ETV Bharat / state

Children's Day: পাশেই দোকান চালান বাবা, মেট্রো স্টেশনে বসে রাতদিন পড়ে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর আবদুল

Children's Day 2023: হাজরার কাছেই দোকান চালান বাবা ৷ আর পাশের মেট্রো স্টেশনে বসে রাতদিন পড়াশোনা চলে তৃতীয় শ্রেণির আবদুল আলি নস্করের ৷ চোখে তার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ৷ শিশু দিবসে এক অনন্য শিশুর গল্প ৷

Children's Day
শিশু দিবসে এক অনন্য শিশুর গল্প
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 14, 2023, 5:11 PM IST

শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর আবদুল

কলকাতা, 14 নভেম্বর: শিশু দিবসে এক শিশুর অনন্য গল্প ৷ যার মুখ্য চরিত্রে তৃতীয় শ্রেণির আবদুল আলি নস্কর ৷ বড় হয়ে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন আঁকা তার চোখে । যদিও পরিস্থিতি মোটেই অনুকূল নয় ৷ তবুই হাল ছাড়ার পাত্র নয় সেই ছোট্ট শিশু ও তার পরিবার ৷ তাই বাবার পেশার কারণে তার সঙ্গে রোজ কলকাতায় আসতে হলেও একইসঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে আবদুল ৷ মেট্রো স্টেশনে বসে । স্কুল সেরে বইপত্র নিয়ে যতীন দাস পার্ক মেট্রো স্টেশনের এক নম্বর গেটই তার আস্তানা । সেখানে বসে সে সেরে ফেলে স্কুল ও বাড়ির রোজকার পড়া । আর তার বাবা মগ্ন থাকে দোকানের বেচাকেনায় । সব সেরে আবারও রাতে বাবার হাত ধরেই বাড়ি ফিরে যায় আবদুল ।

বারুইপুরে থাকেন আবদুল আলি নস্কর । তবে তার বাবার চা-টিফিনের দোকান হাজরার কাছে ৷ তাই কলকাতারই বেলতলার একটি স্কুলে তিনি ছেলেকে ভর্তি করে দিয়েছেন ৷ রোজ ভোর চারটেয় বাবার হাত ধরেই সে রওনা দেয় কলকাতার উদ্দেশে । বাড়িতে আছেন মা, ছোট এক বোন ও দিদা । যতীন দাস পার্ক মেট্রো স্টেশনের এক নম্বর গেটের সামনে আবদুলের বাবা শাহিফুল নস্করের ছোট একটি দোকান । সকাল থেকে রাত চা-ডিম-পাউরুটি বিক্রিবাটা করেন ৷

আর আবদুল স্কুল ছুটি হওয়ার পর রাত পর্যন্ত থাকে বাবার সঙ্গেই ৷ মাঝে এক জায়গায় পড়তেও যায় ৷ বাবার কাজ শেষ হলে রাতে একবারে বাড়ি ফেরে ৷ তবে সারাটা দিন মেট্রো স্টেশনের গেটের কাছে বসেই পড়াশোনা চালিয়ে যায় ছোট্ট আবদুল । স্কুল সেরে সে বই খাতা নিয়ে বসে পড়ে যতীন দাস পার্ক মেট্রো স্টেশনের এক নম্বর গেটে । ব্যস্ততম ওই মেট্রোর গেটের একপাশে মন দিয়ে ছড়া মুখস্থ থেকে জটিল সব অংক - সব সেরে ফেলে আবদুল । তার কথায়, "এই মেট্রো স্টেশনে ঠান্ডা হাওয়া খাই আর পড়াশোনা করি ।"

আবদুলের বাবা শাহিফুল সারাদিন ব্যস্ত থাকেন দোকান নিয়ে । তবে তার মাঝেও ছেলের পড়াশোনার প্রতি তাঁর নজর সবসময় । ভোর চারটের সময় বাড়ি থেকে রওনা । সকাল সাড়ে ছটার মধ্যে স্কুলে ঢুকতে হবে আবদুলকে । স্কুল শেষ বেলা এগারোটায় । তারপর পড়াশোনা । বিক্রিবাটা ৷ সব মিটিয়ে রাত এগারোটায় বাড়ি ফেরা । আবারও পরের দিন ভোরবেলায় ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই কলকাতায় আসা ৷ এটাই রোজনামচা শাহিফুলের ।

তিনি জানান, "আমার এক মেয়ে রয়েছে, যে ওর থেকেও ছোট । আমি যখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই, সঙ্গে সঙ্গে আবদুলও বেরিয়ে পড়ে । ও বাড়িতে আর কারওকে ভয় পায় না। তাই পড়াশোনাটা যাতে করতে পারে, সেই জন্যই ওকে সঙ্গে করে নিয়ে আসি । এখানকার স্কুলে ভর্তি করেছি, একজনের কাছে পড়তেও যায় ।"

আবদুলের প্রিয় বিষয় বাংলা এবং অংক । ভয় লাগে ইংরেজি পড়তে । তবে সেই ভয় কাটিয়ে ওঠার তাগিদ তার ষোলো আনা । তাঁর ইচ্ছে, বড় হয়ে শিক্ষক হবে । কিন্তু বর্তমানে শিক্ষায় দুর্নীতির যে কালো ছায়া তা সকলেরই জানা । যোগ্য শিক্ষকেরা আজও রাস্তায় । কবে তাঁদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে তা অজানা । একদিকে এই পরিস্থিতি, অন্যদিকে ছেলের স্বপ্ন । আবদুলের বাবার কথায়, "ওর মেহনত আর আমার চেষ্টা । ও মেহনত করে যাক আর আমি চেষ্টা করে যাই । দেখা যাক কী হয় ।"

