কলকাতা, 23 নভেম্বর: "ডেঙ্গি সংক্রামককারী মশা জিন পালটায়", বিধানসভায় বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এবছর পুজোর মরশুম থেকে রাজ্যে ডেঙ্গি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ৷ একের পর এক মৃত্যুর খবর সামনে আসছে ৷ প্রাণ হারিয়েছে শিশু থেকে প্রৌঢ়- প্রায় সব বয়সের মানুষ ৷ বিরোধীরাও এ নিয়ে রাজ্যকে নিশানা করেছে ৷ মঙ্গলবারই ডেঙ্গি ইস্যুতে বিধানসভায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ অন্য নেতারা ৷ এমনকী রাস্তায় মশারি বিলি করতেও দেখা গিয়েছে তাঁদের ৷
ডেঙ্গি নিয়ে বুধবার বিধানসভায় মুখ্য়মন্ত্রী বলেন,"ডেঙ্গি এখন নিয়ন্ত্রণে" ৷ তিনি আরও জানান, আক্রান্তের সংখ্যা এখন কমছে ৷ আরেকটু ঠান্ডা পড়লে ডেঙ্গির প্রকোপ কমে যাবে ৷ এছাড়া আরও বেশ কিছু বিষয়ে তিনি মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং নির্দেশ দেন ৷
পাশাপাশি এদিন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, "মানুষের স্বার্থে বনকে ব্যবহার করতে হবে ৷" মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানান, সুন্দরবন নিয়ে একটি মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছে ৷ সেই প্ল্যান নীতি আয়োগের কাছে জমা পড়েছে । এছাড়া একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে ৷ তিনি আশ্বাস দেন, "সেই প্ল্যান অনুমোদিত হলে সমস্যার সমাধান হবে ৷" এ প্রসঙ্গে সারের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গটিও উঠে আসে ৷ তিনি বলেন, "সারের দাম বেড়েছে । এর জন্য কেন্দ্রকে চিঠি দেওয়া হয়েছে ।"
প্রায়শই হাতি, বাঘের হানায় মানুষের মৃত্যুর খবর সামনে আসে ৷ এমন ঘটনায় মৃতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "হাতি বা বাঘের হানায় মৃত্যু হলে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং পাশাপাশি পরিবারের একজন চাকরি পাবেন ।" এর সঙ্গে বনাঞ্চলে স্থানীয়দের চাকরি দেওয়ার (বনকর্মী) হিসাবে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷
আরও পড়ুন: মশারি বিতরণ করে ডেঙ্গি ইস্যুতে বিধানসভায় বিক্ষোভ শুভেন্দুর
এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে 1 হাজার বৈদ্যুতিন চুল্লি তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে ৷ তিনি আবেদন জানান, সাংসদ, বিধায়কেরা এই কাজে সহযোগিতা করলে ভালো হয় ৷
জাতীয় সড়কের কাজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "হাইওয়ের কাজের সময় আশপাশের রাস্তাগুলো করিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া আছে ৷" বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ির উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী জানান, জেলা আয়তন অনুযায়ী হয় ৷ ছোট রাস্তায় বড় ট্রাক যাবে না ৷
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর মত, "দক্ষিণ দিনাজপুরে সব আছে । মানুষ ভালো থাকলেই হবে ।" বিধানসভায় মন্ত্রী পুলক রায় মুখ্যমন্ত্রীকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, "আপনি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার কথা উল্লেখ করুন ৷ যা কাজ হচ্ছে রাজ্যের টাকায় ।" আমতার বিধায়ক সুকান্ত পাল মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, "2011 সাল থেকে ওখানে বিরোধী দলের বিধায়ক থাকলেও উন্নয়ন থমকে থাকেনি ।" রাজ্যের জন্য কাজের জন্য, রাস্তার জন্য সরকার জমি নিলে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করি । এটা সরকারের স্ট্যান্ডিং পলিসি ।
মুখ্য়মন্ত্রী বিধায়কদের উদ্দেশ্যে বলেন, "আপনারা ডিআরএম-কে ডেপুটেশন দিন ৷ আমাকে কপি দিন ৷ ওরা চাইলে আমরা করি ৷ ওরা করে না ৷ মানুষের কাজ করতে রাজনীতি করি না ।" নৌসাদের বিধায়কদের কোটার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাবের উত্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "প্রস্তাব আনা সহজ । কোভিডের সময় 2 বছর সাংসদেরা টাকা পায়নি । আমিও প্রস্তাব সমর্থন করি । ক্ষমতা থাকলে বিধায়কদের কোটা বাড়াতে পারলে ভালোই লাগত । কিন্তু পরিস্থিতি দেখতে হবে ৷"
বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, করিডোর করতে 20 কোটি টাকা খরচ হচ্ছে সুপ্রিমকোর্টের রায় পোর্টালে দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সার নিয়ে তিনি বলেন, "সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে, বিরোধীরাও উদ্যোগ নিন । কেন্দ্র সার দিচ্ছে না । আমরা চেষ্টা করছি ৷ আপনারাও দেখুন 100 দিনের টাকা যাতে পায় ৷ সবশেষে তিনি নতুন রাজ্যপালকে অভিনন্দন জানানোর কথা বলেন ।
আরও পড়ুন: রাজনীতির নামে বাংলার বদনাম যারা করে, তাদের নাম বলতে লজ্জা লাগে, মমতার নিশানায় শুভেন্দু