কলকাতা, 17 জুলাই: ডাক্তার-বদ্যি বহু দেখানো হয়েছে । ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনারের মতোই নিয়ম করে ওষুধ খেয়েছেন । তবুও, ইচ্ছে পূরণ হল না । অগত্যা পড়শি জামশেদ আলির পরামর্শে বিকাশ দাস ছুটলেন হজরত মৌলালি শাহ দরগায় । কারণ, সন্তান লাভের আশা । আর একজনের আবার ঘটক কাজে লাগিয়েও ভালো পরিবার থেকে বিয়ের সম্বন্ধ আসছে না (Hazrat Moulali Shah)। তিনিও হাজির হজরত মৌলালি শাহ দরগায় ৷ কেউ আবার সেখানে যান ভুল স্বীকার করতে ৷ নানা ধর্ম বিশ্বাসের মানুষের মনে আলাদা বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করেছে মৌলালির এই ধর্মস্থান ৷ এখানে মিলেমিশে একাকার সব ধর্ম ৷
শিয়ালদা থেকে মল্লিক বাজারের মাঝে আছে মৌলালির মোড় । সেখানেই হজরত মৌলালি শাহ দরগা । যেখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ তাঁদের ইচ্ছা, আকাঙ্খা, ভুল স্বীকার করতে আসেন । ফুল, ধূপের পাশাপাশি চাদর চড়ান হজরত মৌলালি শাহ'র মাজারে । প্রার্থনা করেন । পারলে ফিরতি পথে তাবিজ, মাদুলিও সংগ্রহ করেন । অনেকে আবার ব্যস্ততার কারণে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রার্থনা সেরে ছুটে বাস ধরেন । এই ছবিটা নিয়মিত দেখা যায় মৌলালি শাহ দরগায় ।
একইভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাগুইআটির বাসিন্দা সৌমেন সাহা বাস ধরতে যাচ্ছিলেন । ইটিভি ভারত তাঁর কাছে পৌঁছতেই তিনি জানান, ধর্ম বিশ্বাসের মধ্যে ভেদাভেদ থাকা উচিত নয় । বর্তমানে ধর্ম নিয়ে যে হিংসা চলছে তা বন্ধ হওয়া দরকার । তাঁর কথায়, "আমরা সকলেই যাতে নিশ্চিন্তে ভালোভাবে থাকতে পারি তাঁর প্রার্থনা করলাম । মারামারি না হোক । সকলেই যাতে শান্তিতে থাকতে পারি সেই কামনাই করলাম ।"
আরও পড়ুন : কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে টালা পার্কের শিব মন্দির সংস্কার হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধদের
বিশ্বাস ও ভক্তির উপর দাঁড়িয়ে দীর্ঘ দুশো-আড়াইশো বছর ধরে মৌলালি শাহ দরগায় প্রার্থনা করে আসছেন কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলকার মানুষ । শুধু তাঁরাই নন, রাজ্যের বাইরের বহু মানুষও এই দরগায় এসে থাকেন । ওড়িশা, বিহার কিংবা এ রাজ্যের বারুইপুর, মুর্শিদাবাদ, উত্তর 24 পরগনা থেকেও বহু মানুষ আসেন । এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, শিখ কোনও ভেদাভেদ নেই । কার্যত, সকলেই একই রকম চাওয়াপাওয়ার আশা নিয়ে হাজির হন এখানে ।
দরগা দেখভাল করেন নূর আলম, মহম্মদ আনসারি, মহম্মদ আনিস আলমরা । তাঁদের দাবি, তাঁরাই হজরত মৌলালি শাহর বংশধর । বছরের পর বছর উত্তরাধিকার সূত্রে এই মাজার বা দরগায় দেখভাল করে আসছেন । মহম্মদ আনিস আলম বলেন, "বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ নানা সমস্যা, চাওয়া-পাওয়া, অপূরণীয় ইচ্ছাপূরণে দরগায় আসেন । হিন্দু, মুসলিম সমস্ত ধর্মের মানুষ আসেন । তাঁদের আশা পূরণ হয় । এ কারণেই গত আড়াইশো বছর ধরে এই দরগায় ভিড় কমেনি । ভেদাভেদের ব্যাপার নেই । যার যা সামর্থ্য তা দিয়েই প্রার্থনা করেন ।"