ETV Bharat / state

কোরোনা সংক্রমণের মাঝে কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন শিশুদের ?

শিশুরা কোরোনায় আক্রান্ত হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের সুস্থ করে তোলা সম্ভব ৷ তাদের মৃত্যুর হারও কম ৷ তবে সাবধান থাকতে হবে ৷ বলছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার ৷

author img

By

Published : Jun 14, 2020, 1:44 PM IST

Updated : Jun 29, 2020, 6:38 AM IST

how_to_save_children_from_covid_19
কোরোনা সংক্রমণের মাঝে কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন শিশুদের ?

কলকাতা, 14 জুন : রাজ্যে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে 10 হাজার 698 । রাজ্যে কোরোনা সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা । এই পরিস্থিতিতে শিশুদের বাড়ির বাইরে না নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা । কোরোনার আবহে কীভাবে শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে হবে তা নিয়ে পরামর্শ দিলেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার ।

গতকাল স্বাস্থ্য দপ্তরের বুলেটিনে জানানো হয়েছে, গত 24 ঘণ্টায় রাজ্যে আরও 454 জন কোরোনা আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে । 12 জুন এই সংখ্যাটা ছিল 476 । এখনও পর্যন্ত একদিনে এটাই রাজ্যের সর্বাধিক কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা । 11 জুন এই সংখ্যা ছিল 440 । তবে, গত 9 ও 10 জুন এই সংখ্যা সাড়ে তিনশোর আশপাশে ছিল ৷ 5 থেকে 8 জুন প্রতিদিনই কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যাটা ছিল সাড়ে চারশোর নিচে ৷ এদিকে 13 জুন পর্যন্ত কোরোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে 463 । এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে শিশু ও বয়স্ক ও যারা অন্য রোগে আক্রান্ত তাদের ঘরের বাইরে না বেরোনোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "কোরোনার সংক্রমণ শিশুদের হয় না তা নয় । শিশুরাও আক্রান্ত হয় ও শিশুদের মাধ্যমেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে । তবে, শিশুদের ক্ষেত্রে উপসর্গ অতটা থাকে না ।" তিনি বলেন, " শিশুরা কোরোনায় আক্রান্ত হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের সুস্থ করে তোলা সম্ভব । কোরোনায় শিশুদের মৃত্যুহার খুব কম ৷ গোটা বিশ্বে দেখা গেছে, কোরোনা সংক্রমণের জেরে 350-এর মতো শিশুর মৃত্যু হয়েছে । যে সব শিশুর মৃত্যু হয়েছে তাদের অধিকাংশের অন্য রোগ ছিল বলে দেখা গেছে। "

কোরোনা সংক্রমণের মাঝে কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন শিশুদের ?

কীভাবে শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে হবে?

অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, " যাদের বয়স শূন্য থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে, তারা খুব ছটফটে হয় । তাদের বসিয়ে রাখাটা খুব মুশকিল হয় । এই বয়সের শিশুদের বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটির মাধ্যমে বসিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে ৷ যাতে তারা হাত নাক, চোখ, মুখে বেশি না দেয় । চুল যদি মুখে এসে পড়ে তাহলে বেঁধে রাখতে হবে । অথবা চুল কেটে ছোটো করে রাখতে হবে । নখ কেটে দিতে হবে । কারণ নখ থেকে অনেক সংক্রমণ ঘটতে পারে । " তিনি বলেন, "শিশুরা বাড়িতে বয়স্কদের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটায় । খেয়াল রাখতে হবে, বয়স্ক মানুষদের যদি কিডনি, হার্ট বা কোনও ক্রনিক ডিজ়িজ় থাকে ৷ যদি বয়স্ক মানুষটি ইমিউনো সাপ্রেশন অর্থাৎ ইমিউনিটি কমিয়ে রাখার ওষুধ খান, যদি তাঁর স্টেরয়েড থেরাপি চলে, সেসব ক্ষেত্রে বয়স্ক মানুষের থেকে শিশুদের একটু দূরেই রাখতে হবে । না হলে শিশুদের থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে । "

