কলকাতা, 19 জুন : পূর্ব লাদাখে চূড়ান্ত উত্তেজনা । যা শুরু হয়েছিল মে মাস থেকেই । অভিযোগ, চিনা সেনারা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে ঢুকে পড়েছে ভারতীয় সীমান্তে । আর সেটা নিয়ে আন্তর্জাতিকস্তরে চূড়ান্ত চাপানউতোর । যার পরিণতি রক্তক্ষয় । গালওয়ানে সোমবারের সংঘর্ষে 20 জন ভারতীয় জওয়ান শহিদ হয়েছেন । গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও কয়েকজন । অন্যদিকে সূত্রের খবর, চিনের 45 জন হতাহত হয়েছে । ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “ আমাদের জাওয়ানদের বলিদান বৃথা যাবে না । দেশের একতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ভারত শান্তি চায় । কিন্তু প্রয়োজনে সবরকম পরিস্থিতির জন্য দেশ প্রস্তুত।’’ ইতিমধ্যেই যে কোনও পরিস্থিতির জন্য দেশের 3 সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে । ভারত-চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর লাদাখ, অরুণাচলপ্রদেশ, উত্তরাখান্ড, হিমাচল প্রদেশে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে । সব মিলিয়ে বাড়ছে উত্তেজনা । আর তাতে বুক দুর দুর করছে কলকাতার এক টুকরো চিনের । আতঙ্কে রয়েছেন চিনা বংশোদ্ভূত টনি লিং, চাং কিংবা কোভিনরা । তাঁরা যুদ্ধ চান না । চান শান্তি ।
সালটা 1778 । চিনের নাগরিক ওয়াং চাউ আসেন কলকাতায় । তিনি ছিলেন কলকাতায় আসা প্রথম চিনের ব্যক্তি। চিনের হাক্কা প্রদেশের বাসিন্দা ছিলেন তিনি । ট্যাংরা এলাকায় বসবাস শুরু করেন ওয়াং চাউ । পরে আসে আরও বেশকিছু চিনা পরিবার । চামড়ার ব্যবসা শুরু করে তারা । কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ওই এলাকায় চামড়া ট্যানারিগুলো বন্ধ হয়ে যাবার পর অনেকেই শুরু করেন রেস্তরাঁর ব্যবসা । তারপর থেকেই রসনাপ্রিয় বাঙালির অন্যতম গন্তব্য চায়না টাউন । এই মুহূর্তে সেখানে প্রায় 2000 চিনা বংশোদ্ভূতের বসবাস । এখন তাঁরা ভারতীয় নাগরিক । তবু চিনের প্রতি একটা টান রয়েই গেছে । অনেকের আত্মীয়রা রয়েছেন সেদেশে । সেই সূত্রে নিত্য যোগাযোগ । উদ্বেগের পরিস্থিতিতে তারা ঘনঘন যোগাযোগ করছেন সে দেশে থাকা আত্মীয়দের সঙ্গে । জেনে নিচ্ছেন চিন সরকারের মনোভাব ।
চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লি জিয়ং দাবি করেছেন, সামরিক এবং কূটনৈতিকস্তরে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে । কোনটা ঠিক কোনটা ভুল তা স্পষ্ট । যেটা ঘটেছে তা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পার করে চিন সীমান্তের মধ্যে। এর জন্য চিনকে দোষ দেওয়া যায় না । পাশাপাশি তার টুইট বার্তা, “ আমরা আর সংঘর্ষ চাই না ।" যুদ্ধংদেহী মনোভাব থেকে চিনের সরে আসা কিছুটা হলেও ভরসা দিয়েছে চায়না টাউনকে । যেখানে চিনা আর ভারতীয় সংস্কৃতি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে । এখানে রয়েছে শহরের একমাত্র চাইনিজ় স্কুল । আবার রয়েছে চাইনিজ় কালীবাড়িও । যেখানে চিনা বংশোদ্ভূতরা প্রার্থনা করেন । আবার ধুমধাম করে পালিত হয় চিনা নববর্ষ । ড্রাগন ডান্স, লায়ন্স মার্শাল আর্টের নানা কসরত প্রদর্শনে রঙিন হয়ে ওঠে সেই অনুষ্ঠান ।
ছোটো-বড় নানা রেস্তোরাঁ রয়েছে এ মহল্লায় । চিনা বংশোদ্ভূতদের প্রায় সবাই কোনও না কোনওভাবে এই সব রেস্তরাঁর সঙ্গে যুক্ত । তেমনই একজন টনি লিং। বৃদ্ধ রেস্তোরাঁর ভেতরে বসে বলছিলেন, “ একটা বিরক্তিকর পরিস্থিতি চলছে । যথেষ্ট আতঙ্কে রয়েছি ।’’ চাং আরও বলেন, “ আমরা ভারতের নাগরিক । শান্তিতে বসবাস করছি । রাজনীতি বুঝি না । তবে কোনওভাবেই যুদ্ধ চাই না। আমরা চাই শান্তি ।" একটি অসুস্থ পথ কুকুরের চিকিৎসা করতে করতে এক বছর তিরিশের যুবক কোভিন বলেন, “ যুদ্ধ কোনোভাবেই কাম্য নয় । অবশ্যই শান্তি চাই । যুদ্ধ কোনও কিছুর সমাধান করতে পারে না ।"