আরও পড়ুন:

  1. অভিনব শিশু দিবস, বিনামূল্যে টয়ট্রেনে ভ্রমণ বিশেষভাবে সক্ষম ও অনাথদের
  2. আন্তর্জাতিক অনাগত শিশু দিবস ! জেনে নিন এর তাৎপর্য

শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর আবদুল

কলকাতা, 14 নভেম্বর: শিশু দিবসে এক শিশুর অনন্য গল্প ৷ যার মুখ্য চরিত্রে তৃতীয় শ্রেণির আবদুল আলি নস্কর ৷ বড় হয়ে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন আঁকা তার চোখে । যদিও পরিস্থিতি মোটেই অনুকূল নয় ৷ তবুই হাল ছাড়ার পাত্র নয় সেই ছোট্ট শিশু ও তার পরিবার ৷ তাই বাবার পেশার কারণে তার সঙ্গে রোজ কলকাতায় আসতে হলেও একইসঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে আবদুল ৷ মেট্রো স্টেশনে বসে । স্কুল সেরে বইপত্র নিয়ে যতীন দাস পার্ক মেট্রো স্টেশনের এক নম্বর গেটই তার আস্তানা । সেখানে বসে সে সেরে ফেলে স্কুল ও বাড়ির রোজকার পড়া । আর তার বাবা মগ্ন থাকে দোকানের বেচাকেনায় । সব সেরে আবারও রাতে বাবার হাত ধরেই বাড়ি ফিরে যায় আবদুল ।

বারুইপুরে থাকেন আবদুল আলি নস্কর । তবে তার বাবার চা-টিফিনের দোকান হাজরার কাছে ৷ তাই কলকাতারই বেলতলার একটি স্কুলে তিনি ছেলেকে ভর্তি করে দিয়েছেন ৷ রোজ ভোর চারটেয় বাবার হাত ধরেই সে রওনা দেয় কলকাতার উদ্দেশে । বাড়িতে আছেন মা, ছোট এক বোন ও দিদা । যতীন দাস পার্ক মেট্রো স্টেশনের এক নম্বর গেটের সামনে আবদুলের বাবা শাহিফুল নস্করের ছোট একটি দোকান । সকাল থেকে রাত চা-ডিম-পাউরুটি বিক্রিবাটা করেন ৷

আর আবদুল স্কুল ছুটি হওয়ার পর রাত পর্যন্ত থাকে বাবার সঙ্গেই ৷ মাঝে এক জায়গায় পড়তেও যায় ৷ বাবার কাজ শেষ হলে রাতে একবারে বাড়ি ফেরে ৷ তবে সারাটা দিন মেট্রো স্টেশনের গেটের কাছে বসেই পড়াশোনা চালিয়ে যায় ছোট্ট আবদুল । স্কুল সেরে সে বই খাতা নিয়ে বসে পড়ে যতীন দাস পার্ক মেট্রো স্টেশনের এক নম্বর গেটে । ব্যস্ততম ওই মেট্রোর গেটের একপাশে মন দিয়ে ছড়া মুখস্থ থেকে জটিল সব অংক - সব সেরে ফেলে আবদুল । তার কথায়, "এই মেট্রো স্টেশনে ঠান্ডা হাওয়া খাই আর পড়াশোনা করি ।"

আবদুলের বাবা শাহিফুল সারাদিন ব্যস্ত থাকেন দোকান নিয়ে । তবে তার মাঝেও ছেলের পড়াশোনার প্রতি তাঁর নজর সবসময় । ভোর চারটের সময় বাড়ি থেকে রওনা । সকাল সাড়ে ছটার মধ্যে স্কুলে ঢুকতে হবে আবদুলকে । স্কুল শেষ বেলা এগারোটায় । তারপর পড়াশোনা । বিক্রিবাটা ৷ সব মিটিয়ে রাত এগারোটায় বাড়ি ফেরা । আবারও পরের দিন ভোরবেলায় ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই কলকাতায় আসা ৷ এটাই রোজনামচা শাহিফুলের ।

তিনি জানান, "আমার এক মেয়ে রয়েছে, যে ওর থেকেও ছোট । আমি যখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই, সঙ্গে সঙ্গে আবদুলও বেরিয়ে পড়ে । ও বাড়িতে আর কারওকে ভয় পায় না। তাই পড়াশোনাটা যাতে করতে পারে, সেই জন্যই ওকে সঙ্গে করে নিয়ে আসি । এখানকার স্কুলে ভর্তি করেছি, একজনের কাছে পড়তেও যায় ।"

আবদুলের প্রিয় বিষয় বাংলা এবং অংক । ভয় লাগে ইংরেজি পড়তে । তবে সেই ভয় কাটিয়ে ওঠার তাগিদ তার ষোলো আনা । তাঁর ইচ্ছে, বড় হয়ে শিক্ষক হবে । কিন্তু বর্তমানে শিক্ষায় দুর্নীতির যে কালো ছায়া তা সকলেরই জানা । যোগ্য শিক্ষকেরা আজও রাস্তায় । কবে তাঁদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে তা অজানা । একদিকে এই পরিস্থিতি, অন্যদিকে ছেলের স্বপ্ন । আবদুলের বাবার কথায়, "ওর মেহনত আর আমার চেষ্টা । ও মেহনত করে যাক আর আমি চেষ্টা করে যাই । দেখা যাক কী হয় ।"

আরও পড়ুন:

  1. অভিনব শিশু দিবস, বিনামূল্যে টয়ট্রেনে ভ্রমণ বিশেষভাবে সক্ষম ও অনাথদের
  2. আন্তর্জাতিক অনাগত শিশু দিবস ! জেনে নিন এর তাৎপর্য
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.