তিনি আরও বলেন, "একটু বড় শিশুদের ক্ষেত্রে যেটা হয়, এই ধরনের শিশুরা ভয় পেয়ে যায় । এই রোগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে ৷ এসব দেখে তারা খুব ভয় পেয়ে যায় । আলোচনার মাধ্যমে এই শিশুদের বোঝানো উচিত । ভয় না পেয়ে এই শিশুদের বাড়ির কোনও কাজে যুক্ত করা যেতে পারে ৷ এই ধরনের শিশুদের ছোটখাটো অ্যাক্টিভিটি দেওয়া যেতে পারে । এই অ্যাক্টিভিটিতে মা-বাবারাও যুক্ত হতে পারেন । এর ফলে পারস্পরিক বোঝাপড়া ভালো হয় । যেটা প্রায় হারিয়েই গেছিল । কিন্তু, COVID-19-এর জন্য লকডাউনে সবাই বাড়িতে রয়েছেন । সে ক্ষেত্রে পারস্পরিক বোঝাপড়া, মেলামেশা এগুলি অনেক বেশি ভালো হবে । একদম বড় ছেলে, মেয়েদের ক্ষেত্রে যাদের বয়স 12 বছরের বেশি তাদের তখন হর্মোনাল পরিবর্তন হয় ৷ এজন্য তাদের সঙ্গে কথা বলে, আলোচনা করে দেখতে হবে তারা কী ভাবছে ৷ তারা একা হয়ে পড়ছে কি না, ডিপ্রেশনে রয়েছে কি না, এই মানসিক সমস্যাগুলি এই বয়সে বেশি হয় । এগুলি মা-বাবাদের একটু খেয়াল রাখতে হবে ৷ এই বয়সের শিশুদের সঙ্গে বন্ধুর মতো করে মিশতে হবে । তারা যদি কোনও কথা বলে, তাহলে কথাগুলি শুনে তাদের বোঝাতে হবে । সেই অনুযায়ী কাজও করা যেতে পারে । "

তিনি বলেন, " অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় শিশুরা খুব বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে । এক্ষেত্রে তাদেরকে বারণ করতে হবে । কারণ এই সময় খুব বেশি মোবাইল ফোনের ব্যবহার অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যাবে । পরে যখন এই অতিমারী থাকবে না, তখন সেই অভ্যাস থেকে তাদের দূরে রাখাটা খুব বেশি মুশকিল হয়ে যাবে । " কোরোনার এই আবহে শিশুদের যথাসম্ভব বাড়িতে রাখতে হবে । বাজার কিংবা ভিড় রয়েছে, এমন কোনও স্থানে শিশুদের নিয়ে যাওয়া একদমই চলবে না । 2 বছরের বেশি বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করে যেতে হবে । 2 বছরের কম শিশু, তাদেরকে স্যানিটাইজ়ড করে দিতে হবে । তাদেরকে মাস্ক পরানো সম্ভব নয় । কারণ এমন কাউকে মাস্ক পরানো যাবে না, কষ্ট হলে, অসুবিধা হলে নিজের মাস্ক যে খুলবে না, খুলতে পারবে না । যার খোলার ক্ষমতা নেই তাকে মাস্ক পরানো যাবে না । এ সব কিছু মেনে চললে শিশুরা ভালো থাকবে ৷

কোনও শিশুকে যদি চিকিৎসার প্রয়োজনে কোনও ক্লিনিকে নিয়ে যেতে হয়?

তিনি জানিয়েছেন, "এজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ(ICMR) গাইডলাইন দিয়েছে । ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য কোনও শিশুকে যদি কোনও চেম্বারে নিয়ে আসা হয় তার জন্য পৃথক এগজ়িট-এন্ট্রি থাকতে হবে । জ্বর-সর্দি-কাশি বা অন্য অসুস্থতা নিয়ে শিশুদের আনা হচ্ছে যে সব ক্লিনিকে তা পৃথক হতে হবে । এই ধরনের ক্লিনিকে একটি ফিভার ক্লিনিক ও একটি নন ফিভার ক্লিনিক ৷ এই দু'ধরনেরই ভাগ থাকতে হবে । অনেক সময় শিশুদের সঙ্গে বাড়ির লোকেরা আসেন । ক্লিনিকের ভিতরে একজনকেও ঢুকতে দেওয়া যাবে না ৷ প্রত্যেককে মাস্ক পরতে হবে ও হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করতে হবে । এসব কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে । ক্লিনিকে যখন বসবেন তখন যেন সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে বসেন । 3 ফুটের উপরে প্রায় 6 ফুটের দূরত্ব রেখে যেন বসেন । আমাদের এখানে যে ক্লিনিকগুলি রয়েছে সেগুলি খুবই ছোট‌ো । শিশুদের যখন চিকিৎসকদের অ্যাপয়নমেন্ট দেওয়া হবে ৷ তখন সময় আগে থেকে ঠিক করে দিতে হবে ৷ যাতে একটি শিশুকে যে টাইম দেওয়া হল, যেন পরের শিশুকে দেওয়া টাইমের মধ্যে গ্যাপ থাকে । সামাজিক দূরত্ব না মানতে পারলে ভয়ের কারণ থেকেই যাচ্ছে । কোরোনার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য এই বিষয়গুলি রোগীর বাড়ির লোকজনের তরফে মানতে হবে ৷ যে সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন তাঁদেরকেও চলতে হবে । "

