কলকাতা, 17 এপ্রিল : শৈশব ফিরিয়ে দিয়েছে লকডাউন । COVID-19-এর দাপটে বিশ্ব জুড়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যেও শিশুরা স্বস্তিতে রয়েছে । বাড়িতে বেশিরভাগ সময়ই কাছে পাচ্ছে বাবা-মা'কে । তবে, এই বাবা-মা'রাই লকডাউনে শিশুদের ভ্যাকসিন পিছিয়ে যাওয়া বা ছোটোখাটো অসুস্থতা নিয়ে চিন্তায় পড়ছেন । তাঁদের নির্ভয়ে থাকতে বলছেন চিকিৎসকরা ।
বিশ্বজুড়ে COVID-19-এর থাবায় পরিস্থিতি ক্রমে আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে । কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে, সেই বিষয়টি প্রশ্নের মুখে । এ দিকে, COVID-19-এর মোকাবিলায় দেশজুড়ে লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী 3 মে পর্যন্ত করা হয়েছে । সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে দেশজুড়ে 170টি জেলাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক । কলকাতা, হাওড়া-সহ এ রাজ্যের 12টি জেলা রয়েছে এই হটস্পট জেলার তালিকায় । এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে শিশুদের জন্য অন্য এক স্বস্তির কথা শোনাচ্ছেন চিকিৎসকরা ।
লকডাউনের জন্য সকলকে বাড়িতেই থাকতে হচ্ছে । তার জন্য বাবা-মা'কে অনেক বেশি সময় নিজের কাছে পাচ্ছে শিশুরা । এবিষয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, "লকডাউনের মধ্যে পজ়িটিভ একটি বিষয়, যে পরিবারে মা-বাবা দু'জনেই চাকরি করেন, সন্তানের জন্য সময় দিতে পারেন না, তাঁরা এখন বাড়িতে থাকছেন । মা-বাবাকে কাছে পাচ্ছে শিশুরা ।" অন্য এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পাল বলেন, "লকডাউনের এই সময়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মা-বাবার সঙ্গেও শিশুরা এখন ঘরে আছে । অধিকাংশ শিশু এখন সারাদিন তাদের মা-বাবাকে সেভাবে পায় না । মা-বাবা এখন সর্বক্ষণ তাদের সঙ্গে আছে, তাতে শিশুরা আনন্দে আছে ।"
লকডাউন এভাবে শৈশব ফিরিয়ে দিলেও, এই সময়ে শিশুদের কিছু শারীরিকসহ অন্য সমস্যাও দেখা দিচ্ছে । এবিষয়ে চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, "যে সকল শিশুরা বাইরে খেলতে যায়, তারা বাইরে বেরতে পারছে না । এতে কোথাও একটা অবসাদ তৈরি হচ্ছে । এই সমস্যা থেকে শিশুদের দূরে রাখার জন্য তাদের একটু সময় দিন । এক্ষেত্রে ইনডোর গেমসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে ।" আর, শারীরিক সমস্যা? চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পাল বলেন, "কোনও কোনও শিশুর এখন একটু জ্বর হচ্ছে । গরম পড়েছে, ভাইরাল ফিভার হচ্ছে, কারও কারও পেটে গন্ডগোল হচ্ছে । তবে এই সময় শিশুরা খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে, এমন নয় । বছরের এই সময়টায় সাধারণত দেখা যায়, শিশুদের শারীরিক সমস্যা কম থাকে । তবে বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে নানা সমস্যা দেখা দেয় ।"
যে সব শিশুর ক্ষেত্রে এই সময় রুটিন ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য দিন নির্ধারিত ছিল, অনেকের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হচ্ছে না । কারণ লকডাউনের জন্য চিকিৎসকদের চেম্বার যেমন বন্ধ রয়েছে, পরিবহন পরিষেবা না থাকার জন্য খোলা থাকলেও অনেকেই সেখানে পৌঁছাতে পারছেন না । এবিষয়ে চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পাল বলেন, "ভ্যাকসিনের সময় পিছিয়ে দেওয়া হলেও সমস্যা হবে না ।"
চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি আরও বলেন, "ছোটোদের এখন সাধারণ সর্দি-কাশি, জ্বর হচ্ছে । এক-দু'বার এমন হলে এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই । প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন । ভাইরাল ফিভার, নিউমোনিয়া, জন্ডিস, টাইফয়েড হচ্ছে অনেকের । যদি দেখা যায় প্রচণ্ড কাশি হচ্ছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, তিন দিনের মধ্যে জ্বর কমছে না, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার ।"