ সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে একাধিক মামলা দায়ের হয়। মামলাকারীদের বক্তব্য ছিল, কোরোনা ভাইরাস শুধুমাত্র মোবাইল ফোন থেকে নয় হাত ঘড়ি, বই ,হ্যান্ড গ্লাভস ছাড়াও আরও বহু জিনিসের মাধ্যমেই ভাইরাস ছড়াতে পারে । তাহলে শুধুমাত্র মোবাইল মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ করাটা অত্যন্ত অযৌক্তিক। পাশাপাশি এই পরিস্থিতিতে মোবাইল ফোনই বরং একজন আক্রান্ত এবং তার আত্মীয় স্বজনের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের একটা বড় হাতিয়ার ।
রাজ্যের তরফে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত আদালতে জানান, রাজ্য সরকার এই ভাইরাস প্রতিরোধের উদ্দেশ্যেই মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা ইতিমধ্যেই তুলে নেওয়া হয়েছে । বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী ও তার পরিবারের লোকজন ইতিমধ্যেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন । তবে এম আর বাঙ্গুর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনও অত্যন্ত ক্রিটিকাল আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে বলে ওই দুই হাসপাতলে মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ রয়েছে ।
রাজ্যের এই বক্তব্য শোনার পর প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ কিছুটা বিস্মিত হয়ে জানান ‘‘এটা কি ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ? রাজ্যের আর অন্য কোনও হাসপাতালে ক্রিটিকাল কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসা হচ্ছে না?" ডিভিশন বেঞ্চ তাদের পর্যবেক্ষণে জানান, ‘‘মোবাইল ফোন ব্যবহার কোভিড ভাইরাস ছড়াতে সাহায্য করে কিনা সেই নিয়ে বিশেষজ্ঞরা দ্বিমতে আছেন । তবে রাজ্য সরকার যে 22 এপ্রিল হাসপাতালগুলোতে মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধের ব্যাপারে যে নির্দেশ দিয়েছিল সেটা একেবারেই এই ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার জন্য। এ নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এটাও দেখা জরুরি যে বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোন যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে অপরিহার্য । মোবাইল ফোন ছাড়া এখন আমরা ভাবতেই পারি না। আর এই পরিস্থিতিতে একজন আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার এটা একটা অপরিহার্য মাধ্যম। এটা বন্ধ করে দেওয়া মানে ভারতীয় সংবিধানের 19 নম্বর ধারায় যে মৌলিক অধিকার দেওয়া হয়েছে তাকে অস্বীকার করা হবে ।"
আদালতের এই রায়ের পর মামলাকারীদের তরফের একজন আইনজীবী ইন্দ্রজিৎ দে জানালেন ,"একজন কোভিভ আক্রান্ত ব্যক্তির আরও বেশি করে মানসিক শক্তির প্রয়োজন ।এই পরিস্থিতিতে মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া মানে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আরও বেশি করে তার পরিবার-পরিজনের থেকে মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া। এই পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের এই রায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।"