ইতিমধ্যেই সরকারি-বেসরকারি সব অফিস চালু হয়ে গেছে । মা-বাবারা যখন কাজ থেকে ফিরবেন, তখন কী করণীয়?

অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, " শিশুদের প্রবণতা থাকে দৌড়ে মা-বাবার কাছে চলে আসা ৷ শিশুকে যিনি দেখাশোনা করছেন, তিনি যেন তখন সামলান । " তিনি জানিয়েছেন, বাড়িতে ফেরার পর বাবা-মায়েরা হাত ধোবেন, পা ধুয়ে নেবেন । জুতোতেও ভাইরাস থাকতে পারে তাই তা ঘরের বাইরে খুলে রাখবেন । ঘরের যে সব জামাকাপড় পরে বাইরে থেকে ফিরেছেন সেগুলি সব বদলাতে হবে । সেজন্য বাথরুমে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে জামাকাপড় পরিবর্তন করলে ভালো হয় । সঙ্গে মোবাইল, ঘড়ি যা থাকবে, সে সব স্যানিটাইজ়ড করতে হবে । এগুলি ঠিকভাবে খেয়াল রাখতে হবে । স্নান করে, ধোয়া জামাকাপড় পরে শিশুর কাছে যেতে পারবেন । কারও যদি কাশি, জ্বর থাকে তবে তাকে নিজের থেকেই 14 দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে । নিজেকে শিশুর থেকে দূরে রাখতে হবে । বাড়ির সবার থেকে দূরে থাকলেই ভালো হয় । তবে বিশেষ করে শিশুর থেকে দূরে থাকতে হবে । "

কলকাতা, 14 জুন : রাজ্যে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে 10 হাজার 698 । রাজ্যে কোরোনা সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা । এই পরিস্থিতিতে শিশুদের বাড়ির বাইরে না নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা । কোরোনার আবহে কীভাবে শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে হবে তা নিয়ে পরামর্শ দিলেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার ।

গতকাল স্বাস্থ্য দপ্তরের বুলেটিনে জানানো হয়েছে, গত 24 ঘণ্টায় রাজ্যে আরও 454 জন কোরোনা আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে । 12 জুন এই সংখ্যাটা ছিল 476 । এখনও পর্যন্ত একদিনে এটাই রাজ্যের সর্বাধিক কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা । 11 জুন এই সংখ্যা ছিল 440 । তবে, গত 9 ও 10 জুন এই সংখ্যা সাড়ে তিনশোর আশপাশে ছিল ৷ 5 থেকে 8 জুন প্রতিদিনই কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যাটা ছিল সাড়ে চারশোর নিচে ৷ এদিকে 13 জুন পর্যন্ত কোরোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে 463 । এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে শিশু ও বয়স্ক ও যারা অন্য রোগে আক্রান্ত তাদের ঘরের বাইরে না বেরোনোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "কোরোনার সংক্রমণ শিশুদের হয় না তা নয় । শিশুরাও আক্রান্ত হয় ও শিশুদের মাধ্যমেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে । তবে, শিশুদের ক্ষেত্রে উপসর্গ অতটা থাকে না ।" তিনি বলেন, " শিশুরা কোরোনায় আক্রান্ত হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের সুস্থ করে তোলা সম্ভব । কোরোনায় শিশুদের মৃত্যুহার খুব কম ৷ গোটা বিশ্বে দেখা গেছে, কোরোনা সংক্রমণের জেরে 350-এর মতো শিশুর মৃত্যু হয়েছে । যে সব শিশুর মৃত্যু হয়েছে তাদের অধিকাংশের অন্য রোগ ছিল বলে দেখা গেছে। "

কোরোনা সংক্রমণের মাঝে কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন শিশুদের ?

