কলকাতা, 2 মার্চ: সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রে সহজ জয় পেলেন বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস (Bayron Biswas Wins)। বিকেল তিনটেতেই খবর এসে যায় যে, 22,980 ভোটে জয়ী হয়েছেন জোট প্রার্থী । সরকারে থাকলেও এ বার এই উপনির্বাচনে একুশের জয়ী আসন ধরে রাখতে পারল না তৃণমূল (TMC Worries after Sagardighi Defeat)।
2021-এর বিধানসভা নির্বাচনে সাগরদিঘিতে জয়ী হন তৃণমূলের সুব্রত সাহা । দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন বিজেপির মাফুজা খাতুন । পরে সুব্রত সাহার মৃত্যুতে আসনটি খালি হয় । সাগরদিঘিতে উপনির্বাচনে লড়াই ছিল ত্রিমুখী । একদিকে তৃণমূল । লড়াইয়ের ময়দানে তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়াও ছিল বিজেপি এবং কংগ্রেস । সাগরদিঘিতে কংগ্রেসকে সমর্থন করে বামেরা ।
সেখানেই সহজ জয়ে বাজিমাত করল বাইরন । পারলেন না তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় । আর এর সঙ্গে সঙ্গেই বিধানসভায় খাতা খুলে ফেলল কংগ্রেস । একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর বিধানসভায় কোনও বিধায়ক ছিল না কংগ্রেসের । অবশেষে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে বিধানসভায় ঢুকে পড়লেন বাইরন ।
হয়তো যা হওয়ার তা লেখা হয়ে গিয়েছিল প্রথম পর্বেই । ফল ঘোষণাটা ছিল মাত্র সময়ের অপেক্ষা । 16 রাউন্ডের গণনায় ডাহা ফেল করল তৃণমূল । 2021 সালে প্রবল জনসমর্থন নিয়ে ফেরত আসার পর যেভাবে নিয়োগ দুর্নীতি বাংলার শাসকের ভাবমূর্তির জন্য বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করেছিল, তার পর বৃহস্পতিবার ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য প্রথম পরীক্ষার দিন । প্রথম পরীক্ষাতেই হেরে গেল তৃণমূল, জিতল জোট । যার ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সিঁদুরে মেঘ দেখছে শাসক দল । এ বার কি একই ছবি দেখা যাবে পঞ্চায়েতেও ?
তথ্য বলছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে বরাবরই শাসকের পক্ষে পাল্লা ভারী থেকেছে । রাজ্য রাজনীতিতে এমন কথাও প্রচলিত আছে যে পুলিশ যার, ভোট তার । তাহলে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের শাসকের পক্ষেই পাল্লা ভারী থাকবে । সাগরদিঘির ভোটের পর এমন কথা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না ।
আরও পড়ুন: 22980 ভোটে তৃণমূলকে হারিয়ে সাগরদিঘিতে জয়ী কংগ্রেস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক রাজু রায়ের কথায়, 2011 সালের পর এই প্রথম কোনও উপনির্বাচনে ভোট গণনায় একটি রাউন্ডেও লিড আদায় করতে পারেনি রাজ্যের শাসক দল । যতই শাসকের তরফ থেকে বলা হোক, বিরোধী ভোট এক জায়গায় হওয়ার জন্যই এই ফল । তবে এই ফল যে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ সেটা উপেক্ষা করা যাবে না । একদিকে ডিএ নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের ক্ষোভ, অন্যদিকে আব্বাস সিদ্দিকীকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুদের একাংশের তৃণমূলের পাশ থেকে সরে যাওয়া ৷ সর্বোপরি নিয়োগ দুর্নীতি সরকারের প্রতি একটা বিরূপ ধারণা এ বারের ভোটে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন তিনি ।
তাঁর মতে, এর ফল শুধু উপনির্বাচনে নয়, ভুগতে হবে পঞ্চায়েত নির্বাচনেও । তিনি মনে করছেন, এ ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ । যদি আগামী দিনে পুলিশের ভূমিকা নিরপেক্ষ হয়, মানুষ যদি তাদের জনমত জানানোর সুযোগ পায়, তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে সেই জনমত যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকছে । অন্তত রাজনৈতিক মহলের তো তেমনই মত ।
যদিও এই নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে প্রশ্ন করা হলে, রাজ্যের শাসক দলের তরফ থেকে এর প্রভাব সরাসরি পঞ্চায়েত নির্বাচনে পড়তে পারে, এমনটা মানতে রাজি হননি তৃণমূলের নেতারা । বরং তাঁরা এই নির্বাচনী ফলকে পঞ্চায়েতের সঙ্গে মেলাতে নারাজ । তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, একটা নির্বাচনের ফল বিরুদ্ধে যেতেই পারে । তবে এর মানে এটা নয় যে, তৃণমূলের সঙ্গে মানুষের সমর্থন নেই । তৃণমূল যেভাবে মানুষের জন্য কাজ করেছে, তাতে মানুষ বিগত দিনে যেমন তৃণমূলকে সমর্থন করেছে আগামীদিনেও করবে ।