কলকাতা, 18 জুলাই : শরৎকাল ৷ নীল আকাশ, পেঁজা তুলোর মতো মেঘ, কাশফুল ৷ আর দুর্গাপুজো ৷ সেই ঢাকের বাজনা, পুজোর গন্ধে মন কেমন করে ওঠে ৷ ওই চারটে দিন ঠাকুর দেখা, বন্ধু, পরিবারের সঙ্গে হই-হুল্লোড় করে কাটানো, জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া...সারা বছর এই দিনগুলির অপেক্ষায় থাকে বাঙালি ৷ আর তার আগে পুজোর শপিং তো আছেই ৷ আম বাঙালির পাশাপাশি অপেক্ষায় থাকে আরও কিছু মানুষ ৷ তাদের মধ্যে অন্যতম কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরা ৷
রথের দিনের পর থেকেই কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের কাছে ঠাকুরের বায়না আসতে শুরু করে ৷ রথের পরে কুমোরটুলি গেলেই প্রতিমা গড়ায় শিল্পীদের ব্যস্ততা চোখে পড়বে ৷ যত সময় এগিয়ে আসে, মাটির প্রতিমায় রঙের প্রলেপ পড়তে শুরু করে ৷ মণ্ডপে পাড়ি দেওয়ার পথে শিল্পীর তুলির টানে সেজে ওঠেন উমা ৷ কিন্তু, গত বছর থেকে সেই ব্যস্ততা আর নেই ৷ কারণ করোনা ভাইরাস ও লকডাউন ৷ আগের বছর বায়না অনেকটাই কম পেয়েছিলেন কুমোরটুলির শিল্পীরা ৷ আর এবার তো হাল আরও খারাপ ৷
হাতে আর মাত্র আড়াই মাস সময় রয়েছে ৷ কিন্তু, এবারে রথের পর থেকে খুব একটা বায়না আসেনি ৷ তবে রথের দিন থেকে উদ্যোক্তাদের ফোন আসা শুরু হয়েছে ৷ তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঠাকুরের বরাত দিয়েছে ৷ তবে, পুরোটাই অনিশ্চয়তার উপর ৷ নিশ্চিতভাবে কেউ অর্ডার দিতে পারেনি ৷ অনেকে আবার ছোট ঠাকুর নিতে চাইছে ৷ করোনা আবহ, লকডাউন এবং অর্থনীতির বেহাল দশার জন্য কলকাতার অনেক বারোয়ারি পুজোর মূর্তির আকার ছোট করছে । অনেক পুজো কমিটি এখনও বায়না দেয়নি । এক শিল্পী জানাচ্ছেন, করোনার জন্য এবারও সরকারি বিধিনিষেধ মেনে পুজো করতে হবে উদ্যোক্তাদের । কিন্ত, সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কিছু গাইডলাইন না দেওয়ার ফলে কেউ কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না । কতটা বড় প্যান্ডেলের অনুমতি মিলবে, আর ঠাকুরই বা কত বড় করা যাবে, এই বিষয়ে স্পষ্ট কোনও ধারনা পাওয়া যায়নি ৷ ফলে এখনও পর্যন্ত ঠাকুরের বায়না সেরকমভাবে আসেনি ৷ অন্যদিকে, বিদেশ থেকেও খুব একটা অর্ডার আসেনি ৷
আরও পড়ুন, কমছে বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান, সমস্যায় ফুল ব্যবসায়ী থেকে ক্যাটারার-ডেকরেটর্সরা
তাছাড়া, রাজ্যে করোনা বিধিনিষেধের জন্য জেলা থেকে শ্রমিকও কুমোরটুলিতে আসতে পারেনি । পুজো আর বাকি মাত্র আড়াই মাস । তার ফলে পুজো কমিটিগুলির থেকে এখনই অর্ডার না পেলে সময়ের মধ্যে ঠাকুর তৈরি করাও মুশকিল হয়ে যাবে ।
কুমোরটুলির অধিকাংশ মৃৎশিল্পীরা বলেন, সারা দেশেই করোনার প্রভাব পড়েছে ৷ ফলে ভিন রাজ্য থেকে ঠাকুরের অর্ডার তেমনভাবে আসছে না ৷ শুধু ভিনরাজ্য নয়, লন্ডন, আমেরিকা, সুইজারল্যান্ড সহ একাধিক দেশ থেকেও ঠাকুরের প্রচুর অর্ডার আসে । কিন্ত এবার দুই- একটা ছাড়া সেই পরিমাণে অর্ডার আসেনি
কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী ইন্দ্রজিৎ পাল বলেন, ‘‘করোনার জন্য এবার পুজোতে ভাল প্রভাব পড়েছে । ফলে ঠাকুরের অর্ডারও এখনও সেভাবে আসেনি । রথের দিন থেকে অনেক পুজো উদ্যোক্তা ফোন করেছেন । কিন্তু, কেউ ফাইনাল অর্ডার দেননি । কেউ বড় ঠাকুরের কথা বলেছেন ৷ কেউ আবার ছোট ঠাকুর চেয়েছেন ৷ এবারও পুজোর বাজেটে ভাল কাটছাঁট হয়েছে ৷ তাই আমরা সমস্যায় পড়ে গিয়েছি ৷’’
আরও পড়ুন,Covid Impact : করোনা আবহে ধুঁকছে রামজীবনপুরের তাঁত ও কাঁসা শিল্প
তবে হাল ছাড়েননি কেউ ৷ শিল্পীদের কথায় সময় এখনও রয়েছে ৷ তাঁদের বিশ্বাস, পুজো এবার হবেই ৷ ছোট করে হলেও হবে ৷ তাই সরকারের তরফে যতক্ষণ না স্পষ্ট গাইডলাইন দিচ্ছে, ততক্ষণ উদ্যোক্তরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না ৷ গাইডলাইন প্রকাশিত হলেই তাঁদের কাছে প্রতিমার অর্ডার আসবে ৷ তখন হয়ত সময় ততটা থাকবে না ৷ তবুও তাঁদের বিশ্বাস, মায়ের আশীর্বাদে সব ভাল হবে ৷ তাই, এখন প্রত্যেকের একটাই প্রার্থনা, সুস্থ হোক দেশ, ফের জাঁকজমক হয়ে উঠুক পুজো ৷ আর ছন্দে ফিরুক কুমোরটুলি ৷