কীভাবে শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে হবে?

অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, " যাদের বয়স শূন্য থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে, তারা খুব ছটফটে হয় । তাদের বসিয়ে রাখাটা খুব মুশকিল হয় । এই বয়সের শিশুদের বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটির মাধ্যমে বসিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে ৷ যাতে তারা হাত নাক, চোখ, মুখে বেশি না দেয় । চুল যদি মুখে এসে পড়ে তাহলে বেঁধে রাখতে হবে । অথবা চুল কেটে ছোটো করে রাখতে হবে । নখ কেটে দিতে হবে । কারণ নখ থেকে অনেক সংক্রমণ ঘটতে পারে । " তিনি বলেন, "শিশুরা বাড়িতে বয়স্কদের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটায় । খেয়াল রাখতে হবে, বয়স্ক মানুষদের যদি কিডনি, হার্ট বা কোনও ক্রনিক ডিজ়িজ় থাকে ৷ যদি বয়স্ক মানুষটি ইমিউনো সাপ্রেশন অর্থাৎ ইমিউনিটি কমিয়ে রাখার ওষুধ খান, যদি তাঁর স্টেরয়েড থেরাপি চলে, সেসব ক্ষেত্রে বয়স্ক মানুষের থেকে শিশুদের একটু দূরেই রাখতে হবে । না হলে শিশুদের থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে । "

তিনি আরও বলেন, "একটু বড় শিশুদের ক্ষেত্রে যেটা হয়, এই ধরনের শিশুরা ভয় পেয়ে যায় । এই রোগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে ৷ এসব দেখে তারা খুব ভয় পেয়ে যায় । আলোচনার মাধ্যমে এই শিশুদের বোঝানো উচিত । ভয় না পেয়ে এই শিশুদের বাড়ির কোনও কাজে যুক্ত করা যেতে পারে ৷ এই ধরনের শিশুদের ছোটখাটো অ্যাক্টিভিটি দেওয়া যেতে পারে । এই অ্যাক্টিভিটিতে মা-বাবারাও যুক্ত হতে পারেন । এর ফলে পারস্পরিক বোঝাপড়া ভালো হয় । যেটা প্রায় হারিয়েই গেছিল । কিন্তু, COVID-19-এর জন্য লকডাউনে সবাই বাড়িতে রয়েছেন । সে ক্ষেত্রে পারস্পরিক বোঝাপড়া, মেলামেশা এগুলি অনেক বেশি ভালো হবে । একদম বড় ছেলে, মেয়েদের ক্ষেত্রে যাদের বয়স 12 বছরের বেশি তাদের তখন হর্মোনাল পরিবর্তন হয় ৷ এজন্য তাদের সঙ্গে কথা বলে, আলোচনা করে দেখতে হবে তারা কী ভাবছে ৷ তারা একা হয়ে পড়ছে কি না, ডিপ্রেশনে রয়েছে কি না, এই মানসিক সমস্যাগুলি এই বয়সে বেশি হয় । এগুলি মা-বাবাদের একটু খেয়াল রাখতে হবে ৷ এই বয়সের শিশুদের সঙ্গে বন্ধুর মতো করে মিশতে হবে । তারা যদি কোনও কথা বলে, তাহলে কথাগুলি শুনে তাদের বোঝাতে হবে । সেই অনুযায়ী কাজও করা যেতে পারে । "

তিনি বলেন, " অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় শিশুরা খুব বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে । এক্ষেত্রে তাদেরকে বারণ করতে হবে । কারণ এই সময় খুব বেশি মোবাইল ফোনের ব্যবহার অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যাবে । পরে যখন এই অতিমারী থাকবে না, তখন সেই অভ্যাস থেকে তাদের দূরে রাখাটা খুব বেশি মুশকিল হয়ে যাবে । " কোরোনার এই আবহে শিশুদের যথাসম্ভব বাড়িতে রাখতে হবে । বাজার কিংবা ভিড় রয়েছে, এমন কোনও স্থানে শিশুদের নিয়ে যাওয়া একদমই চলবে না । 2 বছরের বেশি বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করে যেতে হবে । 2 বছরের কম শিশু, তাদেরকে স্যানিটাইজ়ড করে দিতে হবে । তাদেরকে মাস্ক পরানো সম্ভব নয় । কারণ এমন কাউকে মাস্ক পরানো যাবে না, কষ্ট হলে, অসুবিধা হলে নিজের মাস্ক যে খুলবে না, খুলতে পারবে না । যার খোলার ক্ষমতা নেই তাকে মাস্ক পরানো যাবে না । এ সব কিছু মেনে চললে শিশুরা ভালো থাকবে ৷

