কলকাতা, 8 জানুয়ারি: সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখলেও সরকারি হাসপাতাল বা স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলে দেখা যায় প্রবীণ মানুষরাও লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন । শরীর সঙ্গ না-দিলেও এই অপেক্ষা সরকারি পরিষেবা পেতে তাঁদের জন্যও বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায় । কারণ সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ আসে । তাই প্রবীণদের আলাদা করে চিকিৎসা দেওয়ার সেই ধরনের কোনও বন্দোবস্ত এখনও পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে নেই ৷ মুখ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ডাঃ সুকুমার মুখোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কানে প্রবীণ নাগরিকদের এই দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেছিলেন । বিষয়টি শোনার পর আর কালক্ষেপ করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নিয়ে একটি কমিটি গড়ে দিয়ে বলেন, প্রবীণ নাগরিকদের সঠিক চিকিৎসা আলাদাভাবে দেওয়া যায় কি না তা পর্যালোচনা করতে (CM Mamata Banerjee Think Separate Treatment for Senior Citizens) । সাধারণত চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জন্য আগে এলে আগে পাওয়ার ভিত্তিতে পরিষেবা প্রদান করা হয় । বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় মানুষ দূরদূরান্ত থেকে স্বাস্থ্যপরিষেবা পেতে মানুষ কলকাতায় আসে । সেক্ষেত্রে বাকিদের জায়গা ঠিক রেখে কীভাবে প্রবীণদের দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া যায় তা দেখতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী (WB Govt Treatment Service for Senior Citizens) ৷
আরও পড়ুন : সময়মত চিকিৎসা করলে কোলন ক্যানসার নিরাময় সম্ভব
এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর এই কমিটি বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে প্রবীণ মানুষদের জন্য আলাদা জেরিয়াট্রিক বিভাগ ও ওয়ার্ড তৈরি করা হবে ৷ প্রথম ধাপে কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে এই ব্যবস্থা করা হতে পারে । এরপর ধাপে ধাপে অন্যান্য জেলা-সহ গ্রামীণস্তরেও এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে । সবচেয়ে বড় কথা এই প্রবীণ নাগরিকরা জেলা থেকে যদি কলকাতায় এসে চিকিৎসা করাতে চান সেক্ষেত্রে যাতায়াতের ধকল নেওয়াটাও একটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় ৷ তাই ঠিক করা হয় 120টি অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে তাঁদের বাড়ি থেকে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে এসে চিকিৎসা দেওয়ার পর আবার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে । আর এই খরচের সবটাই বহন করবে রাজ্য সরকার (Separate Treatment for Senior Citizens in WB) ।
এমনকি এই প্রবীণ নাগরিকদের সঙ্গে পরিবারের কোনও সদস্য না থাকলে আশাকর্মীরাই তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাবে এবং চিকিৎসার পর পৌঁছে দেবে বাড়িতে । তথ্য বলছে, এই মুহূর্তে রাজ্য তথা দেশে সাধারণ নাগরিকের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে । এই অবস্থায় রাজ্যের প্রবীণ নাগরিকদের সংখ্যা নিতান্ত কম নয় । সবচেয়ে বড় কথা শহর ও মফস্বলের একটা বড় অংশের প্রবীণ নাগরিকেরা একাকীত্বে ভোগেন । কারণ নিজের সহায় সম্বল দিয়ে ছেলেমেয়েদের বড় করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে ছেলেমেয়েরা বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকছেন না । ফলে শেষ জীবনটা তাঁদের অনেকটা অবহেলায় কাটাতে হচ্ছে ।
আরও পড়ুন : দ্রুত চিকিৎসা না-হলে বিপদ বাড়ায় অস্টিয়োমাইলাইটিস
এক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের পরিষেবা দেওয়াকে একটা সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে দেখছেন । আর সেই জায়গা থেকেই বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য এই ব্যবস্থা করেছেন । এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সুকুমার মুখোপাধ্যায় জানান, রাজ্যে এই মুহূর্তে জেরিয়াট্রিক পপুলেশন অর্থাৎ ষাটোর্ধ্ব মানুষের সংখ্যা বাড়ছে । আলাদা করে এই প্রবীণ নাগরিকদের জন্য কোনও চিকিৎসার ব্যবস্থা এখনও পর্যন্ত রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ছিল না । আর সে কারণেই এদের নিয়ে পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল । এখনই এই ষাটোর্ধ্ব মানুষদের নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা না নিলে আগামী দিনে সমস্যা বাড়তে পারে । আর সে কারণেই এই পরিকল্পনা । ভুলে গেলে চলবে না তিরিশের দশকে মানুষের গড় আয়ু ছিল 35 । এখন তা বেড়ে হয়েছে 70 । বহু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, প্রবীণ নাগরিকদের দেখাশোনার কেউ থাকে না । তাই তাঁদের কথা ভাববারও সময় এসেছে । এটাও সরকারি একটা সামাজিক দায়িত্ব হিসেবেই দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
আরও পড়ুন : মন ভালো নেই ! মানসিক চিকিৎসার উদ্যোগ বাম চিকিৎসক ছাত্র সংগঠনের