কলকাতা, 25 সেপ্টেম্বর: সন্তান ও কমিউনিটি বা সম্প্রদায়ের যত্ন নেওয়ার জন্য কী কী করা প্রয়োজন, তার প্রচারে এ বার ধর্মীয় নেতাদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে ৷ হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন এবং শিখ - এই ছয়টি ধর্মের ধর্মীয় বইগুলিতে ইউনিসেফের দেওয়া বার্তা নিজেদের মতো করে তুলে ধরবেন ধর্মীয় নেতারা ৷ এ ভাবেই তাঁরা শিশু ও সম্প্রদায়ের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে সহায়তা করবেন ৷
ইউনিসেফের বিশেষজ্ঞদের দেওয়া বৈজ্ঞানিক বার্তাগুলির একটি পুস্তিকায় সংশ্লিষ্ট ধর্মের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা দেবেন বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় নেতারা ৷ ধর্মীয় বইয়ের মধ্যে দিয়েই স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা, শিশু সুরক্ষা, জল, নিকাশি এবং স্বাস্থ্যবিধির ক্ষেত্রে শিশুদের মঙ্গলের জন্য বৈজ্ঞানিক বার্তাগুলি বোঝাবেন ধর্মীয় নেতারা ।
আজ কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে পুস্তিকার প্রকাশ করার পর নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, "ধর্মীয় নেতারা আমাদের জন্য যা ব্যাখ্যা করেন, আমরা তাতে বিশ্বাস করি । তাঁরা যখন মানুষের ভুল ধারণা দূর করতে এগিয়ে আসেন, তখন সমাজ অনেক উপকৃত হয় ।"
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছয়টি ধর্মের ধর্মীয় নেতাকে 'ঈশ্বরের বার্তাবাহক' হিসাবে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন যে, রাজ্য সরকার বাল্যবিবাহ, শিশু স্থানান্তর, পারিবারিক স্থানান্তর এবং মেয়ে পাচারের বিষয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ও ধর্মীয় নেতারা এটি বন্ধ করতে সহায়তা করতে পারেন । রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে ইউনিসেফ এবং আমানত ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট দ্বারা তৈরি পুস্তিকা সম্পর্কে বলতে গিয়ে শশী পাঁজা বলেন, "এই হ্যান্ডবুকগুলিতে আমরা ধর্মীয় চিন্তাভাবনা নিয়ে আসছি এবং সমাজকে সাহায্য করার জন্য সঠিক ধারণা এবং ব্যাখ্যা তুলে ধরছি ৷"
তিনি আরও জানান, পশ্চিমবঙ্গে বাল্যবিবাহের প্রবণতা বেশি এবং এনএফএইচএস-এর সমীক্ষা অনুসারে প্রায় 41 শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় 18 বছর বয়স হওয়ার আগেই । মেয়েদের 18 বছর এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে 21 বছরের পর যাতে বিয়ে দেওয়া হয়, তা মানুষকে বোঝানোর জন্য ধর্মীয় নেতাদের কাছে আর্জি জানান শশী পাঁজা ৷
আরও পড়ুন: চিকিৎসাক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা কী ? জানুন ফার্মাসিস্টদের গুরুত্ব ও কাজ
ইমাম-ই-ইদানিয়ান ক্বারী ফজলুর রহমান এ দিন বলেছেন যে, তাঁর মতো ধর্মীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে মুর্শিদাবাদ জেলায় পোলিয়োর ঘটনা শূন্যে পৌঁছেছে ৷ তাঁর কথায়,
"মুর্শিদাবাদে পোলিয়ো আক্রান্ত শিশুদের প্রায় 60 শতাংশই ছিল মুসলিম পরিবার থেকে, কারণ তারা টিকাদান এড়িয়ে যায় । আমরা টিকা দেওয়ার পক্ষে গ্রামে গ্রামে প্রচার শুরু করার পরে যখন তারা তাদের বাচ্চাদের টিকা দেয় তখন তা শূন্যে নেমে আসে ৷"
পশ্চিমবঙ্গে ইউনিসেফের প্রধান মহম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, এই পুস্তিকাগুলি পরবর্তীতে ইংরেজি থেকে বাংলা, হিন্দি, নেপালি ও উর্দু ভাষায় অনুবাদ করা হবে । তিনি বলেন, "সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে, অন্যান্য সার্ক দেশগুলিতে পরিচালিত ইউনিসেফ এই সমস্ত দেশের নেতাদের মধ্যে ব্যবহারের জন্য এই পুস্তিকাগুলি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷"
রাজ্য শিশু অধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় এ দিন শিশু অধিকারের সমর্থনে ধর্মীয় নেতাদের অংশীদার হিসাবে পাওয়ার কথা বলেছেন । তিনি উল্লেখ করেন যে, কীভাবে উপাসনালয়গুলিও বিশ্বাসের অনুসারীদের বৃহত্তরভাবে সংগঠিত করার জন্য এই বার্তাগুলি দিতে পারে ।