কোনও শিশুকে যদি চিকিৎসার প্রয়োজনে কোনও ক্লিনিকে নিয়ে যেতে হয়?

তিনি জানিয়েছেন, "এজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ(ICMR) গাইডলাইন দিয়েছে । ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য কোনও শিশুকে যদি কোনও চেম্বারে নিয়ে আসা হয় তার জন্য পৃথক এগজ়িট-এন্ট্রি থাকতে হবে । জ্বর-সর্দি-কাশি বা অন্য অসুস্থতা নিয়ে শিশুদের আনা হচ্ছে যে সব ক্লিনিকে তা পৃথক হতে হবে । এই ধরনের ক্লিনিকে একটি ফিভার ক্লিনিক ও একটি নন ফিভার ক্লিনিক ৷ এই দু'ধরনেরই ভাগ থাকতে হবে । অনেক সময় শিশুদের সঙ্গে বাড়ির লোকেরা আসেন । ক্লিনিকের ভিতরে একজনকেও ঢুকতে দেওয়া যাবে না ৷ প্রত্যেককে মাস্ক পরতে হবে ও হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করতে হবে । এসব কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে । ক্লিনিকে যখন বসবেন তখন যেন সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে বসেন । 3 ফুটের উপরে প্রায় 6 ফুটের দূরত্ব রেখে যেন বসেন । আমাদের এখানে যে ক্লিনিকগুলি রয়েছে সেগুলি খুবই ছোট‌ো । শিশুদের যখন চিকিৎসকদের অ্যাপয়নমেন্ট দেওয়া হবে ৷ তখন সময় আগে থেকে ঠিক করে দিতে হবে ৷ যাতে একটি শিশুকে যে টাইম দেওয়া হল, যেন পরের শিশুকে দেওয়া টাইমের মধ্যে গ্যাপ থাকে । সামাজিক দূরত্ব না মানতে পারলে ভয়ের কারণ থেকেই যাচ্ছে । কোরোনার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য এই বিষয়গুলি রোগীর বাড়ির লোকজনের তরফে মানতে হবে ৷ যে সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন তাঁদেরকেও চলতে হবে । "

ইতিমধ্যেই সরকারি-বেসরকারি সব অফিস চালু হয়ে গেছে । মা-বাবারা যখন কাজ থেকে ফিরবেন, তখন কী করণীয়?

অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, " শিশুদের প্রবণতা থাকে দৌড়ে মা-বাবার কাছে চলে আসা ৷ শিশুকে যিনি দেখাশোনা করছেন, তিনি যেন তখন সামলান । " তিনি জানিয়েছেন, বাড়িতে ফেরার পর বাবা-মায়েরা হাত ধোবেন, পা ধুয়ে নেবেন । জুতোতেও ভাইরাস থাকতে পারে তাই তা ঘরের বাইরে খুলে রাখবেন । ঘরের যে সব জামাকাপড় পরে বাইরে থেকে ফিরেছেন সেগুলি সব বদলাতে হবে । সেজন্য বাথরুমে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে জামাকাপড় পরিবর্তন করলে ভালো হয় । সঙ্গে মোবাইল, ঘড়ি যা থাকবে, সে সব স্যানিটাইজ়ড করতে হবে । এগুলি ঠিকভাবে খেয়াল রাখতে হবে । স্নান করে, ধোয়া জামাকাপড় পরে শিশুর কাছে যেতে পারবেন । কারও যদি কাশি, জ্বর থাকে তবে তাকে নিজের থেকেই 14 দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে । নিজেকে শিশুর থেকে দূরে রাখতে হবে । বাড়ির সবার থেকে দূরে থাকলেই ভালো হয় । তবে বিশেষ করে শিশুর থেকে দূরে থাকতে হবে । "

Last Updated : Jun 29, 2020, 6:38 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.